গাংনীতে স্ত্রীর টাকাসহ সহায়-সম্বল লুটে নিয়ে স্ত্রীকে তাড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ

প্রথম স্বামীর সংসার ভেঙ্গে পরোকিয়া প্রেমিকের সাথে ঘর বেঁধেছিলেন কল্পনা খাতুন (৪০)। বিয়ের ছয় মাস যেতে না যেতেই শুরু হয় নির্যাতন। নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে বাবার বাড়ির জমি বিক্রি করে স্বামী মনিরুল ইসলামকে কিনে দিয়েছেন পালসার মোটরসাইকেল। তারপরেও সুখে আসেনি কল্পনা খাতুনের। আবারো জমি বিক্রি করে কিনেছেন ট্রাক্টর। সেই ট্রাক্টর কল্পনার নামে দেওয়ার কথা থাকলেও প্রতারণার মাধ্যমে নিয়েছেন নিজের নামে। সব হারিয়ে কল্পনা এখন ঘুরছেন পথে পথে। ঘটনাটি ঘটেছে গাংনী উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ধলা গ্রামে।

জানা গেছে, গাংনী উপজেলার রাম কৃষ্ণপুরধলা গ্রামের আজিজুল হকের ছেলে মনিরুল ইসলাম (৪০) একই গ্রামের মৃত আবুল হোসেনের মেয়ে ও আসাদুলের স্ত্রী কল্পনা খাতুন (৪০) কে প্রেমের ফাঁদে ফেলে দেড় বছর আগে বিয়ে করে। বিয়ের পর নানা প্রলোভন দেখিয়ে স্ত্রীর গচ্ছিত নগদ টাকা ও শ্বশুরের রেখে যাওয়া সম্পত্তি বিক্রি করে প্রায় ১২ লাখ টাকা স্বামী মনিরুল ইসলাম হাতিয়ে নেয়। ঐ টাকা দিয়ে ২টি ট্রাক্টর কেনেন। ট্রাক্টর দুটি স্ত্রী কল্পনার নামে দেয়ার কথা থাকলেও অবশেষে নিজের নামে করে নিয়েছে। তারপরেও কল্পনার উপর নির্যাতন বন্ধ না হওয়ায় মনিরুলকে একটি পালসার মোটরসাইকেল কিনে দেয় কল্পনা খাতুন। মোটরসাইকেল কেনার রসিদ স্ত্রী কল্পনার নামে ইস্যু করার অপরাধে মনিরুল ইসলাম তাকে মারধর করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়।

অসহায় কল্পনা খাতুন তার স্বামীর সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে মনিরুলের সহযোগীরা কল্পনাকে প্রাণনাশের হুমকি ধামকি দিয়ে ভয়ভীতি দেখায়। এঘটনায় কল্পনা খাতুন বাদি হয়ে মেহেরপুর শিশু ও নারী নির্যাতন আদালতে মামলা দায়ের করেছেন।

আজ বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) দুপুরের দিকে মনিরুল ইসলাম গাংনী উপজেলা শহরে আসেন। খবর পেয়ে কল্পনা খাতুন তার দেওয়া মোটরসাইকেলটি ও ১২ লাখ টাকা উদ্ধার করতে গাংনী উপজেলা শহরে আসেন।

এসময় মনিরুল ইসলাম ও তার লোকজন কল্পনা খাতুনকে ধরে টানা হেঁচড়ার পাশাপাশি কিল ঘুষি মেরে আহত করে গলার একটি স্বর্ণের চেইন ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। কল্পনা খাতুন অভিযোগ করেন রামকৃষ্ণপুর ধলা গ্রামের সদ্য প্রয়াত মেম্বর আনারুল ইসলামের ছেলে লাল্টু তাকে কিল মেরে স্বর্ণের চেইনটি ছিনিয়ে নিয়ে নিয়েছে। এসময় অসংখ্য লোকজন জড়ো হয়। ধ্বস্তাধস্তির এক পর্যায়ে মনিরুল ইসলাম মোটর সাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায়।

কল্পনা খাতুন আরো জানায়, মনিরুল ইসলাম আমার সাথে প্রতারণা করে আমার সব লুটে নিয়েছে। আমার বাবার মাঠান জমি (দেড় বিঘা) বিক্রি করে ১৫ লাখ টাকা, বাড়ির ৪ শতাংশ জমি বিক্রির টাকা আমাকে ফুসলিয়ে হাতিয়ে নিয়েছে। আমাকে এখন পথের ভিখেরি বানিয়েছে। সে এখন আমার কোন খোঁজ খবর নেয় না। আমি আমার ১২ লাখ টাকা ফেরত চাই। ন্যায্য টাকা ফেরত পেতে এবং প্রাণনাশের হুমকির বিরুদ্ধে থানায় মামলা করবেন বলেও জানান তিনি।

এদিকে ধলা গ্রামের একাধিক ব্যক্তি জানান, কল্পনা যা বলছে তা সব সত্য। তারা বলেন, প্রেমের প্রলোভন দেখিয়ে তার সোনার সংসার নষ্ট করেছে মনিরুল ইসলাম। তার আগের পক্ষের একটি কণ্যা সন্তান রয়েছে। সেই সন্তানকেও দেখে না।

এ ব্যপারে মনিরুল ইসলামকে ফোন দিলে তার চাচাতো ভাই শিমুল (একজন অবৈধ মাটি ব্যবসায়ী) জানান, আপনারা মনিরুল কে দায়ী না করে কল্পনাকে নিয়ে লিখতে পারেন। মনিরুল নির্দোষ। মনিরুলের বিরুদ্ধে কিছু লিখবেন না। সে কল্পনার সাথে প্রতারণা করেনি। কল্পনা কোন টাকা পয়সা পাবে না। সোনার চেইন ছিনতাইয়ের ঘটনা সম্পুর্ণ মিথ্যা। এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত কল্পনা আদালতে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল।