মেহেরপুরের গাংনীর শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হারেজ উদ্দীনের সমাধিস্থল সংরক্ষণ ও উন্নয়নের অগ্রগতি ও বাস্তবায়ন না হওয়ায় আমরণ অনশনে বসেছেন তার বড় ছেলে বুলু মন্ডল।
আজ শনিবার (২৫মার্চ) সকাল থেকে গাংনী উপজেলা পরিষদ শহীদ মিনার চত্বরে তিনি কাফনের কাপড় নিয়ে আমরণ অনশন শুরু করেন । শহীদ হারেজ উদ্দীনের সমাধিস্থল সংরক্ষণ ও উন্নয়ন কাজ তিন বছরেও বাস্তবায়ন না হওয়ায় অবশেষে আমরণ অনশনে বসেছেন বলে দাবী করেন বুলু মন্ডল।
জানাগেছে, মেহেরপুর জেলার ৩১টি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধিস্থল সংরক্ষণ ও উন্নয়ন (১ম পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় ডিপিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তালিকাভুক্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কবর/সমাধিগুলি সনাক্ত করে তা সংরক্ষণ ও উন্নয়নের জন্য একটি গেজেট কপি প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট দপ্তর। উক্ত গেজেটে মেহেরপুর সদর ১৬টি, মুজিবনগর ৮টি এবং গাংনী উপজেলায় ৭টি কবর / সমাধিস্তল সংরক্ষণের জন্য জায়গা নির্দিষ্ট করনের জন্য প্রত্র পেরণ করা হয়।
গত ২২/১২/২-১৯ ইং তারিখে অনুরোধ লিপি প্রেরণ করা হয় স্বস্ব উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর। কাজ বাস্তবায়নে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও গণপুর্ত বিভাগকে দায়িত্ব প্রদান করে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রনালয়। পত্রে ঠিকাদার নিযুক্ত করনের মাধ্যমে কাজ বাস্তবায়ন করবে গণপূর্ত বিভাগ এবং তদরকি সহ জায়গা নির্ধারণ করবে উপজেলা প্রশাসন। অন্যান্য জেলা ও উপজেলার সমাধিস্থল সংরক্ষণের কাজ শেষ হলেও তিন বছরেও জায়গা নির্ধারন জটিলতায় শহীদ হারেজ উদ্দীনের কবর সংরক্ষণ কাজ আজও বাস্তবায়ন হয়নি।
শহীদ হারেজ উদ্দীনের বড় ছেলে বুলু মন্ডল জানান, আমি যখন ১৩ বছরে শিশু ,তখন পাকিস্থানি হানাদার বাহিনীর নির্মম অত্যাচারে নিহত হন আমার পিতা হারেজ উদ্দীন। আমার ছোট ভাই হাফিজুলকে নিয়ে আমার মা আমাদের প্রাণ বাঁচাতে গাংনীর চৌগাছা গ্রামের বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়। পরের দিন পাক হানাদার বাহিনীর লোকজন এলাকা ত্যাগ করলে আমরা আবার বাড়িতে ফিরে আসি। আমার পিতার মরদেহটি খুঁজে পেলে একটি সরকারি খাস জমিতে আমার পিতাকে কবর দেয়া হয়। স্বাধীনতার ৫২ বছর পার হয়েছে। অনেক সরকার এসেছে।
আমরা আবেদন করেছি আমার পিতার কবরটি সংরক্ষণ করার জন্য। কেউ দাবী পুরুন করেনি। অবশেষে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় এসে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারদের সম্মিলিত দাবীর প্রেক্ষিতে সরকার সারা দেশের শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধিস্থল সংরক্ষনের পরিকল্পনা হাতে নেন। কাজও বাস্তবায়ন হয়েছে। অথচ আমার পিতার নাম উক্ত তালিকায় থাকা সত্বেও আজও সে কাজ বাস্তবায়ন হয়নি। আমি কাগজপত্র হাতে নিয়ে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অফিসে যাওয়া আসা করতে করতে ক্লান্ত হয়েছি।
তিনি আরও বলেন, গাংনীর চৌগাছা মৌজার ৬৬৯১ দাগের সরকারি জমিতে আমার পিতার কবর রয়েছে। উক্ত ২একর ২৬ শতক জমির মধ্যে স্থানীয় মতলেব শেখকে ৪২ শতক,নইমুদ্দিনকে ২৪ শতক,কিয়ামুদ্দিনকে ৩০ শতক,আইনুদ্দিনকে ১৬ শতক, আফছার আলীকে ১৫ শতক ও শুকুর আলীকে ১৫ শতক জমি বন্দোবস্ত দেয়া হয়। সেখানে আরও প্রায় ৮৫ শতক জমি অবশিষ্ট রয়েছে। সে জমিও স্থানীয় প্রভাবশালীরা জোর দখল নিয়েছে। এমনকি আমার পিতার কবরটিও তারা জোর দখল নিয়ে প্রাচীর দিয়ে ঘিরে নিয়েছে। আমরা আমার পিতার কবরে যেতে পারছিনা। আবার কবর সংস্কার ও সংরক্ষণের কাজও বাস্তবায়ন হচ্ছেনা। আমার পরিবারের আর ক্উে বেঁচে নেই। আমি একমাত্র বেঁচে আছি। আমি এখন হতাশায় পড়েছি আদৌ কি আমার শহীদ পিতার কবরটি সংরক্ষণ ও উন্নকাজ হবে? এমন হতাশা নিয়ে আমি অমরণ অনশনে বসেছি। কাজ বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত অনশনে থাকবেন বলেও জানান এই শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হারেজ উদ্দীনের বড় ছেলে বুলু মন্ডল।
বীর মুক্তিযোদ্ধা পাতান আলী জানান, একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার কবর সংরক্ষণ ও উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন হোক এটা আমাদের প্রত্যাশা। মুক্তিযোদ্ধা বান্ধব সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের মুল্যায়ন করেছেন। এবং কবর সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছেন তা যে কোন ভাবে বাস্তবায়ন করা উচিৎ। এখানে প্রশাসনিক ব্যার্থতার বিষয়টি উঠে আসছে বারবার। শহীদ হারেজ উদ্দীনের কবরটি অযত্নে অবহেলায় পড়ে না থেকে সংস্কার করার দাবী জানান তিনি।
সরকারি প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্তদের অবহেলায় তিন বছরেও শহীদ হারেজ উদ্দীনের কবরটি সংরক্ষনের কাজ শুরু হয়নি। কোন অশুভ শক্তির ইশারায় কাজ বন্ধ হয়ে রয়েছে তা দেখে দ্রত কাজ বাস্তবায়ন করার দাবী জানান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদ।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার(দায়িত্বপ্রাপ্ত) সাজিদা সিদ্দিকা সেতু জানান, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হারেজ উদ্দীনের বড় ছেলে বুলূ মন্ডলের অনশন করার কথা জানতে পেরে সেখানে গিয়েছি। কাজ বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিলে তিনি আপাতত অনশন ভঙ্গ করেছেন। গাংনীতে ইউএনও হিসেবে আমি নতুন যোগদান করেছি । বিষয়টি জানা ছিলনা। দ্রত সুরাহা হবে বলেও জানান তিনি।