মেহেরপুরের গাংনীতে চাঞ্চল্যকর ওয়ার্ড যুবদল নেতা হত্যার ও ২৪ ঘন্টার মধ্যে ক্লু উদ্ঘাটন ও তিন ঘাতককে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-১২ ক্রাইম প্রিভেনশন কোম্পানী-৩ মেহেরপুর ক্যাম্প।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, গাংনী পৌরসভা চৌগাছা গ্রামের রইচ উদ্দীনের ছেলে ঘড়ি ব্যবসায়ী মোঃ রবিউল ইসলাম ওরফে বিপ্লব (৩৬), গাংনী উপজেলার বাঁশবাড়িয়া গ্রামের পশ্চিমপাড়া এলাকার আব্দুল আওয়ালের ছেলে মফিকুল ইসলাম (৩৯) ও কোদাইলকাটি গ্রামের জামাত আলীরর ছেলে আলমগীরর হোসেন (৪০)।
গত বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) সন্ধ্যার দিকে গাংনী থানা মোড় এলাকার সিদ্দিক ওয়াস দোকানের সামনে থেকে বিপ্লব হোসেনকে, গাংনী কাঁচাবাজার এলাকা থেকে রাত ৯ টার দিকে মফিকুল ইসলামকে এবং রাত ১০ টার দিকে আলমগীর হোসেনকে কোদাইলকাটি গ্রামের একটি চায়ের দোকান থেকে গ্রেফতার করে র্যাব।
র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-১২) সিপিসি-৩, মেহেরপুর ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশরাফউল্লাহ, পিপিএম আজ শুক্রবার বেলা ১২ টার সময় সাংবাদিকদের প্রেস রিলিজ দিয়ে এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-১২) কোম্পানী কমান্ডার আশরাফউল্লাহ, পিপিএম বলেন, পাওনা টাকাকে কেন্দ্রকে পূর্বপরিকল্পনা মতে গাংনী পৌর যুবদলের ওয়ার্ড সভাপতি (বাঁশবাড়িয়া) আলমগীর হোসেনকে দা দিয়ে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করে বলে তারা স্বীকার করেছেন। এই হত্যাকান্ডের সাথে ৫ জন অংশ নিয়েছে বলেও জানান তারা।
র্যাব কমান্ডার জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘাতকরা জানায় ভিকটিম আলমগীর হোসেনের কাছে একই এলাকার আসামি মোঃ মফিকুল ইসলামের ২ লক্ষ টাকা পাওনা ছিল। প্রায় ৪ বছর আগে আলমগীর হোসেন ঘাতক মফিকুলের কাছ থেকে এই টাকা ধার নেন। পরে নিহত ভিকটিম মোঃ আলমগীর হোসেন প্রায় দেড় বছর আগে সংযুক্ত আরব আমিরাতে (দুবাই) চলে যান। প্রায় ২ মাস পূর্বে ভিকটিম দেশে ফেরত আসেন। সে বাড়ি ফিরে আসার পর মফিকুল ইসলাম তার কাছ থেকে পাওয়ান টাকা পাওয়ার জন্য একাধিকবার যোগাযোগ করেন। কিন্তু সে টাকা না দিয়ে নানা ধরনের টালবাহানা শুরু করে। তাদের টাকা লেন দেনের বিষয়টি শুরু থেকেই আসামি মফিকুল তার বন্ধু অপর ঘাতক বিপ্লব জানতেন। আসামি বিপ্লব হোসেন ও আসামী আলমগীর একাধিকবার ভিকটিমের কাছ থেকে আসামী মফিকুলের টাকা উদ্ধারের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। গত তিন দিন আগে আসামি মফিকুলের সাথে আলমগীর হোসেনের টাকা দেওয়া নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। আর তখন থেকেই আসামিরা ভিকটিমকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দুই দিন আগে ঘটনাকে ভিন্নখাতে নিতে (পরকীয়া) রুপ দেওয়ার জন্য আসামি বিপ্লব তার ঘড়ির দোকানে বসে নিজ হাতে একটি চিরকুট লেখে। যা আলমগীর হোসেনকে হত্যার পর লাশের নিকট সেই চিরকুট রেখে আসে আসামিরা। গত ১ জানুয়ারি ঘটনার দিন বিকালে আসামি বিপ্লবের দোকানে ভিকটিম আলমগীর হোসেন যায় এবং তার সাথে আড্ডা দেয়। কয়েকদিন পূর্বে নিহত যুবদল নেতা আলমগীর হোসেন ঘাতক বিপ্লবের নিকট থেকেও টাকা ধার চেয়েছিলেন। বিপ্লব হোসেন ভিকটিমকে টাকা ধার দেওয়ার কথা বলে গত ১ জানুয়ারি সন্ধ্যার দিকে (আনুমানিক সাড়ে ৬ টার দিকে) নিজ বাসায় নিয়ে যায়। পরে অপর আসামি মফিকুল ইসলাম তার মোটরসাইকেলে চড়ে অপর আসামি বিপ্লব হোসেন ও ভিকটিম আলমগীর হোসেন গাংনী উপজেলার মড়কা বাজারে যায়। সেখানেই অবস্থান করছিল আসামি আলমগীর ও তার অন্যান্য সঙ্গীরা। পরে আলাদা একটি মোটরসাইকেলে করে ভিকটিমসহ পাঁচজন ঘটনাস্থলে যায়।
সেখানে আসামিরা মফিকুলের নিকট থেকে নেওয়া ধারের টাকা কেন ফেরত দিচ্ছে না এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করে। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। পরে আসামি আলমগীর হোসেন দা দিয়ে ভিকটিমের মাথায় আঘাত করে এবং সবাই মিলে ভিকটিমের মুখ ও হাত পা বেঁধে ফেলে। পরে পাঁচজন মিলে আলমগীর হোসেনকে দা দিয়ে জবাই করে। ফেরার পথে ঘটনাস্থল থেকে আনুমানিক ৪ কিলোমিটার দূরে রাস্তার ঢালে হত্যার কাজে ব্যবহৃত দা’ টি ফেলে আসেন বলে আসামী বিপ্লব হোসেন স্বীকার করে।
উল্লেখ্য, গত ২ জানুয়ারি গাংনী উপজেলার বাঁশবাড়িয়া গ্রামের উত্তরপাড়া এলাকার মঈন উদ্দীনের ছেলে ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি আলমগীর হোসেনের (৩৮) গলাকাটা মরদেহ সহড়াবাড়িয়া ইছাখালি মাঠের পাশে থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।