গাংনীর কাথুলী গ্রামের মধ্য পাড়ায় ছাগলে একটি গাছ খাওয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ অগ্নীসংযোগ ও শ্লীলতা হানীর ঘটনায় চারটি পরিবারের মধ্যে চলছে নানা উত্তেজনা ও মামলাবাজি। চারটি পরিবার দফায় দফায় একে অপরের বিরুদ্ধে মোট সাতটি মামলা করেছে। রয়েছে একটি জিডির ঘটনা। গ্রাম্য প্রতিহিংসায় মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দফায় দফায় হয়রানী করা হচ্ছে এমন দাবী তুলে সংবাদ সম্মেলন করেছে ভুক্তভোগী আব্দুল মজিদ। শনিবার সকালে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন আব্দুল মজিদ।
পরিবার চারটি সকলেই নিজেদেরকে নির্দোষ দাবী করলেও পুলিশ বলছে, মামলাটি তদন্তে একটি পরিবারকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর খেলায় মেতেছে অন্য দুটি পরিবার। তাছাড়া আরো একটি মামলা তদন্ত করা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানায় , গ্রামের আব্দুল মজিদের বাড়ির পাশে লাগানো ধুন্দুল গাছ খেয়ে ফেলে প্রতিবেশী আমিরুলের স্ত্রী মেমেজানের ছাগলে। এ নিয়ে উভয় পরিবারের মধ্যে ঝগড়া ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে আমিরুল ইসলাম বাদি হয়ে আব্দুল মজিদের ভাই আব্দুর রহমান ওরফে খোকনের নামে মামলা করেন মেহেরপুর আদালতে। ওই মামলার ইন্ধন দাতা প্রতিবেশী হাফিজুল ও তার স্ত্রী মেমেজান। এ নিয়ে চারটি পরিবারের মধ্যে মামলা ও জিডির ঘটনা ঘটেছে সাতটি।
সর্বশেষ গত বুধবার মধ্যরাতে হাফিজুলের বাড়ির পাশে রক্ষিত পাটকাঠির গাঁদায় আগুন লাগে। এতে হাফিজুলের পাঠকাঠির সাথে মজিদের দোকান ঘর পুড়ে যায়। আব্দুল মজিদকে আবারো মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর জন্য নিজের পাটকাঠির গাদায় নিজে আগুন লাগিয়ে হৈচৈ শুরু করে হাফিজুল ও তার স্ত্রী মোমেজান। পরে স্থানীয়রা ছ’টেগিয়ে পানি ঢেলে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এঘটনায় আবারো আব্দুল মজিদের বিরুদ্ধে মামলার হুমিকি দিচ্ছে হাফিজুল ইসলাম। আবারো নতুন মামলার ভয়ে আতংকিত আব্দুল মজিদ ও তার পরিবারের লোকজন।
এ নিয়েও উভয় পক্ষের মধ্যে চলছে উত্তেজনা। যে কোন সময় বড় ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশংকা করছেন স্থানীয়রা।
আব্দুল মজিদ জানান, তার বাড়ির পাশের ধুন্দল গাছ খেয়ে ফেলে প্রতিবেশী আমিরুলের স্ত্রী মেমেজানের ছাগলে। এ নিয়ে উভয় পরিবারের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এরই জের ধরে মেমেজান বাদী হয়ে তার ভাই আব্দুর রহমান ওরফে খোকনকে বিবাদী করে মোকাম বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল মেহেরপুরে একটি মামলা করেন। যার নম্বর- ১০৯/২০২২, তাং ০৫/০৭/২২ ইং। মামলায় দাবী করা হয়, মেমেজানকে ধর্ষন করার চেষ্টা করা হয়। একই দিনে মেমেজানের স্বামী আমিরুল ইসলাম আরো একটি মামলা করেন। ওই মামলার এজাহারে দাবী করা হয়, তার স্ত্রীকে মারধর করে শ্লীলতা হানীর পাশাপাশি আব্দুল মজিদ ও তার লোকজন মেমেজানকে ব্যাপক মারপিট করে হত্যার চেষ্টা চালায়।
বিজ্ঞ আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে গাংনী থানা পুলিশকে তদন্ত দিলে পুলিশ ধর্ষনের চেষ্টা ও মারপিটের কোন ঘটনা ঘটে নাই বলে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। এতে না রাজি দেন মেমেজান। পরে মামলাটির তদন্ত দেয়া হয় পিবিআইকে। পিবিআই এর তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই ইমরান হোসেন ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে শ্লীলতা হানী ও মারপিটের ঘটনা মিথ্যা বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন।
এদিকে আমিরুল ইসলাম ও তার স্ত্রীর মামলায় উস্কানী ও ইন্ধন দাতা হিসেবে সন্দেহ করে প্রতিবেশী হাফিজুল ইসলাম ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে গাংনী থানায় একটি জিডি করেন আব্দুল মজিদ। এ ঘটনায় গাংনী থানা পুলিশ চার পরিবারকে থানায় হাজির হবার জন্য নোটিশ প্রদান করলে আবারো উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় হাফিজুলের স্ত্রী মেমেজান ০২ নভেম্বর বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আব্দুল মজিদসহ পাঁচজনকে আসামী করা হয়। আসামী থেকে বাদ পড়েনি বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসা মজিদের মেয়ে জোসনা খাতুন।
মামলায় বাদীকে মারপিট শ্লীলতাহানী ও তার গায়ের গহনা লুট করার অভিযোগ করা হয়। মামলাটি গাংনী থানায় তদন্তাধীন। মামলাটি সম্পুর্ণ মিথ্যা বলে দাবী করেছেন আব্দুল মজিদ ও তার লোকজন।
গ্রামবাসীরাও হাফিজুলের অত্যাচারে অতিষ্ট রয়েছে। হাফিজুলের মামলার ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাইনা। সংবাদ সম্মেলনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি,এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগী পরিবারের লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
বাদী হাফিজুল ইসলামের স্ত্রী মেমেজান জানান, ১২ বছর আগে জমি জমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে মামলা চলছিল। এরই জের ধরে ও প্রতিবেশীদের মামলার ইন্ধন দাতা হিসেবে সন্দেহ করে তার শ্লীলতা হানী মারপিট ও গহনা ছিন্তাই করা হয়েছে। পরে আমার ৬ বিঘা জমির পাটকাঠি পুড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ করেন হাফিজুল ইসলাম।
গাংনী থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক জানান, মামলা পাল্টা পাল্টি মামলার ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে। প্রকৃত ঘটনার প্রতিবেদন আদালতে পেশ করা হবে।