মেহেরপুরের গাংনীতে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে সড়ক নির্মানের অভিযোগে কাজ বন্ধ করে দিয়ে বিক্ষোভ করেছে এলাকাবাসি।
গতকাল শুক্রবার সকাল ১১ টায় উপজেলার কাজিপুর ইউনিয়নের নওদাপাড়া এলাকায় কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়। কিছুক্ষণ পর পুনরায় কাজ শুরু হলেও অজ্ঞাত কারনে কেউ মুখ খুলতে চাইনি।
এছাড়া গাংনী উপজেলা প্রকৌশলী গোলাপ আলী শেখকে ম্যানেজ করেই বেশ কয়েকটা সড়ক নির্মান করা হচ্ছে নিম্ন মানের সামগ্রী দিয়ে। কর্তৃপক্ষের তদারকি না থাকায় অনিয়ম প্রকট আকার ধারন করছে। একারনে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। নিম্ন মানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড়।
স্থানীয়দের অভিযোগ গাংনী উপজেলা প্রকৌশলী গোলাপ আলী শেখ যোগদানের পর থেকে বিভিন্ন সড়ক নির্মানে চলছে অনিয়ম। তদারকি না করা ও অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার কারনেই নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করছে কতিপয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
গতকাল শুক্রবার কাজিপুর-নওদাপাড়া সড়ক নির্মানে অনিয়মের অভিযোগে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে স্থানীয়রা।
পরে গাংনী উপজেলা প্রকৌশলী গোলাপ আলী শেখকে জানালেও কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় আবার কাজ শুরু হয়েছে।
এ নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয়রা জানান, রাস্তায় কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে। প্রতিবাদ করলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন হুমকি দিচ্ছে।
স্থানীয়দের দাবি, দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে এ সড়কটি সংস্কার করা হচ্ছে। নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করার কারনে কিছুদিনের মধ্যে নষ্ট হয়ে যাবে। কোন ঠিকাদার কাজ করছে জানেনা শ্রমিকবৃন্দ। তারা জানিয়েছেন জনৈক শামিম নামের এক ব্যক্তি কাজ দেখভাল করে।
এদিকে বামুন্দী পশুহাট-মটমুড়া সড়ক নির্মানে অভিযোগ উঠলেও কোন কর্নপাতই করছেনা প্রকৌশলী গোলাপ আলী শেখ। ঠিকাদার মকলেচ আলীর কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে কর্তৃপক্ষ নিরব দর্শকের ভুমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসির।
এদিকে পলাশীপাড়া রাস্তা নির্মানে অনিয়মের অভিযোগ উঠলেও কোন ব্যবস্থাই নেয়া হয়নি বরং অনৈতিক সুবিধা নিয়ে দ্রত কাজ করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দেয়া হয়। এছাড়া ধলা এলাকায় একটি রাস্তার কাজের মান নিয়ে সামাজিক যোগযোগে মাধ্যমে নানা মন্তব্য শুরু হওয়ার পর নির্বাহী প্রকৌশলীর নির্দেশে নিম্ন মানের মালামাল সরিয়ে দেয়া হয়। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দাবি নিম্নমানের সামগ্রী গুলো স্যালভেজের।
গাংনী উপজেলার বিভিন্ন সড়ক নির্মান কাজ নিম্ন মানের হওয়ায় এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আসাদুজ্জামানের সরকারী মোবাইল ফোনে কল দেয়া হলে তিনি রিসিভ করেনি।
এদিকে গাংনী উপজেলা সচেতন মহলের পক্ষ থেকে প্রকৌশলী গোলাপ আলী শেষের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী, দূর্নীতি দমন কমিশন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দায়েরের লক্ষে গণস্বাক্ষর কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী (প্রশাসন) মো: আমিরুল ইসলাম খান বলেন, গাংনী উপজেলার বিভিন্ন সড়ক নির্মানে অনিয়মের বিষয়টি খতিয়ে দেখে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। সহড়াতলা এলাকায় নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে সড়ক নির্মানে প্রতিবাদ করলেও কোন প্রতিকার পাইনি স্থানীয়রা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ঠিকাদার জানান, প্রকৌশলীর অনৈতিক চাহিদা বাড়লে কাজ নিম্ন মানের হবেই। এছাড়া উৎকোচের পরিমান কম হওয়ায় সম্প্রতি দুজন ঠিকাদারের ফাইল আটকিয়ে রাখে গোলাপ আলী শেখ।
এ নিয়ে উক্ত দুজন ঠিকাদারের সাথে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন তিনি। পরে ফাইল দ্রত ছাড় করে দেওয়ার প্রতিশ্রতি দিলে ঠিকাদার অফিস চত্তর ত্যাগ করে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঐ ঠিকাদার জানিয়েছে তাকে সন্ত্রাসী দিয়ে গাংনী থেকে কুষ্টিয়া এলাকায় তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকিও দিয়েছিলো প্রকৌশলী গোলাপ আলী শেখ।
এছাড়া ঠিকাদারদের জিম্মি করে বিভিন্ন ফাইলে ৩ থেকে ৫ পার্সেন্ট নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
গাংনী উপজেলা ঠিকাদার সমিতির একজন সদস্য জানান,ঠিকাদার বৃন্দ প্রকৌশলীদের হাতে জিম্মি প্রকাশ্য মুখ খুললে ফাইল আটকিয়ে দেবে। তবে ঠিকাদার সমিতির এক নেতা জানিয়েছে, প্রকৌশলী গোলাপ আলী শেখ যোগদানের পর থেকে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠায় সরকারের বিভিন্ন সংস্থা তার বিষয়ে খোঁজ খবর নিচ্ছে। ঠিকাদার সহ অনেকেই গোপনে তার অনৈতিক কর্মকান্ডের নানা তথ্য দিচ্ছে।
এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে প্রকৌশলী গোলাপ আলী শেখের সরকারী মোবাইল ফোনে কল দিলে বন্ধ পাওয়া যায়।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সেলিম শাহনেওয়াজ বলেন, অনিয়মের বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি সড়ক নির্মাানে নানা অনিয়মের বিষয়টি দেখেছেন বলেও মন্তব্য করেন।
শহীদ হারেজ আলীর সন্তান বুলু মন্ডল জানিয়েছে, সড়ক নির্মানে অনিয়ম ও প্রকৌশলী গোলাপ শেখের অর্থবানিজ্য’র বিরুদ্ধে গাংনী শহীদ মিনারের সামনে মানববন্ধন ও অনশন করা হবে। কোন ভাবেই জনগনের টাকা তছরুপাত হতে দেয়া হবেনা। শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে অনিয়মের প্রতিবাদ চলতেই থাকবে।