থোকায় থোকায় শোভা পাচ্ছে শরিফা ফল। বাতাসে দোল খাচ্ছে শরিফা, সেই সাথে দোল খাচ্ছে বাগান মালিকের স্বপ্ন। ব্যতিক্রমী কৃষি উৎপাদনের চিন্তা চেতনায় বিলুপ্ত প্রায় শরিফা ফল চাষে বেশ সাফল্য পেয়েছেন মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার চেংগাড়া গ্রামের বাহাউদ্দীন।
সুস্বাদু ও বেহেস্তি ফল হিসেবে পরিচিত শরিফা চাষে বেশ লাভবান হয়েছেন তিনি। ৮ বিঘা জমিতে বাগান করে প্রতি বছর কয়েক লক্ষ টাকা আয় করছেন । তার এই সাফল্য এলাকার তরুণ যুবকদেরকে শরিফা বাগান চাষে অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে। আগ্রহী হয়ে উঠছেন অনেকেই।
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বিশিষ্ট ব্যাংকার বাহাউদ্দীন। শখের বশে আর ব্যাতিক্রমি কিছু করার চিন্তা নিয়েই বছর চারেক আগে মাত্র দুই বিঘা জমিতে শরিফা ফলের বাগান করেন। এলাকাভিত্তিক এর শরিফা ফলের নাম মেওয়া ফল বলে জানেন সকলে। স্থানীয় ভাবে বীজ সংগ্রহ করে তা রোপণ করেন । প্রথম বছরে খরচ করেন মাত্র ২০ হাজার টাকা। পরের বছর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।
সেবছর শরিফা ফল স্থানীয় ফল বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে পান ৪০ হাজার টাকা। স্বল্প পুঁজি বিনিয়োগ করে বেশি লাভবান হওয়ায় আরো ৬ বিঘা জমিতে শরিফা বাগান করেন। এ বছর তিনি ৫০ হাজার টাকা খরচ করে পেয়েছেন তিন লাখ টাকা। অনুকুল আবহাওয়া নিজের অদম্য পরিশ্রম এবং কৃষি অফিসের পরামর্শে তিনি শরিফা বাগান করে লাভবান হয়েছেন। কীট পতঙ্গের আক্রমণ না থাকায় এবং রাসায়নিক সারের ব্যবহার একেবারে কম হওয়ায় অনেকইে এ আবাদে ঝুঁকছেন এলাকার অনেক মানুষ।
শরিফা চাষী বাহাউদ্দিন জানান, আগে প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই পাওয়া যেতো সুস্বাদু ফল শরিফা। এখন কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে সেই ফল। এখন কেউ আর এ ফলের গাছ রোপণ করেন না। বিলুপ্ত প্রায় এ ফলের গাছ ধরে রাখা ও বাণিজ্যিক ভাবে এ বাগান করার প্রয়াস নিয়েই বাগান করেছেন ।
স্বল্প খরচ আর অল্প পরিশ্রমে বেশি লাভবান হওয়ায় স্থানীয় চাষী ও তরুণরা শরিফা বাগানের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছে। স্থানীয়রা পরামর্শ নিচ্ছেন বাগান করার জন্য। গাংনীর ভিটাপাড়ার কলেজ শিক্ষক রফিকুল আলম জানান, তিনি এ শরিফা চাষে সাফল্যের গল্প শুনেই পরামর্শ নিচ্ছেন বাগান করার। ইতোমধ্যে দুই বিঘা জমি প্রস্তুত করেছেন। বীজ সংগ্রহ করছেন তিনি। রফিকুল আলমের মতো অনেকেই বাহাউদ্দীন ও কৃষি অফিসে পরামর্শ নিচ্ছেন শরিফা বাগান করার জন্য।
স্থানীয় ব্যবসায়ী আঃ রহমান ও লিটন মিয়া জানান, মেওয়া বা শরিফা ফল সুস্বাদু ও পুষ্টিকর হওয়ায় এর চাহিদা রয়েছে। নিজের হাতে বাগান থেকে ফল সংগ্রহ করে স্থানীয় বাজার ও ঢাকাতে পাঠানো হয়। অনলাইনেও এর বেঁচা কেনা হয়। বাগান থেকে ২৫০ টাকা দরে কিনে সাড়ে চারশ টাকা দরে বিক্রি করা হয়। এতে লাভ হয় বেশি।
গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার কেএম সাহাবুদ্দীন আহমেদ জানান, শরিফা একটি বিলুপ্ত প্রায় সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণে ভরপুর ফল। বাহাউদ্দীন এটির বাগান করেছেন। এতে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকেই বাগান করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে পরামর্শ চাচ্ছেন। এ ফল আবাদে খরচ কম। রোগ বালাই একেবারই নেই। অথচ লাভ অনেক বেশি। কৃষি অফিস সব সময় চাষীদেরকে পরামর্শ দিচ্ছেন। এ ফল আবাদের সম্প্রসারণ ঘটলে পুষ্টির চাহিদা অনেকখানি পূর্ণ হবে।