প্রতি বছরই আগাম জাতের সবজি চাষে বেশি মুনাফা অর্জন করলেও এবার আগাম ও উন্নত জাতের স্মার্ট-১২১৭ জাতের টমেটো চাষে বাজিমাত করেছেন মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ভাটপাড়া গ্রামের কৃষক সজিব রহমান।
ইতোমধ্যে দেড় লাখ টাকার টমেটো বিক্রি করেছেন। আরও লক্ষাধিক টাকার টমেটো বিক্রি করবেন বলে তিনি আশাবাদি। উন্নত জাত ও সঠিক পরিচর্যা ও কৃষি বিভাগের প্রয়োজনীয় পরামর্শ পেলে সবজি চাষিদের ভাগ্যবদলাতে পারে এমন প্রত্যাশা তার। নতুন ও উন্নত জাতের ফসল চাষে মাঠ দিবসের মাধ্যমে স্থানীয় কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে এমন দাবী কৃষি অফিসের।
মেহেরপুর জেলায় এই প্রথম স্মার্ট-১২১৭ জাতের টমেটো আবাদ করেছেন ভাটপাড়া গ্রামের আকবর আলীর ছেলে কৃষক সজিব রহমান। তিনি জানান, এক বীজ কোম্পানীর মাঠ দিবসে অংশ গ্রহন করে স্মার্ট-১৭ জাতের হাইব্রীড টমেটোর বিষয়ে জানতে পারেন তিনি। পরে পরীক্ষামুলক এক বিঘা জমিতে স্মার্ট-১২১৭ জাতের টমেটোর চারা রোপন করেন। তিনমাস যেতে না যেতেই গাছে আসে ফুল ও ফল। প্রতিটি গাছের পাতার নিচে থোকায় থোকায় ঝুলতে দেখা যায় টমেটো। গাছ ঠেকাতে গাছের সাথে বেঁধে দিতে হয় বাঁশের খুঁটি। ইতোমধ্যে তিনি দেড় লাখ টাকার টমেটো বিক্রি করেছেন। এখনও জমিতে লক্ষাধিক টাকার টমেটো রয়েছে। সঠিক সময়ে কৃষি অফিসের সহায়তা ও নতুন নতুন উন্নত জাত কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারলে আরও লাভবান হওয়া সম্ভব।
কৃষক সজিব রহমানের টমেটো চাষে বাজিমাতের খবরে অনেকেই আসছেন তার কাছে পরামর্শ নিতে। সবজি চাষি শাহীন জানান, তিনি জানান, অন্যান্য জাতের টমেটো চাষে লাভ হয় তবে স্মার্ট জাতের টমেটো চাষে প্রায় তিনগুন লাভ সম্ভব। এবার দুই বিঘা জমিতে এ নতুন জাতের টমেটো আবাদ করবেন বলে জানান তিনি। একই কথা জানালেন রাইপুর গ্রামের সবজি চাষি মিনাজ উদ্দীন।
সবজি চাষি কাবিরুল ইসলাম জানান, শুধু স্মার্ট-১২১৭ জাতের টমেটো নয়, অনেক উন্নত জাত আছে যা চাষিরা জানে না। স্থানীয় কৃষি অফিস যদি ওইসব আবাদ সম্পর্কে ধারনা দেয় তাহলে এই অঞ্চলে সব আবাদেই চাষিরা লাভবান হতে পারে। বিভিন্ন বীজ কোম্পানীর উদ্যোগে চাষিরা আবাদ সম্পর্কে যে টুকু ধারনা পেয়ে থাকে শুধুমাত্র সেটুকুতেই সীমাবদ্ধ। স্থানীয় কৃষি অফিসার ও উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তারা যদি চাষিদেরকে উন্নত জাত নির্বাচনে সহায়তা করে তাহলে নতুন নতুন আবাদের খোঁজ পাবেন চাষিরা। চাষি সজিবের মতো তিনিও এবার উন্নত ও আগাম জাতের টমেটো আবাদ করবেন এবং সে ব্যাপারে পরামর্শ নিচ্ছেন তিনি।
কৃষি অফিসের হিসেব মতে, এ অঞ্চলে বেশ কয়েকটি আগাম জাতের টমেটো চাষ হয়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বারি টমেটো-৪, বারি টমেটো-৫, রোমা ভিএফএম রোমারিও, টিপু সুলতান, গ্রেট পেলে, ডেল্টা এফ-১, নিউ রুপালী এফ। এগুলো ভরা মৌসুমী জাত। শীতকালে স্বাভাবিক ভাবেই এসব জাতের টমেটো আবাদ হয়ে থাকে। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে বীজ বপনের পর অক্টোবর – নভেম্বরে এসব জাতের টমেটোর চারা রোপন করা হয়ে থাকে। এসব জাতের টমেটো গাছে ফুল ও ফল আসতে একটু দেরি করে তাই ফলন নিয়েও হতাশায় থাকেন চাষিরা।
গাংনী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. ইমরান হোসেন জানান, চলতি বছরে ৬৫ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের টমেটো আবাদ হয়েছে। এতে ১৫০০ মে. টন টমেটো উৎপাদন হবে। যা জেলার চাহিদা পুরুনের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করে চাষিরা লাভবান হবে।
তিনি আরও জানান, এ অঞ্চলের জেলার মাটিতে সব ধরনের ফসল উৎপাদন হয়। যা দেশের অন্যান্য এলাকার চেয়ে এখানকার উৎপাদিত টমেটো ও সবজির সু-স্বাদু হওয়ায় চাহিদা ও দাম ভাল। সে কারনে কৃষক সজিব রহমানের মত কৃষকদের পাশে থেকে মাঠ দিবসের মাধ্যমে বিভিন্ন ফসলের জাত সম্পর্কিত নানা পরামর্শ দিয়ে আসছে কৃষি বিভাগ।