গাংনীর সাব-রেজিস্ট্রার মাহফুজ রানা বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতি ও মানুষ ঠকিয়ে অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগে ফুসে উঠেছে স্থানীয়রাসহ দলিল লেখক সমিতির সদস্যরা। জমি রেজিস্ট্রারের সময় নানা রকম বাহানা করে অর্থ হাতিয়ে নেয়া ও বিভিন্ন অজুহাতে গরিব মানুষকে ঠকানোর বিষয়টি জানাজানি হলে সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয় স্থানীয়রা। উত্তেজিতদের সামলাতে ছুটে আসেন উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ খালেক সহ পুলিশের একটি টিম।
সাব-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ খাড়া করে দলিল লেখক বৃন্দরা কর্মবিরতি পালনের ঘোষনা দেন। সেই সাথে সাব রেজিস্ট্রার মাহফুজ রানার বদলির দাবী করেন ভুক্তভোগীরা।
জানাগেছে, বৃহস্পতিবার সকালের দিকে গাংনী উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার মাহফুজ রানার কার্যালয়ে জনৈক ব্যাক্তি জমি রেজিস্ট্রি করতে যায়। সেখানে সমস্ত কাগজপত্র ঠিকঠাক থাকলেও বিভিন্ন অজুহাতে ফিরিয়ে দেয়া হয়। পরে তার নিযুক্ত দালালদের মাধ্যমে ৫ হাজার টাকা অতিরিক্ত দাবী করেন। বিষয়টি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ খালেকের কাছে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী ওই ব্যাক্তি। এম এ খালেক নিজেই বিষয়টি যাচাই করার জন্য টাকা দিয়ে জমি রেজিস্ট্রি করতে পাঠালে সাব রেজিস্ট্রার টাকা নিয়ে তা করে দেন।
বিষয়টি জানাজানি হলে উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ খালেক ও স্থানীয় লোকজন সাব রেজিস্ট্রার অফিসে যান। সেখানে গিয়ে শত শত অভিযোগ খাড়া করেন উপস্থিতিরা। পরে পরিবেশ অশান্ত হয়ে উঠলে পুলিশকে খাবর দেন সাব রেজিস্ট্রার মাহফুজ রানা। খবর পেয়ে গাংনী থানা পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে উত্তেজিত উপস্থিতিদের সাথে কথা বলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে।
উপস্থিত স্থানীয়রা জানায়, মাহফুজ রানা গাংনীতে যোগদানের পর থেকে টাকা ছাড়া কোনো কাজ করেননা। ফাইল খুলতেই দিতে হয় অতিরিক্তি টাকা। টাকা না দিলে স্বাক্ষর করেননা দলিলে। সিরিয়াল করতে হলে নেয়া হয় টাকা। টিপ দিতে নেয়া হয় দলিল প্রতি ১০০ টাকা।
সাহারবাটি গ্রামের তারেক হোসেন জানায়, আমি আমার মায়ের জমি রেজিস্ট্রি করতে অতিরিক্ত টাকা গুনতে হয়েছে। দলীলে পিসহি দিতে ১০০ টাকা নিয়েছে। আমি দিতে না চাইলে আমার দলিল ছুড়ে ফেলে দেয় সাব রেজিষ্ট্রার অফিনের লোকজন। পরে আমাকে ১০০ টাকা বাধ্য হয়ে দিতে হয়েছে। তবে কি কারনে টাকা নিচ্ছেন জানতে চাইলে সাব রেজিস্ট্রার অফিসের লোকজন বলেন স্যারের নির্দেশ। এ টাকা উপজেলা মসজিদের চাঁদা। তারেক হাসেন বলেন ,সরকারি ভাবে উপজেলায় অনেক টাকা ব্যায়ে মডেল মসজিদ নির্মাণ হচ্ছে। তা হলে আমাদের কাছে জোর করে টাকা নিচ্ছেন কেন? আমার টাকা আমি মসজিদেও লোকজনকে দেব। আমাকে টাকার রশিদ দিন। তখনি নকল নবীশরা বিষয়টি চেপে যেতে বলেন।
এমন অভিযোগ করেন, হিজলবাড়িয়া গ্রামের মকলেচুর রহমান, তার কাছে নেয়া হয়েছে ৩ হাজার টাকা,শিরিপাড়া গ্রামের রফিকুলে কাছে নেয়া হয়েছে ৩ হাজার টাকা, এবং পলাশীপাড়া গ্রামের জয়নদ্দীনের কাছেও নেয়া হয়েছে ৪ হাজার টাকা। এমন অসংখ্য অভিযোগ খাড়া করেন উপস্থিতিরা। দলীল লেখকদের অনেকেই নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আমরা অনেক বিপদে রয়েছি। দলীল পাঠালেই টাকা দিতে হবে। নইলে দলিল ঠিক নেই। টাকা দিলেই সব ঠিক। এবিষয়ে অনেকেই প্রতিবাদ করতে এসে সাব রেজিস্ট্রার কর্র্তৃক হেনস্থা হয়েছেন। কেউ তার প্রতিবাদ করইে পুলিশ দিয়ে ভয়ভীতি দেখানো হয়। সম্প্রতি এক নাবালিকার আইডি কার্ড না থাকলেও টাকার বিনিময়ে জমি রেজিস্ট্রি করা হয়েছে এমন বিষয়ে জানতে চাইলে স্থঅনীয় যুবক তারেক হোসেনকে পুলিশ দিয়ে হয়রানীর চেস্টা করা হয়।
দলীল লেকক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন পিন্টু বলেন, আমরা অনেক সিনিয়র দলিল লেখক হিসেবে গাংনী সাব রেজিস্ট্রার অফিসে কাজ করছি। বর্তমান সাব রেজিষ্ট্রার মাহফুজ রানা অত্যাচারে আমরা সকলেই অতিষ্ট। টাকা ছাড়া একটি কাজও আমরা করতে পারছিনা। আমরা এর প্রতিবাদে উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেক সাহেবকে জানিয়েছি। তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে আমাদের আশস্ত করেছেন। সাব রেজিস্ট্রারের অপসারণ না হলে এবং তার দুর্নীতি বন্ধ না হলে আগামী রবিবার থেকে কর্ম বিরতি পালন করবো।
সাব-রেজিস্ট্রার মাহফুজ রানা বলেন, আমি সঠিক ভাবে কাগজপত্র দেখে জমি রেজিস্ট্রি সমপন্ন করি। বিগত দিনে অনেকেই যেনতেন ভাবে জমির দলিল সমপন্ন করেছেন। তাতে ক্রেতা বিক্রেতা ও দাতা গ্রহিতাদের উভয়কেই ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। আমি এসব করতে নিষেধ করেছি। আমার সাথে অনৈতিক সুবিধা না পেয়ে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে । দলিল সঠিক না হলে তার কাজ ফেরত দেয়া হয়। সেই কাজ আবার শুপারিশ করেন অনেক দলিল লেখক। এসব বিষয় নিয়ে আমি কঠোর। আমি কারো সাথে টাকা পয়সা গ্রহন করিনা বলেও দাবী করেন তিনি।
গাংনী উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ খালেক বলেন,ভুক্তভোগীরা আমার কাছে অভিযোগ করেছেন । অভিযোগের বিষয়টি আমি সরাসরি তার অফিসে জানতে গিয়েছিলাম। তবে তাৎক্ষনিক ভাবে সাব রেজিস্ট্রারের সামনেই অনেকেই টাকা নেয়ার বিষয়ে অভিযোগ তুলছিলেন। আমি পরিস্থিতি সামলাতে সাময়িক ভাবে সকলকে শান্ত করে চলে এসেছি। বিষয়টি গভীর ভাবে দেখা হচ্ছে।