মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার হিন্দা গ্রামে প্রবাস ফেরত এক ব্যাক্তির স্ত্রীর দাবীতে অনশন করে ব্যার্থ হওয়ায় বিষপান করে আত্নহত্যার চেষ্টা চালিছে বুলবুলি খাতুন (২৮) নামের এক নারী।
বৃহষ্পতিবার দুপুরে স্ত্রীর হিসেবে স্বীকৃতি না পেয়ে অভিমানে বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। বুলবুলি খাতুন গাংনীর আকুবপুর গ্রামের আব্দুর রহিমের মেয়ে। বর্তমানে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীণ রয়েছে বুলবুলি খাতুন।
জানাগছে, গাংনী উপজেলার হিন্দা গ্রামের শহিদুল ইসলামের তিন ছেলে মহন আলী,সুমন আলী ও মামুন। বড় ছেলে মহন আলী কৃষক,ছোট ছেলে মামুন চা দোকানদার ও মেজ ছেলে সুমন কাতার প্রবাসী। কাতার থাকা অবস্থায় মোবাইলে ঝগড়ার সুবাদে সুমনের প্রথম স্ত্রী এক কণ্যা সন্তানের জননী শ্যামলী খাতুন গলায় ফাঁস দিয়ে আত্নহত্যা করে।
সুমনের ছোট ভাই মামুনের সাথে বুলবুলির ছোট বোন ফুলঝুরি খাতুনের(আপন খালাত ভাইবোন) সাথে বিয়ে হয়। সেই সুবাদে খালত ভাইবোন হিসেবে সুমন ও বুলবুলির সাথে কাতার থেকে মোবাইলে কথাবলাবলি হয় । এক পর্যায়ে দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দেড় মাস আগে সুমন কাতার থেকে বাড়ি চলে আসলে বুলবুলি সুমনকে বিয়ের কথা বলে।
সুমন বিষয়টি এড়িয়ে গেলে গত বুধবার সকালে সুমনের বাড়িতে স্ত্রীর দাবী নিয়ে বসে বুলবুলি। পরে সুমনের পিতা শহিদুল ইসলাম তার ভাইরা ভাই বুলবুলির পিতা আব্দুর রহিমকে খবর দিলে আকুবপুর থেকে কয়েকজন ব্যাক্তি সুমনের বাড়ি হিন্দা গ্রামে আসেন।তেঁতুলবাড়িয়া ইউনিয়নের স্থানীয় ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নাজমুল হক খোকন,সাবেক মেম্বার জেকের আলী,করমদির গ্রামের ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল ওহাবসহ এলাকার গন্যমান্য ব্যাক্তিদের উপস্থিতিতে গ্রাম্য সালিশ করেন।
গ্রাম্য সালিশের লোকজন বুলবুলির সাথে বিয়ের কাগজপত্র দেখতে চাইলে বুলবুলি খাতুন বিয়ের কাগজপত্র দেখাতে ব্যার্থ হন। সেই সাথে সুমন বিয়ের বিষয়টি অস্বীকার করেন । সুমনকে বিয়ে করতে বল্লেও সুমন তা প্রত্যাক্ষান করেন। এমন অভিমানে সালিশ থেকে চলে গিয়ে বিষপান করে বুলবুলি খাতুন। উপস্থিত লোকজন বুলবুলিকে উদ্ধার করে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসার পর বিপদমুক্ত হন বুলবুলি। বর্তমানে তিনি গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।
হিন্দা গ্রামের মোফাজ্জেল হোসেন জানান, বুলবুলির আপন ছোট বোনের সাথে বিয়ে হয়েছে সুমনের ছোট ভাই মামুনের। সুমন ও বুলবুলি আপন খালাত ভাইবোন। বুলবুলির এর আগেও দুই জায়গায় বিয়ে হয়েছিল। তার একটি কণ্যা সন্তান রয়েছে। সেসব স্বামীর সাথে বুলবুলির সংসার হয়নি। গত বুধবার সকালে হৈচৈ শুনে সুমনদের বাড়িতে গিয়ে দেখি বুলবুলি স্ত্রীর দাবী নিয়ে বসে আছে। পরে বুলবুলিদের গ্রামের লোকজন এস সালিশ করে। সালিশ শেষে বুলবুলি বিষপান করে।
ওই গ্রামের বুদ্ধ মোস্তফা জানান, সুমনের সাথে কি সম্পর্ক আছে তা জানিনা। তবে যে সম্পর্কই থাকুক না কেন তার কোন প্রমাণ না থাকায় সালিশে কোন বিচার করতে পারেনি। পরে শুনছি বুলবুলি খাতুন বিষ খেয়েছে।
সুমনের মা সাহেদা খাতুন জানান, বুলবুলি আমার সৎ বোনের মেয়ে। আমার তিনটি ছেলে,কোন মেয়ে নেই। বোনের মেয়ে হিসেবে সৎ বোন হেলেনার মেয়ের সাথে ছোট ছেলে মামুনের বিয়ে দিই। সুমন কাতার থাকা অবস্থায় তার স্ত্রী একটি মেয়ে রেখে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্নহত্যা করে মারা যায়। পরে সুমন কাতার থেকে আর বাড়ি ফেরেনি। তার একটি মেয়ে আমি লালনপালন করে বড় করছি। আমার বোনের মেয়ে বুলবুলি বুধবার সকালে হঠাৎ আমাদের বাড়ি এসে সুমন বিয়ে করেছে বলে দাবী করে। সুমনও স্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে আমরা আমার বোনকে মোবাইল করলে তারা এখানে এসে বিচারে বসে। বিচারে উপস্থিতিদের কাছে বিয়ে বা প্রেমের কোন প্রমাণ দেখাতে না পারলে তাকে আদালতের আশ্রয় নিতে বলে মড়লরা। এতে সে রেগে মরিচ ক্ষেতে দেয়া বিষ পান করে।
সুমনের পিতা শহিদুল ইসলাম জানান, তাদের মধ্যে যদি কোন সম্পর্ক থেকেই তবে আমার বিয়েতে কোন আপত্তি নেই। তবে বিয়ে না হলেও প্রেমের সম্পর্ক থাকতে পারে বলেও জানান তিনিসহ স্থানীয়রা।
ইউপি সদস্য সজরুল ইসলাম জানান, এর আগে বুলবুলি খাতুনকে আমাদের গ্রামে কখনও দেখিনি। বিয়ের কথা শুনিওনি। হঠাৎ বুধবার আমাকে বিষয়টি জানালে আমি বুলবুলির সাথে কথা বলি এবং তাদের পরিবারের লোকজনকে আসতে বলি । তাদের গ্রামের লোকজন আসলে আমরা আমদেও ওয়ার্ডেওর গন্যমান্য লোকজনকে নিয়ে সালিশে বসি। সেখানে বুলবুলির সাথে বিয়ের কাগজপত্র দেখতে চাইলে বুলবুলি তা দেখাতে পারেনি। এমনকি প্রেমের সম্পর্ক আছে কিনা তাও দেখায়নি। এদিকে সব বিষয় সুমন মেনে না নিলে তাকে আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে আমরা বাড়ি চলে যায়। পরে শুনছি বুলবুলি বিষপান করেছে। একই কথা জানালেন করমদি গ্রামের ইউপি সদস্য আব্দুল ওহাব। তিনি বলেন, স্বামী হিসেবে যখন সে সমুনকে পাচ্ছেনা তখন একজন নারী হিসেবে আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। আদালতে না গিয়ে বিষপান করেছে এটিও খুব দুঃখ জনক। এসব কারনে সামাজিক আচার বিচার উঠে গেছে এবং সালিশ করতে গিয়ে জনপ্রতিনিধিরাও বিপদে পড়ছে তাই আমি উঠে এসেছি।
বুলবুলি খাতুনের মা হেলেনা খাতুন জানান, সৌদি থাকালীণ সময়ে সুমনের সাথে বছর তিনেক আগে মোবাইল ফোনে বুলবুলির বিয়ে হয়। এর মাস খানেক পর সুমন দেশে ফিরে আসলে বাওটের এক কাজীর বাড়িতে আবারো বিয়ের পিঁড়িতে বসে দুজন। স্বাভাবিক ভাবে দুজন ঘর সংসার করতে থাকে। বিয়ের দুমাস পর সুমন আবারো বিদেশে চলে যায়। এখন আমার মেয়েকে অস্বীকার করছে সুমন। এর সুষ্ঠ্য বিচার দাবী করেন তিনি।
গাংনী থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক জানান, তিনি ঘটনাটি জানার জন্য পুলিশ পাঠিয়েছেন। এখন পর্যন্ত কেউ কোন অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।