জীবন হারানোর ভয়ে ঘর ছেড়ে এক সপ্তাহ পালিয়ে বেড়াচ্ছেন গাংনী উপজেলার ভোলাডাঙ্গা গ্রামের দিনমজুর বৃদ্ধ আবুল কাশেম।
তার একমাত্র বসত ঘর ও আসবাপত্র ভাংচুর করেছে ইসমাইল হোসেন ও তার লোকজন। ভাত ও তরকারি রান্নার হাড়িও রক্ষা পাইনি হামলাকারিদের হাত থেকে। ইসমাইল হোসেনের লোকজন জোরপুর্বক জমিদখল করাকে কেন্দ্র করে এমন হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী পরিবারের। এতে দু’পক্ষের হামলায় ৬জন আহত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বৃদ্ধ আবুল কাশেমের দিন কাটছে আতংক আর হতাশা নিয়ে। পুলিশের সহায়তা চেয়ে কাংখিত সুরাহা পাচ্ছেন না অভিযোগ করেন কাশেম। প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চান স্থানীয়রাও।
জানাগেছে,ভোলাডাঙ্গা গ্রামের দিনমজুর আবুল কাশেম ৩০ বছর আগে স্থানীয় মৃত বাদশা মলিথার তিন ছেলে আক্তার, রবিউল হক ও হাসানের কাছ থেকে ১২ কাঠা জমি ক্রয় করে বসবাস করছেন। উক্ত জমি বাদশা মালিথার বড় ছেলে ইসমাইল হোসেন তার দাবী করে জবর দখল করার চেষ্টা করে। এতে আবুল কাশেম ও তার ছেলে বাধা দিলে তাদের মারধর করে এবং বাড়িঘর ও আসবাপত্র ভাংচুর করে। ইসমাইল ও তার লোকজনের হামলায় ছোট ভাই আক্তার, রবিউল হক ও হাসানকে রামদা দিয়ে কুপিয়ে জখম করে। আহতরা কুষ্টিয়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এসময় সংঘর্ষে ইসমাইলের দুই ছেলে তারেক আহাম্মেদ ও মশিউর রহমান আহত হয়। ইসমাইল ও তার দুই ছেলে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।
সরেজমিনে ভোলাডাঙ্গা গ্রামে দেখা গেছে, আবুল কাশেমের টিনের বেড়া দেয়া একটি ছোট্র ঝুপড়ি ঘর। সেই ঘরেই স্ত্রী সন্তান নিয়ে তার বসবাস। বয়সের ভারে নুইয়েপড়া আবুল কাশেম কাজে কর্মে অকর্মা। কেউ তাকে কাজেও নিতে চাইনা। কোন রকমে সংসার চালে তাদের। একমাত্র বসত বাড়িটিকে রামদা দিয়ে কুপিয়ে টিন গুলো ফুটো ফুটো করা হয়েছে। ঘরের মধ্যেকার আসবাপত্র ভাংচুর করা হয়েছে। ভাত ও তরকারির হাড়িপাতিলও ভেঙ্গে দুমড়ে মুচড়ে দিয়েছে হামলা কারিরা। গত বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে এমন ঘটনা ঘটে।
আবুল কাশেম জানান, আমি ৩০ বছর আগে উপজেলার হোগল বাড়িয়া গ্রাম থেকে উঠে এসে ভোলাডাঙ্গা গ্রামে বসবাস করছি। এ গ্রামে আমার আপন বলতে কেউ নেই। ইসমাইলের তিন ভাইয়ের সাথে জমি কিনেছি। ৩০ বছর পর ইসমাইল আমার বাড়ি জোর দখল করে নিতে চাই। আমরা বাধা দিতে গেলে আমাদের মারধর করে বাড়িঘর ভাংচুর করে । তার অন্যায় কাজকে বাধা দেয় তার আপন তিন ভাই। তাদেরকেউ মারধর করে রক্তাক্ত জখম করে। আমাকেও মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে। আমি এখন জীবনের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। ঘরে ফিরতে পারছিনা। এবিষয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছি। পুলিশ এপর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেইনি বলেও জানান আবুল কাশেম।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রাম বাসিদের অনেকেই ইসমাইল সম্পর্কে বলতে ভয়ে কেঁপে ওঠেন। তারা জানান, ইসমাইল খুবই দুর্ধর্ষ প্রকৃতির । গ্রামে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করাই তার কাজ। ইসমাইলের ভয়ে গ্রামের কেউ মুখ খুলতে সাহস করেনা। মামলাবাজ ইসমাইল হিসেবেও জানেন অনেকে।
ইসমাইল হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, সামাজিক কাজ করতে হলে পক্ষ বিপক্ষ থাকবেই। আমি আমার শরিকানা জমি দখল করতে গিয়েছিলাম। ভাইয়েদের সাথে মারামারি হয়েছে। এতে আমি ও আমার ছেলে দুজনেই আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছে।
হেমায়েতপুর ক্যাম্পের ইনচার্জ মাহাবুব জানান, এবিষয়ে ইসমাইলকে দোষরোপ করছেন এলাকাবাসী। তবে আবুল কাশেম থানায় অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি থানা থেকে নির্দেশনা পেলে আমি দেখবো।
গাংনী থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক জানান,আবুল কাশেম নামের এক ব্যাক্তির অভিযোগ পেয়েছি,বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে।