বাংলাদেশ জাতীয়বাদী দল বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন বলেন, এদেশে জাতীয়তাবাদি দল বিএনপি, জামায়াতসহ ছোট বড় অনেক দল রয়েছে। তাদের ভিন্ন ভিন্ন মত ও আলোচনা থাকতে পারে, কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সর্বভৌমত্ব এবং জনগণের অধিকারের প্রশ্নে আমরা যেভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি, সেই ঐক্যকে কোনোভাবে বিনষ্ট হতে দেওয়া যাবেনা।
গতকাল সোমবার বিকালে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার মঠমুড়া ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর ফার্স্ট চয়েজ মডার্ন স্কুল, হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা কর্তৃক আয়োজিত নবীনবরণ ও নবনির্মিত ভবন এর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মোহাম্মদপুর ফার্স্ট চয়েজ মডার্ন স্কুল, হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার চেয়ারম্যান রাশেদ গনির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত নবীনবরণ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, মেহেরপুর জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য ও ২ (গাংনী) আসনের সাবেক এমপি মোঃ আমজাদ হোসেন, আল্লামা দেলোওয়ার হোসেন সাঈদী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শামীম সাঈদী, কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য রেজা আহমেদ বাচ্চু, বাংলাদেশ জাতীয়বাদী দল বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির জনশক্তি উন্নয়ন বিষয়ক সহ-সম্পাদক অর্পনা রায় দাস প্রান্তি, কেন্দ্রীয় যুবদলের সাংগাঠনিক সম্পাদক ইছাহাক সরকার, গাংনী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবলু। প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক আরও বলেন, “বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে খুনি হাসিনা সরকার অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে প্রেরণ করেছিল। তাকে চিকিৎসা থেকে বঞ্ছিত করার ফলে তিনি শারীরিকভাবে শংকটাপন্ন হয়ে পড়েছিলেন।
বর্তমানে তিনি যুক্তরাজ্যে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনি সুস্থ্য হয়ে দেশে ফিরে আবারও বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়ে দেশকে গণতন্ত্রের পথে ফিরিয়ে আনবেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রখ্যাত আলেম আল্লামা দেলোওয়ার হোসেন সাঈদীকে মিথ্যা অপবাদ ও মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে চিকিৎসা বঞ্চিত করে হত্যা করা হয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বাবু গয়েস্বর চন্দ্র রায়কে পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয়েছে। খুনি হাসিনা ও আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে এবং জনগণের অধিকারকে বিশ্বাস করেনা। তারা আওয়ামীলীগের বাইরে যারা রয়েছে ,তাদেরকে মানুষ মনে করেনা, দাশ মনে করে, প্রজা মনে করে। তারা এই দেশটাকে তাদের বাবার সম্পত্তি মনে করে। তারা যা বলবে সেটাই মেনে নিতে হবে। এই দেশের অর্থ সম্পদ তাদের বাবার সম্পত্তি। সেটা যেভাবে ইচ্ছে ব্যবহার করবে, লুটপাট করে বিদেশে পাচার করবে। হাসিনার আমলের লুটপাট, জনগণের উপর অন্যায় অত্যাচার জুলুমের ফিরিস্তি তুলে ধরতে গেলে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় লাগবে। তিনি বলেন, খুনি হাসিনার পরিবারের সদস্যদের এখন বিভিন্ন দেশে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি পাওয়া যাচ্ছে। এদেশে দূর্ণীতি করে সম্পত্তি লুটপাট করে নিয়ে গেছে। লুটপাটের সেই সম্পত্তি থাকলে আজ বাংলাদেশে হাজার হাজার প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা সম্ভব হতো। এদেশের গ্রামীণ জনপদ আজ পিছিয়ে পড়া জনপদ থাকতো না। বাংলাদেশের দারিদ্রতা, অর্থকষ্ট ও অভাব দুর করা যেতো। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থ সম্পদ বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধিশালী দেশ গড়তে চাই। এটাই আমাদের ওয়াদা এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি।
ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক বলেন, ঐক্যের প্রতিক বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে ঐক্যের প্রতীক হয়ে সকল দলমত, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে এক করার ক্ষেত্রে যে পথ রচনা করেছিলেন সেই ধারাবাহিকতায় জুলাই-আগষ্ট বিপ্লব হয়েছে। জুলাই আগষ্টের গণঅভ্যুথানের মাধ্যমে আমরা যে নতুন বাংলাদেশ গড়ার সুযোগ পেয়েছি, তরুণ প্রজন্মের একজন প্রতিনিধি হিসেবে বলবো, তারেক রহমান দেশ গড়ার যে ৩১ দফা কর্মসূচি দিয়েছেন, বিএনপির সেই কর্মসূচির মাধ্যমে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হবে। ইশরাক আরও বলেন, বিগত তিনটি নির্বাচনে খুনি হাসিনা সরকার, রাস্ট্রের মালিকানা জনগণের একটি করে ভোট, খুনি হাসিনা জনগণের সেই ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছিল। শুধু ভোটাধিকার কেড়ে নেইনি, জুলাই আগস্টে তারা একটি গণহত্যা চালিয়েছে। যেখানে অন্তসত্তা নারীদেরও গুলিবিদ্ধ করা হয়েছে। হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে ৮ বছর বয়সি শিশুদেরও হত্যা করা হয়েছে। বাংলাদেশের মাটিতে এই খুনি হাসিনার দৃষ্টান্তমুলক বিচার ও সর্বোচ্চ শাস্তি হোক আমরা সেটা চাই।
খুনি হাসিনাকে বাংলাদেশে মাটিতে ফিরিয়ে এনে তাকে বিচার করে যথাযথ শাস্তি দিতে হবে। সেটি না হওয়া পর্যন্ত আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবো। যারা রাজনীতি করি তারা রাজপথে থাকবো। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর থেকেই আমাদের পার্শ্ববর্তি দেশ ভারত এদেশের উপর আগ্রাসন চালিয়ে আসছে। ভারত যে আগ্রাসন চালিয়ে আসছে সেই আগ্রাসন রুখে দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। বিএনপি, জামায়াতসহ ছোট বড় অনেক দলের ভিন্ন ভিন্ন মত ও আলোচনা থাকতে পারে, কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সর্বভৌমত্ব এবং জনগণের অধিকারের প্রশ্নে আমরা যেভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি, সেই ঐক্যকে কোনোভাবে বিনষ্ট হতে দেওয়া যাবেনা তিনি আরও বলেন, আমি রাজনীতি শুরু থেকেই সাধারণ জনগণের উপর খুনি হাসিনার অন্যায়, অত্যাচার, জুলমের প্রতিবাদ, প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি।
কোনোদিন খুনি হাসিনা ও তার দোষরদের কাছে আত্মসম্পর্ণ করিনি। এসময় তিনি জুলাই আগষ্টের সংগঠিত গণহত্যায় শহিদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা ও আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন। পরে একটি মনোঙ্গ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন বিশিষ্ট বক্তা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কবির বিন সামাদ। অনুষ্ঠানে এলাকার হাজার হাজার নারী পুরুষ যোগদান করেন।