মেহেরপুরের গাংনীর করমদিতে ছোট ভাই মোজাম্মেল হকের জমি রেজিষ্ট্রি করে বাড়ি থেকে বিতাড়িত করেছেন আপন বড় ভাই মোফাজ্জেল হক।
শুধু জমিই নেয়নি, বড় ভাই মোফাজ্জেল হকের বিরুদ্ধে মাঝে মাঝে শারীরিক নির্যাতনের অভিযাগ করেছে ছোট ভাই মোজাম্মেল হক। মারধর করে জমি লিখে নিয়ে বাড়ি থেকে বিতাড়িত করায় সব হারিয়ে ছোটভাই এখন অন্যের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।
জানাগেছে,মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার করমদি সাহাবুর পাড়ার মৃত রমজান আলীর তিন ছেলে ও তিন মেয়ে। বড় ছেলে মোফাজ্জেল হক,মেজ ছেলে তোফাজ্জেল হক ও ছোট ছেলে মোজাম্মেল হক। ছোট ছেলে মোজাম্মেল হক অনেকটাই মানসিক ভারসাম্যহীন। পিতা মামতার মৃত্যুর পর মোজাম্মেল অসহায় জীবন যাপর করতো। বড় ভাই মোফাজ্জেল ছোট ভাইয়ের ভরনপোষনের সব দায়িত্ব নেন। কয়েকবছর পর ছোট ভাইকে হাসপাতালে নিয়ে যাবার কথা বলে বছর কয়েক আগে করমদি মৌজার ২২৪২ খতিয়ানের ১৫২০ দাগের আড়াই শতক জমি রেজিষ্টি করে নেয় বড় ভাই মোফাজ্জেল হক।
জমি নেয়ার পর থেকে মোজাম্মেল হককে শারীরীক ও মানষিকভাবে নির্যাতন শুরু করেন বড় মোফাজ্জেল হক। এক পর্যায়ে মারধর করে বাড়ি থেকে বিতাড়িত তরে দেয় ছোট ভাই মোফাজ্জেল হককে। সব হারানো মোজাম্মেল এখন অন্যের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। মিলছেনা একটু মাথা গোজার ঠাঁই।
ভুক্তভোগী মোজাম্মেল হক জানায়, জমি নেয়ার আগে আমাকে ভালবাসতো। এখন আমাকে খেতে দেয়না। গরুর গোয়ালে ঘুমাতে দেয়। গরমে কষ্ট করলেও বিদ্যুৎ বিল বেশি হবে বলে ফ্যাল চালাতেও দেয়না। আমি খাবার চাইলে আমাকে মারধর করে। গত শনিবার আমাকে আমার বড় ভাই মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন।
মোজাম্মেল হকের মেজভাই তোফাজ্জেল হক জানায়, আমার ছোট ভাইটি শিশু কাল থেকে মানসিক ভারসাম্যহীন নির্বোধ। আমাদের ছোট রেখে বাবা মা মারা যায়। আমার বাবার নামে জমি জমা ছিলনা। মায়ের নামে জমি ছিল। মা বাবর মৃত্যুর পর পারিবারিকভাবে ছোট ভাইকে বড় ভাইয়ের কাছে রেখেছিলাম। শর্ত সাপেক্ষে ছোট ভাইয়ের অংশের জমি বড় ভাই ভোগ করবেন। কিন্তু বড় ভাই প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ছোট ভাইকে বোকা পেয়ে বাড়ির সব জমি লিখে নিয়েছে। এবং ছোট ভাইকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা এখন সেই জমি ফেরত চাই।
স্থানীয় ইউপি সদস্য তোহিদুল ইসলাম জানায়, বিষয়টি মিমাংসা করার জন্য গ্রামে সালিশ করা হলে সালিশে বড় ভাই মোফাজ্জেল উপস্থিত না হওয়ায় সমাধান করা হয়নি। তিনি আরো বলেন, ছোট ভাই মোজাম্মেল যেহেতু পাগল সেহেতু তার দায়িত্ব যখন জমির বিনিময়ে নিয়েছিল বড় ভাই এখন যেহেতু তাড়িয়ে দিয়েছে এবিষয়ে আইন অনুযায়ী যে সহযোগীতা প্রয়োজন তা করা হবে।
এবিষয়ে বড়ভাই মোফাজেজল হকের সাথে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি জানান, আমি কারো জমি লিখে নিইনি। আমি ছোট ভাইবোনদের মানুষ করেছি। আমার মায়ের নামে যে জমি ছিল তা আমি প্ররিশ্রম করে কিনেছিলাম। তারা এখন আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। কয়েকদিন আগে আমাকে আমার মেজভাই তোফাজ্জেল ও ছোট ভাই মোজাম্মেল মারধর করে একটি হাত ভেঙ্গে দিয়েছে। আমি এখন মেহেরপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছি। আমার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করলে সাংবাদিকের নামে মামলা করারও হুমকি দেন তিনি।
এবিষয়ে তেঁতুলবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুল হুদা বিশ্বাস বলেন, মোফাজ্জেল একজন নির্বোধ মানুষ। জ্ঞান শক্তি কম। তাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেবার বিষয়টি খুবই হৃদয় বিদারক ও মানবিক। এবিষয়ে ভুক্তভোগীর পক্ষে কেউ বিচার চাইলে আমি আইনের মধ্যে থেকে যতটুকু পারি সহায়তা করবো।
গাংনী থানার তদন্ত অফিসার মনোজিৎ কুমার নন্দি বলেন, এটি মানবিক বিষয়। নির্বোধ পেয়ে ছোট ভাইয়ের সাথে আপন বড় ভাই প্রতারণা করেছেন। বিষয়টি আদালতের আশ্রয় নেয়া প্রয়োজন।