মেহেপুরের গাংনী উপজেলার গাড়াবাড়িয়া গ্রামে স্বর্ণালী সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের কাছে থেকে কয়েক কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করে উধাও হওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
গাড়াবাড়িয়াসহ আশেপাশের কয়েকটি গ্রামের মানুষকে অতিরিক্ত লাভ দেখিয়ে গ্রাহক তৈরি করে কয়েক বছর ধরে অবৈধভাবে এ আমানত সংগ্রহ করতে প্রতিষ্ঠানের প্রধান (সভাপতি) মাহিরুল ইসলাম। আমানতের পরিমাণ সঠিক করে বলতে না পারলেও কয়েক কোটি টাকা হবে ধারণা করছেন গ্রাহকরা। কয়েকদিন ধরে প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে মাহিরুল ইসলাম গা ঢাকা দিয়েছেন।
বুধবার দুপুরে ওই সমিতিতে অনেক গ্রাহকের লাভের টাকা নিতে এসে অফিস বন্ধ থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে সেখানে জমায়েত হন।
গাড়াবাড়িয়া গ্রামে মাছের ব্যবসা করেন সবুর আলী। অতিরিক্ত লাভ পাবার আশায় স্বর্ণালী সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতিতে ৬ লাখ টাকা ডিপোজিট করেছিলেন। কয়েক মাস লাখে এক হাজার ৬শ টাকা করে লাভও পেয়েছেন। কিন্তু গত মাসে তাকে আর লাভ দেওয়া হয়নি। এদিকে হঠাৎ করে গত মঙ্গলবার থেকে অফিস বন্ধ থাকায় তিনি পড়েছেন বিপাকে।
সবুর আলীর মত অতিলোভে একই প্রতিষ্ঠানে টাকা জমা করেছেন রবিউল ইসলাম ৩ লাখ ৭০ হাজার, ফিরোজ হোসেন সাড়ে ৩ লাখ, জারাফত আলী (অবসরপ্রাপ্ত পিয়ন) ২ লাখ, জলিল মণ্ডল ৪ লাখ ৩০ হাজার, তোজাম্মেল হক ১ লাখ টাকা, আব্দুস সাত্তার ৪ লাখ , হানুফা বেগম রেখেছেন ৬০ হাজার টাকা। এধরণের শত খানেক মানুষকে গ্রাহক বানিয়ে তাদের কাছে থেকে কয়েক কোটি টাকা সংগ্রহ করেছেন প্রতিষ্ঠান প্রধান মাহিরুল ইসলাম।
এ বিষয়ে স্বর্ণালী সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির সভাপতি মাহিরুল ইসলামের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
স্বর্ণালী সঞ্চয় ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেডের মাঠকর্মী সাহারুল ইসলাম বলেন, তিনি মাঠকর্মী হিসেবে কাজ করতেন। সংস্থার পরিচালক মাহিরুল ইসলাম সব লেনদেন করতেন। এখন মাহিরুলকে তারাও খুঁজে পাচ্ছেন না।
স্থানীয়রা জানান, গাংনী উপজেলার মটমুড়া গ্রামের মাহিরুল ইসলাম ২০১৬ সালে স্বর্ণালী সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি নামের ওই প্রতিষ্ঠানটি গাড়াবাড়িয়া গ্রামে কার্যক্রম শুরু করে। প্রথম থেকেই তারা স্থানীয় কয়েকজনকে নিয়োগ দেয় কর্মী হিসেবে। বিভিন্ন দোকানে দোকানে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঋণ দিয়ে প্রতিদিন সেই ঋণের কিস্তি আদায় করে থাকে। কিন্তু ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক মাহিরুল ইসলাম গোপনে অতিরিক্ত লাভ দেওয়ার কথা বলে গ্রাহকদের কাছে থেকে টাকা নিয়ে ডিপোজিট করতো এটা স্থানীয় কেউ জানতো না। গত দুদিন ধরে প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বিষয়টি এলাকার মানুষ জানতে পেরেছে।
গাংনী উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মাহবুবুল হক মন্টু বলেন, স্বর্ণালী সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির মেহেরপুর জেলা কার্যালয় থেকে ২০১৩ সালে নিবন্ধন পেয়েছে। গত অডিট রিপোর্টে তাদের সঞ্চয় দেখানো হয়েছে ১০ লাখ ৩৪হাজার ৬৮০ টাকা, ঋণ দেখানো হয়েছে ১৪ লাখ ৪ হাজার ২৮৬ এবং শেয়ার দেখানো হয়েছে ৩৫ হাজার ৬শ টাকা। সদস্য সংখ্যা ১১৮ জন।
তিনি বলেন, সমবায় থেকে নিবন্ধন নেওয়া কোন প্রতিষ্ঠান আমানত সংগ্রহ (এফডিআর) করতে পারেন না। যেটা কাউকে না জানিয়ে অবৈধভাবে ওই প্রতিষ্ঠান করেছে। গ্রাহকের টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে প্রতিষ্ঠানের দেওয়া সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করা হলে দুটি নম্বরই বন্ধ পাওয়া গেছে। বিষয়টি জেলা কার্যালয় ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানানো হয়েছে।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, বিষয়টি শুনেছি। তবে ক্ষতিগ্রস্থদের মধ্যে থেকে কেউ লিখিত বা মৌখিকভাবে কোন অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে ওই প্রতিষ্ঠানে বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।