নির্ধারিত সময়ের ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত গাংনী উপজেলার তেঁতুলবাড়িয়া, কাজিপুর ও সাহারবাটি ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচন করা হয়নি। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ও প্যানেল ঠিক করে দেয়নি। চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে কে দায়িত্ব পালন করবেন, তা সুনির্দিষ্ট নেই এই ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে। তবে, চেয়ারম্যানরা বলেছেন সামনের সপ্তাহের মধ্যেই চেয়ারম্যান প্যানেল নির্বাচন করে নেবো।
একাধিক সাধারন সদস্য ও সংরক্ষিত নারী সদস্যপদর (মেম্বর) অভিযোগ, চেয়ারম্যানরা চান না, এ কারণে চেয়ারম্যান প্যানেল নির্বাচন করা হয়নি। তবে, কয়েকজন চেয়ারম্যান দাবি করেছেন, মেম্বররা কেউ এ বিষয়ে কোনো প্রস্তাবও করেননি। যে কারণে এই নির্বাচন করা হয়নি।
সাহারবাটি ও তেঁতুলবাড়িয়া ইউনিয়নের একাধিক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পরিষদের বেশির ভাগ সিদ্ধান্ত চেয়ারম্যান নিজে এককভাবে নেন। মেম্বরদের তেমন কিছু বলার থাকে না। অনেকে ইচ্ছা করেই চুপ থাকেন।
চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে দায়িত্ব পালন করার জন্য চেয়ারম্যান প্যানেল নির্বাচন করে রাখা হয়। এই প্যানেলটি তিন সদস্যের এই প্যানেল নির্বাচনের আইনি বাধ্যবাধকতা আছে।
স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯ এর ৬১ নং আইনের (১) উপধারায় বলা আছে পরিষদ গঠিত হওয়ার পর প্রথম অনুষ্ঠিত সভার ত্রিশ কার্য দিবসের মধ্যে অগ্রাধিকারক্রমে তিন সদস্যের চেয়ারম্যান প্যানেল, সদস্যগণ তাদের মধ্যে থেকে নির্বাচন করবেন। তবে তিন সদস্যের গঠিত চেয়ারম্যান প্যানেলের মধ্যে একজন সংরক্ষিত নারী সদস্য থাকতে হবে।
চেয়ারম্যান প্যানেল নির্বাচিত না হলে সরকার চেয়ারম্যান প্যানেল মনোনীত করবে। অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালন করতে না পারলে বা অনুপস্থিত থাকলে চেয়ারম্যানের প্যানেল থেকে জ্যেষ্ঠতার ক্রমানুসারে একজন সদস্য চেয়ারম্যানের সব দায়িত্ব পালন করবেন। পদত্যাগ, অপসারণ বা মৃত্যুজনিত কারণে চেয়ারম্যান পদ শূন্য হলে নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত চেয়ারম্যান প্যানেলের কোনো সদস্য চেয়ারম্যানের সব দায়িত্ব পালন করবেন।
গত বছরের ২৮ নভেম্বর গাংনী উপজেলার কাজিপুর, তেঁতুলবাড়িয়া ও সাহারবাটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে সাহারবাটি ইউনিয়নে মশিউর রহমান, কাজিপুর ইউনিয়নে মু. আলম হুসাইন ও তেঁতুলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের নাজমুল হুদা বিশ্বাস পচু চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এসব চেয়ারম্যান সদস্যগণ, শপথ নেওয়ার পর নিজ নিজ পরিষদের দায়ীত্ব গ্রহণ করেন।
কাজিপুর ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের সদস্য মো: সাইদুর রহমান জানান, চলতি বছরের ১ জানুয়ারী কাজিপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। এযাবৎ পর্যন্ত আমাদের ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্যানেল নির্বাচন করা হয়নি। আমাদের পরিষদের কয়েক জন মেম্বর বার বার চেয়ারম্যানকে বলেছেন। চেয়ারম্যান আলম হুসাইন চেয়ারম্যান প্যানেল নির্বাচন করেন নি।
একই ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের সাধারণ সদস্য আজিজুল হক বলেন, মেম্বররা চেয়ারম্যানকে প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচন করার কথা বলেছেন। কিন্তু প্রায় ৬ মাস হয়ে গেলেও এই প্যানেল এখনও গঠণ হয়নি।
সাহারবাটি ইউনিয়নের ৭,৮,৯ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী সদস্য ফেরদৌসী খাতুন জানান, চেয়ারম্যান সাহেব আমাদের চেয়ারম্যান প্যানেল গঠণ করার কথা বলেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমি তা জানিনা।
একই ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নং ওয়ার্ডের সদস্য আনারুল ইসলাম জানান, ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান গঠণের জন্য আমরা মেম্বররা অনেকবার বলেছি। কিন্তু চেয়ারম্যান সেটা আজও করেনি। আমরা বিষয়টি ইউএনও কেও জানিয়েছি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।
সাহারবাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মশিউর রহমান বলেন, কয়েক দিন আগে সিদ্ধান্ত হয়েছে চেয়ারমান প্যানেল নির্বাচন করার। ২২ তারিখে ঢাকাতে মিটিং শেষ করে এসেই চেয়ারম্যান প্যানেল নির্বচান করে নিবো।
তেঁতুলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নাজমুল হুদা বিশ্বাস বলেন, চেয়ারম্যান প্যানেল এখনো করা হয়নি। তবে, সামনে সপ্তাহের মধ্যেই চেয়ারম্যান প্যানেল করে ফেলবো। আমার ছেলে অসুস্থ থাকার কারণে, আমি খুব বেশী মনোনিবেশ করতে পারিনি বিষয়টি নিয়ে।
কাজিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মু. আলম হুসাইনকে প্রশ্ন করা হলে তিনি অকপটেই শিকার করে বলেন “এটা করা হয়নি”। চেয়ারম্যান প্যানেল বাধ্যবাধকতা আছে তাহলে আপনি করেননি কেনো এমন প্রশ্নের জবাব দিতে পারেন নি তিনি। গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জিজ্ঞাসা করেই চেয়ারম্যান প্যানেল নির্বাচন করা হবে বলেও জানালেন তিনি। তবে কবে নাগাদ চেয়ারম্যান প্যানেল করা হবে সে তারিখও জানাতে পারেননি তিনি।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) মেহেরপুর জেলার সম্পাদক সৈয়দ জাকির হোসেন বলেন,স্থানীয় সরকার আইন করা হয়েছে জনপ্রতিনিধিদের ক্ষমতাকে সম্মানিত করার জন্যই। শপথ নেওয়ার পর একজন চেয়ারম্যানকে অবশ্যই আইন অনুসরণ করতে হবে। প্যানেল নির্বাচন না করে আইন অমান্য হয়েছে।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমী খানম বলেন, আমি এসব চেয়ারম্যানদের প্যানেল চেয়ারম্যান গঠণের জন্য আনুমানিক ২ মাস আগে চিঠি দিয়েছি। চেয়ারম্যান প্যানেল গঠণ করে তাদের রেজুলেশন কপি জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া ছিল। কিন্তু আজও পর্যন্ত সেটা দেইনি তারা। এরপর আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে ওই চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে।