কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সামনে গাংনী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মোশাররফ হোসেন লাঞ্ছিতের ঘটনা ছিল টক অফ দি গাংনী উপজেলার খবরে পরিণত হয়েছে।
গতকাল সোমবার সকাল থেকে সারাদিন ব্যাপি চায়ের দোকান, বিভিন্ন মহল ও রাজনৈতিক অঙ্গণে ছিল আলোচনা ও সমালোচনার ঝড়।
একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনৈতিক অঙ্গণসহ বোদ্ধামহলে। ঘোষণা করা হয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠণের কাউন্সিল। তাহলে সহযোগী সংগঠণ যুবলীগের সভাপতি মোশাররফ হোসেন এত উদগ্রীব কেনো ? তার আগের বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকান্ডেরও হিসেব নিকেশ কষছেন রাজনৈতিক মহলের নেতৃবৃন্দ।
তবে তাকে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সামনে দফায় দফায় লাঞ্ছিতের ঘটনায় কেউ কেউ সমালোচনা করেছেন। তবে এঘটনায় মোশাররফ হোসেন বিষয়টিকে এড়িয়ে গেছেন বলেও দাবী করেছেন।
গত রোববার সকাল ১১ টার দিকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সামনে মেহেরপুর-২ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান খোকন সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করায় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনেই গাংনী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মোশাররফ হোসেনকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। পরে আবারও দ্বিতীয় দফায় রুমের বাইরে এনে লাঞ্ছিত করেন।
মেহেরপুর সার্কিট হাউজে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের খুলনা বিভাগী সাংগাঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হকের সামনে এ লাঞ্ছিতের ঘটনা ঘটে।
দলীয় সূত্র দাবী করেছে, রবিবার সকালে সার্কিট হাউজ মিলনায়তনে শুরু হওয়া আলোচনা সভায় কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হকের সামনে গিয়ে যুবলীগ সভাপতি মোশাররফ হোসেন সেবার সামনে মেহেরপুর-২ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামানকে রাজাকারের ছেলে উল্লেখ করে প্রশ্ন করেন সে কিভাবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হবে? এধরণের মন্তব্য করার সাথে সাথে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রথমে মোশাররফের এ ধরনের আপত্তিকর মন্তব্যের প্রতিবাদ করেন।
এসময় মোশাররফ হোসেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফার উপর ক্ষিপ্ত হলে উপস্থিত বিভিন্ন ওয়ার্ডের নেতা কর্মীরা মোশাররফ হোসেনের উপর কিল ঘুঁষি ও লাথি মারতে শুরু করেন।
এসময় কেন্দ্রীয় নেতা বি এম মোজাম্মেল হকের প্রচেষ্টায় সে দফায় রক্ষা পেলেও বাইরে এসে আবারও দ্বিতীয় দফায় মারপিট শুরু করে নেতা কর্মীরা।
এসময় মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, মেহেরপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য সাহিদুজ্জামান খোকন, সাবেক সংসদ সদস্য প্রফেসর আব্দুল মান্নান, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম রসুল, সাবেক জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক এডভোকেট মিয়াজান আলী, ও শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ইয়ারুল ইসলাম সহ জেলার বিভিন্ন ইউনিট আওয়ামী লীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকগন উপস্থিত ছিলেন।
এব্যাপারে গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বলেছেন, মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান খোকন বানের জলে আওয়ামী লীগের ভেসে আসেনি। সাহিদুজ্জামান খোকন ছাত্রজীবন থেকেই ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও ১৮ বছর ধরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে মনোনয়ন দিয়ে গাংনীর এমপি বানিয়েছেন। তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ আজ রাজনৈতিকভাবে সফল হয়েছে।
৩৪ বছর পর এই আসনটি নৌকার বিজয় এনে দিয়েছে। তাছাড়া এটা মুল সংগঠণের কমিটি গঠণ নিয়ে স্থানীয় নেতা কর্মীদের সাথে মত বিনিময় করছিলেন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
সেখানে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠণ যুবলীগের উপজেলা শাখার সভাপতি মোশাররফ হোসেনের যাওয়ার অনুমতিই নেই। তারপরেও সেখানে অবৈধ অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সমন্ধে আপত্তিকর কথা বলায় তাকে উপযুক্ত জবাব দিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম বলেছেন, মোশাররফ হোসেনের নিজেই তো সব সময় আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কাজ করেছেন। সে কখনোই নৌকা মার্কায় ভোট দেননি।
প্রতিবারই নৌকার বিরুদ্ধে স্বতন্দ্র প্রার্থীর পক্ষে ভোট করেছেন মোশাররফ হোসেন। জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচনে সে প্রতিবারই স্বতন্ত্র প্রার্থী মকবুল হোসেনের পক্ষে, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকার বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থী মজিরুল ইসলামের পক্ষে ও সব শেষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী আনোয়ার পাশার পক্ষে ভোট করেছেন। সে আওয়ামী লীগের উপজেলা সভাপতি ও স্থানীয় সাংসদের বিরুদ্ধে এসব কথা বলে কোন সাহসে।
ধানখোলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আলী আজগর বলেছেন, রাজনৈতিক অঙ্গণে মোশাররফ হোসেন একজন খলনায়ক। আওয়ামী লীগের মতবিনিময় সভায় যুবলীগ সভাপতি মোশাররফ হোসেন থাকতে পারেন না।
সে আওয়ামী লীগের মনোনীত এমপিকে আপত্তিকর কথা বলতেও পারেন না। তিনি বলেন, তার আপত্তিকর কথার জন্য সার্কিট হাইজেই দুই দফা মারধর করেছে স্থানীয় নেতা কর্মীরা।
তবে ঘটনার সময় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ খালেক জানান, আমি ও গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান খোকন এক সাথেই আছি।
লাঞ্ছিতের ঘটনায় গাংনী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মোশাররফ হোসেন বলেছেন, এব্যাপারে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাইনা। আমার কোনো অভিযোগও নেই।
উল্লেখ্য, গাংনী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মোশাররফ হোসেনকে গাংনীর বামন্দী নিশিপুর স্কুল এন্ড কলেজের ম্যানেজিং কমিটির বিরোধ নিয়ে বামন্দী বাসস্ট্যান্ডে প্রচন্ড হামলা করে একটি হাত ভেঙ্গে দিয়েছিলেন গাংনী উপজেলা পরিষদের ভাইসচেয়ারম্যান রাশেদুল হক জুয়েলের নেতৃত্বে একদল মানুষ।
উল্লেখ্য, দীর্ঘ ১৮ বছর পর গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক কাউন্সিলের তারিখ ছিল গত ২০ মার্চ। অজ্ঞাত কারণে ত্রিবার্ষিক কাউন্সিল বন্ধ ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ।
পরে ২১ মার্চ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগাঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হকসহ নেতা কর্মীরা স্থানীয় কোন্দল মিমাংসার জন্য মেহেরপুর সার্কিট হাউজে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করেন।
মতবিনিময় সভাশেষে আগামী ১০ এপ্রিল গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক কাউন্সিলের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করেন।