মেহেরপুরে চাঞ্চল্যকর পুলিশ কনস্টেবল আলা উদ্দীন হত্যা মামলায় ৪ আসামির যাবজ্জীবন জেল দিয়েছেন আদালত।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ১২ টার সময় এক জনাকীর্ণ আদালতে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ রিপতি কুমার বিশ্বাস এ রায় ঘোষণা করেন।
একই আদালত একই ঘটনায় অপর একটি মাদক মামলায় আসামিদের ৭ বছর কারাদন্ড, ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরো ৩ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেন। মামলায় বাকি ২ আসামিকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।
দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলার বলিদাপুর গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে সোহেল (৪৫), মৃত জামাত আলীর ছেলে রুবেল (২৮), সোনা উল্লাহর ছেলে শাকিল হোসেন (২৮) ও কালু মন্ডলের ছেলে আনিচ (৩৫)।
খালাসপ্রাপ্তরা হলেন- কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার ধর্মদহ গ্রামের আব্দুস সামাদের ছেলে আবু বকর সিদ্দিক ও একই গ্রামের আজাহার আলীর ছেলে আতিয়ার রহমান।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ২৪ জুলাই সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গাংনী উপজেলার সাহেবনগর তালতলা মোড় নামক স্থানে পিরতলা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এএসআই সুবীর রায় ও তার সঙ্গীয় ফোর্সসহ মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনা করেন।
এসময় কাজিপুর থেকে একটি সাদা মাইক্রোবাস আসতে দেখে পুলিশের ওই দলটি গাছের গুড়ি রাস্তায় ফেলে মাইক্রোবাসটিকে গতিরোধ করে। এসময় নিজেদের গায়ে টর্চের আলো ফেলে পুলিশ পরিচয় দিয়ে মাইক্রোবাসের চালককে নেমে আসতে বলেন।
পরে ফেনসিডিল বহণকারী মাইক্রোবাসটি বিপরীত দিকে চালিয়ে পালানো চেষ্টা করে। এসময় কনস্টেবল আলাউদ্দীন তার রাইফেলের বাট দিয়ে চালকের সামনের কাচ ভেঙ্গে দেন।
এসময় মাইক্রোবাসটি থেমে যায়। পরে পুলিশের কনেস্টবল আলাউদ্দীনকে তারা ধাক্কা দিয়ে মাইক্রোবাসের বাম্পারের সাথে বাধিয়ে টেনে ছেঁচড়িয়ে প্রায় দেড় কিলোমিটার দুরে হাড়াভাঙ্গা মাদ্রাসার সামনে নিয়ে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।
পরে তাকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ৯টার সময় মারা যান তিনি।
পরের দিন ২৫ জুলাই সকালের দিকে কুষ্টিয়ার মিরপর উপজেলার বলিদাপাড়া থেকে ওই মাইক্রোবাসটি (যার নং কুষ্টিয়া-চ-০২-০০১১) মামলার প্রধান আসামি আনিছ বাড়ির পাশে একটি বাঁশ বাগান থেকে জব্দ করা হয়। এসময় মাইক্রোবাসের সীটের নিচ থেকে ৫০ বোতল ফেনসিডিল জব্দ করা হয়।
এ ঘটনায় পরের দিন ২৫ জুলাই পিরতলা পুলিশ ক্যাম্পের তৎকালিন আইসি সুবীর রায় বাদী হয়ে এ ঘটনায় ১৯৭৪ সালের স্পেশাল ক্ষমতা আইনে হত্যা ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গাংনী থানার তদন্ত অফিসার মুক্তার আলী ২০১৫ সালের ২৯ ডিসেম্বর ৬ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। হত্যা মামলায় ১৬ জন এবং মাদক মামলায় ১২ জন সাক্ষী সাক্ষ্য প্রদান করেন।
মামলায় সরকার পক্ষে অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর কাজী শহিদুল হক এবং আসামী পক্ষে মারুফ আহম্মেদ বিজন, কামরুল হাসান ও খন্দকার আব্দুল মতিন আইনজীবীর দায়িত্ব পালন করেন।
সরকার পক্ষের আইনজীবী কাজী শহিদুল হক বলেন, মামলার নথিপত্র পর্যালোচনা ও স্বাক্ষীদের সাক্ষ্যে দোষী প্রমাণিত হওয়ায় বিজ্ঞ বিচারক ৪ জন আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদÐ দিয়েছেন বিজ্ঞ আদালত। এটা ন্যায় বিচারের একটি প্রতীক হয়ে থাকবে।
আসামী পক্ষের আইনজীবি অ্যাডভোকেট মারুফ আহমেদ বিজন বলেন, রায় ভাল হয়েছে। তবে মামলার তদন্তকারী অফিসার যথেষ্ট ত্রুটি রেখে চার্জশীট দিয়েছেন। আমরা পরবর্তিতে উচ্চ আদালতে যাবো।