মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে প্রায় অর্ধশত অবৈধ ইটভাটা। উপজেলা প্রশাসনের তালিকা অনুযায়ী বর্তমান চলমান ইটভাটার সংখ্যা ৪৮টি। এসকল ইটভাটার কোনটাতেই নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। ইটভাটা মালিকরা নানা কৌশলে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করছেন। বছরে কয়েকবার পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে অভিযান চালিয়ে শুধুমাত্র রাস্তার পাশে অবস্থিত কয়েকটি ভাটা মালিকের জরিমানা করলেও অনেকেই থেকে যান অধরা। এছাড়াও যে কয়েকটি ভাটায় জরিমানা করা হয় সে জরিমানার টাকা সমস্ত ইট ভাটা মালিকরা সমভাবে ভাগ করে দেন সমিতির মাধ্যমে। পরিবেশ অধিদপ্তর ও ইটভাটা মালিকদের অদৃশ্য সমঝোতায় ভাটা পরিচালনা করা হচ্ছে বলেও জনশ্রুতি রয়েছে।
উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে জনবসতি এলাকায় ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে। জনবসতি এলাকার ইটভাটাগুলি থাকে ধরা ছোয়ার বাইরে। অনেক ইটভাটায় কয়লার বদলে পুড়ানো হচ্ছে কাঠ। কাঠ পুড়ানোর জন্য মিলেই স্থাপন করা হয়েছে মিনি করাত কল। আইন থাকলেও প্রয়োগ না থাকায় জনমনে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন ।
প্রাপ্ত তথ্যমতে গাংনী উপজেলায় কয়েক বছরে মোট ৫৮ টি ইটভাটা গড়ে উঠেছিল। বেশীরভাগ ইটভাটায় পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে বৈধতার কোন কাগজ পত্র নাই। গত বছরে বেশ কয়েকটি ইটভাটা বন্ধ হওয়ায় বর্তমানে ৪৮টি ইটভাটা চালু রযেছে। যা গাংনী পৌরসভাসহ উপজেলার অন্যান্য অঞ্চলে অবস্থতি রয়েছে। প্রভাবশালী রাজনীতিকরা প্রশাসনের অনুমতি না নিয়ে ক্ষমতার জোরে ইটভাটা তৈরী করছে। ভাটার চিমনি তৈরীতে সরকারী নির্দেশনা থাকলেও ইটভাটা মালিকরা ১২০ ফুটের পরির্বতে কোন কোন জায়গায় ৮৫ ফুট,৬০ফুট ৪০ফুট চিমনি ব্যবহার করছে। ইটভাটায় কাঠ জ¦ালানী নিষিদ্ধ থাকলেও ইটভাটা মালিকরা আইনের তোয়াক্কা না করে ভাটার পাশেই করাত কল স্থাপন করে গাছ ফাড়াই করে জ¦ালানী হিসেবে ব্যবহার করছেন দেদারছে।
সরকারী নির্দেশ ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৮৯ ও ২০০১ সনের ১৭নং অনুচ্ছেদের ৪ ও ৫ ধারায় উল্লেখ রয়েছে যে,আবাদি জমিতে কোন ইটভাটা তৈরী করা যাবেনা। ১২০ফুট উচুঁ চিমনি ব্যবহার করতে হবে এমন নির্দেশনা থাকলেও তা মানা হয়নি গাংনী উপজেলার কোন ইটভাটাতে।
সরকারী নির্দেশনা উপেক্ষা করে ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি এনামুল হকসহ গাংনী পৌর এলাকার মালসাদহ গ্রামের আবাদি সবজি জমিতে ইটভাটা নির্মান করে অবৈধ ভাবে কয়লার বদলে পোড়াচ্ছে কাঠ। ইটভাটা স্থপান করার ফলে রাস্তার পার্শের অনেক গাছ গাছালি মারা গেছে।
গাংনী থানা হয়ে ধানখোলা রোডে রাস্তার পার্শ্বে রাস্তা দখল করে গড়ে তুলেছে ইটভাটা। ফলে যেকোন মুহুর্তে ঘটতে পরে দুর্ঘটনা। ইটভাটায় চালিত ইট বহনকারি ট্রলিগুলির চালকরা হচ্ছেন বেশিরভাগই অপ্রাপ্ত বয়স্কো। এসকল ইট বহনকারি ট্রলি বিভিন্ন সড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। ইট বহনারি ট্রলির চাপায় শিশুসহ অনেকেই নিহত হওয়ায় ঘটনাও অনেক বেশি।
আর এ সকল ইটভাটায় প্রতিদিন জ্বালানী কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। আর এসব কাঠের উৎস সংরক্ষিত বা গৃহস্থালীর বাগান। ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় এলাকার পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। ছড়াচ্ছে বিভিন্ন রোগবালাই। এতে পরিবেশ যেমন নষ্ট হচ্ছে,তেমনি নষ্ট হচ্ছে আবাদী জমি, উজাড় হচ্ছে গাছ পালা, ভারসাম্য হারাচ্ছে প্রকৃতি। ইটভাটার আশপাশের আবাদি জমির মালিকরা ফসল ফলাতে পারছেন না তাদের জমিতে।
সচেতন মহলের অভিযোগ, যেখানে সেখানে ইটভাটা তৈরী হওয়ায় আবাদী জমিগুলো নষ্ট হচ্ছে। একটি ইটভাটা তৈরী করতে কমপক্ষে ৭/৮ একর জমির প্রয়োজন হয়। অনেক সময় মাটির প্রয়োজন হলে এলাকার লোকজনের কাছ থেকে আবাদি জমির উপরের এক থেকে দেড়ফুট মাটি কেটে ইট তৈরী করে।এতে ফসলী জমির উর্বরা শক্তি নষ্ট হয়। শুধু তাই নয়, ইটভাটার নির্গত কালো ধোঁয়ায় এলাকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে ও আবাদি জমির ফসল নষ্ট হচ্ছে।কোন ইটভাটায় অনুমতিপত্রের শর্তানুযায়ী এক টুকরা কয়লা ব্যবহার করা হয় না। ব্যবহার করা হয় কাঠ। বিশেষ করে ফলজ ও বনজ বৃক্ষ ছাড়াও বাঁশের মোথা ব্যবহারের ফলে বাঁশঝাড় উজাড় হচ্ছে।
সরকারী নির্দেশনা উপেক্ষা করে এসকল ইটভাটায় কয়লার বদলে কাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে। মাঝে মধ্যে প্রশাসনের লোকজন জরিমানা আদায় করলেও ইটভাটা বন্ধ করেনা। ফলে প্রভাবশালীরা প্রতি বছর নতুন নতুন ইটভাটা তৈরী করছে।
গাংনী উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি এনামুল হক জানান, সরকারী ভাবে কাঠ পোড়ানো নিষেধ রয়েছে তার পরেও আমরা কাঠ জ্বালানী হিসাবে ব্যবহার করছি। পার্শ্ববর্তী কুষ্টিয়া জেলার বিভিন্ন ইটভাটায় কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। এছাড়াও বিভিন্ন মিলে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। বাংলাদেশে সবজায়গায় অনিয়মের মাধ্যমে কাজ চলছে ।
গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সু-প্রভা রানী জানান, ইটভাটায় নির্গত কালো ধোঁয়ায় মানুষের শ্বাসকষ্ট, হাপানি, ক্যান্সারসহ নানা রোগের সৃষ্টি হয়। তাছাড়া অতিরিক্ত কার্বণ-ডাই অক্সাইডের কারণে ফসল ও এলাকার পরিবেশ নষ্ট হয়। অনতি বিলম্বে পরিবেশ রক্ষায় প্রশাসনিক পদক্ষেপ জরুরী।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রীতম সাহা বলেন, ইটভাটায় করাত কল স্থাপন করা হয়েছে এমন তথ্য আমার কাছে নেই। তাছাড়া পরিবেশ অধিদপ্তর কয়েকদিন আগে মেহেরপুর সদরে অভিযান চালিয়ে জরিমানা করেছে। গাংনীতেও পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযান হবে।