হাসিনা প্রাইভেট হাসপাতাল ও গাংনী ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আবারও ভুল চিকিৎসায় পান্না খাতুন (২২) নামের এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
পান্না খাতুন গাংনী উপজেলার দেবিপুর গ্রামের মো: সেলিমের স্ত্রী।
এঘটনার পরপরই ওই ক্লিনিকের মালিক হাফিজুল ইসলাম ও চিকিৎসকরা ক্লিনিকটি বন্ধ করে পালিয়ে গেছেন।
তবে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত, ক্লিনিকের মালিক হাফিজুল ইসলাম বামন্দী করবী ক্লিনিকে বসে রোগীর স্বজনের সাথে টাকা দিয়ে মিটমাট করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছিলেন বলে জানা গেছে।
এই ঘটনায় সিজারকারি চিকিৎসক আবু সালেহ মোহাম্মদ ইমরানের সাথে কথা বলার জন্য তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও ফোন রিসিভ করেননি।
তবে, ক্লিনিক মালিক হাফিজুল ইসলাম মোবাইল ফোনে জানান, সিজারের সময় আমি অপারেশন থিয়েটারে থাকি। পান্না খাতুন ভুল চিকিৎসায় নয়, কার্ডিয়াক অ্যার্টাক্টে মারা গেছেন। নিহত পান্না খাতুনকে এনেসথেসিয়া দেন চিকিৎসক ইমরান হোসেন।
হাসপাতালের রিসিভসনের দায়িত্বে নিয়োজিত পপি খাতুন বলেন, প্রতিষ্ঠানের মালিক হাফিজুল ইসলাম ইফতার করতে বাড়িতে গেছেন। আর আসেনি। ডাক্তার আবু সালেহ মোহাম্মদ ইমরান সিজার করেছেন। এসময় সেবিকা ছিলেন পারুলা খাতুন নামের একজন।
তিনি আরও জানান, নিহত পান্না খাতুন (২২) সকালের দিকে প্রসব বেদনা নিয়ে আমাদের এখানে ভর্তি হন। সকাল আটটা থেকে সাড়ে আটটার মধ্যে তাকে সিজার করা হয়। রোগী ও সন্তান প্রথম দিকে সুস্থ থাকলেও কিছুক্ষণ পর মা অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে রাউন্ডে আসা চিকিৎসক মাহবুবুর রহমান রিংকু তাকে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। সেখানেই নিয়ে যাওয়ার সময় পথের মধ্যে মারা যান তিনি।
একই কথা জানান, ক্লিনিক মালিক হাফিজুল ইসলাম। তিনি বলেন, রোগী প্রথম দিকে সুস্থ থাকলেও পরে অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসক মাহবুবুর রহমান রিংকু তাকে রেফার্ড করেন।
তবে, চিকিৎসক মাহবুবুর রহমান রিংকু বলেন, আমি রোগীর অবস্থা দেখে স্বজনদের বলেছি রোগী এখানে থাকলে মারা যাবে। দ্রুত উন্নত হাসপাতালে নিয়ে যান। তবে, আমি রেফার্ডের কাগজপত্র কোথাও স্বাক্ষর করিনি। রোগীর কার্ডিয়াক অ্যাট্রাক্ট হয়েছে লিখতে বলেছিলেন মালিক। আমি সেটি লিখিনি।
জানা গেছে, এঘটনার পরপরই হাসপাতালের মালিক হাফিজুল ইসলাম বিষয়টি প্রশাসনের নজর এড়াতে শুরু করেন দৌড়ঝাঁপ। রোগীর স্বজনদের সাথে মিটমাট করতে বামন্দীর করবী ক্লিনিকে বসেন। রোগীর স্বজনদের এক লাখ টাকা দিয়ে মিটমাট করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। তবে, এক লাখ টাকা নয় আরও বাড়াতে দর কষাকষি চালাচ্ছিলেন।
একটি সুত্র জানিয়েছে, সরকারি বিধি মোতাবেক বেসরকারি হাসপাতালে প্রয়োজনীয় যন্ত্র পাতি না থাকলেও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে অবৈধভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন সিজারিয়ান। এখানে দক্ষ সিজারিয়ান ও এনেসথেসিয়া চিকিৎসক, নার্স না থাকলেও ক্লিনিক মালিক হাফিজুল ইসলাম চালিয়ে যাচ্ছেন এই ব্যবসা। ওটি রুমে নিজের থাকার ব্যাপারে হাফিজুল ইসলাম বলেন, আমি ক্লিনিকের মালিক হিসেবে ওটিতে থাকতে পারি। সিজার ঠিকঠাক হচ্ছে কিনা সেটা পর্যবেক্ষণ করি। তিনি আরো বলেন, এর আগে জুগিন্দা গ্রামের একজন রোগী মারা গেছেন। সেটি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাকের মাধ্যমে সমঝোতা করা হয়েছে। এটাও সমঝোতা করে নেবো।
গভীর রাত হওয়ায় স্বাস্থ্য বিভাগ ও জেলা প্রশাসনের কর্তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।