মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার ও দলিল লেখকদের দ্বন্দে, বন্ধ হয়ে পড়েছে দলিল লেখার কাজ ও জমি রেজিষ্ট্রি। জমি রেজিস্ট্রি করতে না পেরে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন জমির ক্রেতা-বিক্রেতারা।
চাহিদানুযায়ী জমি রেজিস্ট্রি না হওয়ায় ক্রেতা বিক্রেতাদের যেমন ভোগান্তি বেড়েছে তেমনি সরকারও হারাচ্ছে বড় পরিমাণ রাজস্ব । কবে নাগাদ এর সমাধান হবে তা নিয়ে সংশয় জনমনে। দলিল লেখকরা বলছেন, অতিরিক্ত টাকা দাবী ও নানা অজুহাতে হয়রানী করা হচ্ছে। আর সাব-রেজিস্ট্রার বলছেন, নিয়ম অনুযায়ী রেজিস্ট্রি হচ্ছে।
মেহেরপুর জেলার সবচেয়ে জনবহুল উপজেলা গাংনী। এ উপজেলায় প্রতিনিয়ত দেড় থেকে দুই শতাধিক ক্রেতা-বিক্রেতা তাদের জমি কেনা বেচা করে থাকেন। প্রতিদিন দেড় থেকে দুশো জমির দলিল জমা হলেও সাব-রেজিস্ট্রার রেজিষ্ট্রেশন করে থাকেন ৩০ থেকে ৪০ টি দলিল।
উপজেলায় অন্য সাব-রেজিস্ট্রার থাকতে আগে যেখানে প্রতিবছরে ন্যূনতম ১২ থেকে ১৩ হাজার দলিল রেজিস্ট্রি হতো, এখন সেখানে রেজিস্ট্রি হচ্ছে পাঁচ থেকে ছয় হাজার। যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। ফলে জন-ভোগান্তি এখন চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। সেইসঙ্গে সরকারের এ খাত থেকে রাজস্ব কমেছে বছরে কয়েক কোটি টাকা। ভুক্তভোগীরা দুর দুরান্ত থেকে সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে এসে জমি রেজিষ্ট্রি করতে না পেরে ঘুরে যাচ্ছেন।
এতে তারা সময় এবং অর্থনৈতিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। দলিল লেখকদের অভিযোগ সাবরেজিস্টার অনৈতিকভাবে দলিল প্রতি ৫ শ টাকা করে দাবি করছেন। এছাড়া কাগজপত্রের অজুহাত দেখিয়ে দিনের পর দিন ঘুরাচ্ছেন ক্রেতা বিক্রেতাদের। মেহেরপুরসহ সারাদেশে যেভাবে দলিল রেজিষ্ট্রেশন হয়ে থাকে সেভাবে দলিল রেজিষ্ট্রেশন করার দাবি জানান তারা।
তবে সাব-রেজিস্টার বলছেন সঠিকভাবে কাগজপত্র দেখেই জমি রেজিষ্ট্রি করা হচ্ছে। যাতে ক্রেতা বিক্রেতারা ভবিষ্যতে কোনো ধরণের দুর্ভোগে না পড়েন। তবে মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা গেছে, দলিল লেখকরা কর্মবিরতি করে তাদের টেবিলে হাত গুঠিয়ে বসে আছেন। আর জমি ক্রেতা বিক্রেতারা দুর-দুরান্ত থেকে এসে ঘুরে বেড়াচ্ছেন চিন্তা আর হতাশা নিয়ে। এদিকে সাব রেজিস্ট্রার তার অফিস কক্ষে বসে আছেন স্টাফদের নিয়ে। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত কোন দলিল রেজিষ্ট্রি হয়নি।
ভুক্তভোগীরা জানান, জরুরী টাকার প্রয়োজনে জমি বিক্রি করছিলাম। এখানে এসে শুনছি রেজিষ্ট্রি হচ্ছে না। ফিরে যাচ্ছি। জমি বিক্রি করতে আসা মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, সকালে অনেক লোকজন সাথে নিয়ে জমি রেজিষ্ট্রি করতে এসেছিলাম। এসে দেখি দলিল লেখার কাজ বন্ধ। ফিরে যাচ্ছি। আমাদের ভোগান্তি দেখার কেউ নেই।
গাংনী দলিল লেখক সমিতির সভাপতি মোঃ ফাকের আলী জানান, সাব-রেজিস্ট্রার যোগদানের পর থেকে দলিল রেজিস্ট্রি কমিয়ে দিয়েছেন। নানা অজুহাতে হয়রানি ও দলিল প্রতি ৫ শ টাকা করে উৎকোচ দাবি করাই দলিল লেখা বন্ধ রেখেছি।
দলিল লেখক রাশেদুল ইসলাম বলেন, দলিল রেজিষ্ট্রেশন অর্ধেকে নেমে এসেছে। সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে সাথে ক্রেতা বিক্রেতারা হয়রানি হাচ্ছে।
দলিল লেখক শওকত আলী বলেন, সাব-রেজিস্ট্রার যেসব শর্ত দিচ্ছেন সেটা তার মনগড়া নিয়ম। বাংলাদেশে কোথাও এভাবে জমি রেজিষ্ট্রি হয়না।
সাব-রেজিস্ট্রার নাইমা ইসলাম বলেন, আমি সরকারি নিয়ম অনুযায়ী দলিল রেজিষ্ট্রেশন করাই দলিল লেখকরা আমার উপর অসন্তোষ। অতিরিক্ত টাকা নেওয়া ও হয়রানির অভিযোগ মিথ্যা বলেও দাবী করেন তিনি।