গ্রামবাংলার শীতের আলাদা ঐতিহ্য রয়েছে। আর সেই ঐতিহ্য হচ্ছে গ্রামবাংলার মায়েদের হাতের পিঠাপুলির। শীত এলেই পিঠাপুলি খাওয়ার ধুম পড়ে যায় বাংলার প্রতিটি গ্রামে গ্রামে। সেই পিঠাপুলির মধুর ঘ্রাণেই মুখরিত মেহেরপুরের গাংনী সরকারি পাইলট মাধ্যমিক বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ।
আজ বুধবার বিদ্যালয় মাঠে সকাল ১০টার সময় শুরু হয়েছে পিঠা উৎসব। গাংনী সরকারি পাইলট মাধ্যমিক বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষার্থীরা যৌথ ভাবে এ উৎসবের আয়োজন করেছে।
সকালে ঢাক-ঢোলের বাদ্যের সঙ্গে বর্ণিল বেলুনের সাজে ফিতা কেটে দিনব্যাপী এ উৎসবের উদ্বোধন করেন,মেহেরপুর-২ গাংনী আসনের সংসদ সদস্য আবু সালেহ মোহাম্মদ নাজমুল হক সাগর।
পিঠা উৎবস পরিদর্শন করেন, মেহেরপুর জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এমএ খালেক,গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রিতম সাহা,সহকারি কমিশনার (ভূমি) নাদির হোসেন শামীম,থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) তাজুল ইসলাম প্রমুখ।
পিঠা উৎসবের আয়োজক গাংনী সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশরাফুজ্জামান বলেন, গ্রামীণ সংস্কৃতি আমাদের সংস্কৃতির প্রধান জায়গা। সেই গ্রামীণ সংস্কৃতির অন্যতম উপাদান পিঠাপুলি। এ পিঠাপুলি নিয়ে প্রতিবারের মতো এবারও আমাদের বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত পিঠা উৎসব আমাদেরকে সেই শেকড়ের সংস্কৃতির কথা মনে করিয়ে দেয়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রীতম সাহা বলেন, এটা শুধু একটি উৎসব নয়, এটা নাগরিক জীবনের যান্ত্রিকতার মাঝে নির্মল আনন্দের খোরাকও। নাগরিক ও ভোগবাদী সমাজের সংস্কৃতিতে এই উৎসব আবহমান বাংলার সংস্কৃতির চিরন্তন উপাদান তুলে ধরার এ আয়োজন অত্যঅন্ত গুরুত্ব¡ বহন করে।
ইবম শ্রেনীর শিক্ষার্থী সিনথিয়া বলেন, বাঙ্গালীর অনেক পিঠা আছে যার নাম আমরা জানিনা। পিঠা কিভাবে তৈরী করে তাও জানিনা। বিদ্যালয়ে পিঠা উৎসবে অংগ্রহনের জন্য মায়ের সাথে পিঠা তৈরী করেছি। আমাদের স্টলে রয়েছে ১৫ রকমের বিভিন্ন স্বাদের পিঠা যা গ্রামবাংলার ঐতিহ্য বহন করে।
অষ্টম শ্রেনীর শিক্ষার্থী মেরিনা জানায়, আমরা এখন থেকে উৎসবের ,মধ্যে সীমাদ্ধ না থেকে মাঝে মধ্যেই মায়েরা যখন পিঠা পুলি তৈরী করবে তখন মনোযোগ সহকারে তা শিখে রাখার চেষ্টা করছি। যাতে মায়েদের অবর্তমানে আমরাও পরিবারকে শীত এলেই পিঠা তৈরী করে খাওয়াতে পারি।
পিঠা উৎসব ঘুরে দেখা যায়, পিঠার স্টলগুলো জমেছে । বন্ধু-স্বজনদের নিয়ে অনেকেই এসেছিলেন বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে গ্রামবাংলার পিঠার স্বাদ নিতে। বেশিরভাগ মানুষেরই আগ্রহের পিঠা ছিল মিষ্টি ও ঝাল জাতীয়। তবে ঝাল-টক পিঠাতেও ছিল না অরুচি। ১৬টি স্টলে প্রায় শতাধিক’ পদের পিঠা নিয়ে সাজানো হয়েছে দেশের বিভিন্ন শ্রেনীর শিকক্ষার্থীরা। যার মধ্যে ছিল- ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা, দুধ চিতই পিঠা, ঝাল পিঠা, মালপোয়া, মেড়া পিঠা, মালাই পিঠা, মুঠি পিঠা, আন্দশা, কুলশি, কাটা পিঠা, কলা পিঠা, খেজুরের পিঠা, ক্ষীরকুলি, গোকুল পিঠা, গোলাপ ফুল পিঠা, লবঙ্গ লতিকা, রসফুল পিঠা, সুন্দরী পাকান, সরভাজা, পুলি পিঠা, পাতা পিঠা, পাটিসাপটা, পাকান পিঠা, নারকেলের সেদ্ধ পুলি, নারকেল জিলাপি, তেজপাতা পিঠা, তেলের পিঠা, তেলপোয়া পিঠা, চাঁদ পাকান পিঠা, ছিট পিঠা, পানতোয়া, জামদানি পিঠা, হাঁড়ি পিঠা, ঝালপোয়া পিঠা, ঝুরি পিঠা, ছাঁচ পিঠা, ছিটকা পিঠা, বিবিখানা, চুটকি পিঠা, চাপড়ি পিঠা, ঝিনুক পিঠা, সূর্যমুখী পিঠা, ফুল পিঠা, বিবিয়ানা পিঠা, সেমাই পিঠা, নকশি পিঠা, নারকেল পিঠা, নারকেলের ভাজা পুলি, দুধরাজ, ফুলঝুরি পিঠাসহ আরও বাহারি সব নামের পিঠা।
পিঠা উৎসবে যোগ দিয়ে সাংসদ সদস্য আবু সালেহ মোহাম্মদ নাজমুল হক সাগর বলেন, দেশের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির অন্যতম উপাদান গ্রামীণ সংস্কৃতির পিঠাপুলি। নাগরিক জীবনে যখন সবকিছু যান্ত্রিকতায় আবদ্ধ হয়ে পড়েছে, সীমিত হয়ে পড়ছে আমাদের মানবিক বোধ তখন আমাদের সেই গ্রামীণ সংস্কৃতির অনন্য এই উপাদান পিঠা উৎসব নতুন করে জানান দেয় বিদেশি খাবারের মধ্যেও গ্রামীণ নারীদের হাতের তৈরী পিঠা পুলির স্বাদ এখনও অটুট রয়েছে। শিক্ষার্থীরা তাদের মায়ের সাথে বসে পিঠা তৈরী করেছে। এতে নতুন প্রজম্নের কাছেও নাম না জানা পিঠা পুলি পরিচিতি পাচ্ছে। এমন আয়োজন বারংবার ফিরে আসুক গ্রামবাংলার প্রতিঠি ঘরে ঘরে।