গাংনী উপজলার হিন্দা এইচএমএইচভি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়র সহকারি শিক্ষকের বিরুদ্ধ ছাত্রী যৌন হয়রানির অভিযাগো ফুঁসে উঠছে অভিভাবক ও এলাকাবাসি।
অভিযুক্ত শিক্ষকের বিচার দাবীতে তারা অফিস ঘেরাও করেন। অবশেষে গাংনী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিচারের আশ্বাসে দিলে এলাকাবাসি ও অভিভাবকরা শান্ত হন।
জানা গেছে, গত রবিবার সকালের দিকে বিগত ১৫ সেপ্টেম্বর রবিবার বিদ্যালয়র সহকারী প্রধান শিক্ষক সামসুল হক খান তার বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেনীর এক ছাত্রীক কুপ্রস্তাব দিয়ে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরেন। ঘটনাটি ঐ ছাত্রী তার সহপাঠি ও পরিবারের লোকজনকে জানায়। পরিবারের পক্ষ থেকে বিষয়টি প্রধান শিক্ষক আব্দুল হালিমকে অভিযোগ দেন। ঘটনার জন্য অভিযুক্ত শিক্ষক সামসুল হক খানের বিচার দাবি করেন। ঘটনাটি এক সপ্তাহ পার হলেও প্রধান শিক্ষক আব্দুল হালিম তার বিচার না করে ঘটনাটি ধামাচাপা গড়িমসি করেন।
বর্তমান বিদদ্যালয় পরিচালনা কমিটি পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও গাংনী উপজলা নির্বাহী অফিসার প্রীতম সাহার কাছে গেলে তিনি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হোসনে মোবারককে তদন্তের জন্য ঘটনাস্থলে যেতে বলেন।
এ নিয়ে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এলাকার শত শত লোকজন জড়ো হলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায় বিদ্যালয় ছেড়ে পালিয়ে যান অভিযুক্ত শিক্ষক।
গাংনী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হোসনে মোবারক ঘটনাস্থলে তদন্ত করেন। এসময় গাংনী উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার আব্দুল্লাহ আল মাসুম উপস্থিত ছিলেন।
তিনি পৃথক পৃথকভাব বিভিন্ন ক্লাসের ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও অভিভাবকদের সাথে কথা বলেন। পরে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, “যৌন হয়রানির সত্যতা পেয়েছেন”।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, অভিযুক্ত শিক্ষক সামসুল হক খান প্রধান শিক্ষক আব্দুল হালিমের আপন ভাই হওয়ায় একের পর এক অনৈতিক কাজ করে বারবার ধরা পড়লেও বিচার হয়নি একটি ঘটনারও।
স্থানীয়রা জানান, ওই শিক্ষক এর আগেও প্রাইভেট পড়ানোর সময় নবম শ্রেনীর এক ছাত্রীকে জোরপূর্বক যৌণ হয়োনীর চেষ্টা করেছিলো। এসময় ওই ছাত্রী বিষয়টি তার পরিবারের লোকজনকে জানানোর ফলে এলাকাবাসী তার বিরুদ্ধে সালিশ বসিয়ে জুতার মালা পরিয়ে এলাকা ঘুরিয়েছে। এঘটনায় উল্টো ওই বিদ্যালয়ের এক শিক্ষকসহ এলাকার ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে জেল খাটায়।
বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি ওবায়দুর রহমান দুলাল জানান, তার অনৈতিক কাজের কারণে সামসুল হক খানকে চাকুরি থেকে বহিস্কার করেন প্রধান শিক্ষককে বাস্তবায়নের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিলো। প্রধান শিক্ষকের ভাই হওয়ায় অভিযুক্ত সামসুল হক খানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে তাকে সহযোগীতা করেন। দীর্ঘ ১২ বছর সৌদি আরবে থাকলেও প্রধান শিক্ষক আব্দুল হালিম বিদ্যালয়ের হাজিরা খাতায় তাকে উপস্থিত দেখিয়েছেন। ২০২২ সালে অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের চাকরি এমপিওভূক্ত হয়েছে।
তিনি আরো অভিযোগ করেন, বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক সাজেদুল করীম দীর্ঘ ৮ বছর সৌদি আরবে থাকলেও প্রধান শিক্ষক ব্যাক ডেটে সার্কোলার দিয়ে ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে তাকে অবৈধভাবে নিয়োগ দিয়েছেন। এখানে সাবেক সভাপতির স্বাক্ষরও জাল করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
হিন্দা গ্রামের বাসিদা বিল্লাল হোসন, মিলন হোসেনসহ একাধিক লোকজন জানান , অভিযুক্ত শিক্ষক সামসুল হক ইতাপুর্বও ৭/৮ বছর আগে নিজ বিদ্যালয়র ৯ম শ্রনীর এক ছাত্রীক (নাম প্রকাশ করা হলা না) যৌন হয়রানি করেছিল। এটা জানাজানি হল গ্রাম বাসি তাক জুতার মালা পরিয়ে ঘুরায়।
এ ছাড়াও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধ অবৈধভাবে শিক্ষক কর্মচারী নিয়াগেরও অভিযোগ তুলেছেন।
তারা জানান, বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালীন সময় অফিস সহকারী হিসেবে মো. সাহাব উদ্দীনকে ২০১৪ সাল ২ লাখ টাকার বিনিময় নিয়োগ দেয়া হয়। পরবর্তীতে প্রধান শিক্ষক আরও টাকা দাবি করে না পেয়ে ২০১৫ সালে মিথ্যা অযুহাত দেখিয় সাহাব উদ্দীনকে অবৈধভাবে বরখাস্তÍ করেন। পরে একই পদে কিরণ নামের একজনকে অফিস সহকারী পদে নিয়োগ দিয়ে ১০ লাখ টাকা বাণিজ্য করেন। অফিসিয়াল আইন কানুন তোয়াক্কা না করে নিজ ক্ষমতা দেখিয়ে একাধিকবার কারন দর্শানো নোটিশ দিয়ে এক পর্যায় ২০২৩ সালে তাকে স্থায়ীভাবে অব্যাহতি দেন।
প্রধান শিক্ষকর দুর্নীতি তুলে ধরতে বিদ্যালয়র সাবেক সভাপতি ওবায়দুল হক দুলাল (দায়িত্বকাল ২০১২-২০১৬ ইং) জানান, আমি সভাপতি থাকা কালীন সময় কোনরকম দুর্নীতি করত পারেনি। পরবর্তীতে আমার স্বাক্ষর জাল কর ব্যাক ডেটে কয়েক জন শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে প্রধান শিক্ষক মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তিনি জানান, প্রধান শিক্ষক আব্দুল হালিম একজন সুদব্যবসায়ী। তার পরিবারের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অভিযোগ।
বিদ্যালয় সরেজমিনে অফিসারদের তদন্ত করার সময় গ্রামর ওয়ার্ড বিএনপির নতা ওবায়দুল হক দুলাল, শাহজাহান আলী, সাবেক মেম্বর জাকির হোসন, সাবেক মেম্বর মিজানুর রহমান, বিএনপি নেতা আবাস আলী, যুবদল নেতা সিদ্দিকুর রহমান, রিংকু উপস্থিত ছিলেন।
উপজলা শিক্ষা অফিস সূত্র জানা গেছে, গ্রামবাসীর আবেদনের প্রেক্ষিতে অভিযুক্ত শিক্ষক সামসুল হকক সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। পরবর্তীত সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষ তার বিরুদ্ধ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।