টানা ১১ দিন রক্তাক্ত সংঘাতের পর গাজা উপত্যকায় বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় রাত ২টা (বাংলাদেশ সময় শুক্রবার ভোর ৫টা) থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। যুদ্ধবিরতির ঘোষণায় রাস্তায় নেমে উল্লাস করতে থাকেন ফিলিস্তিনি জনগণ। খবর আলজাজিরার।
এ যুদ্ধবিরতিকে নিজেদের বিজয় বলে দাবি করেছে ফিলিস্তিনের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে ঘোষণা আসার পর হামাস এবং ইসলামিক জিহাদ জানায়, স্থানীয় সময় রাত ২টা থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে। এর পরই নিরাপদ আশ্রয় থেকে বের হয়ে এসে উল্লাস করতে থাকেন ফিলিস্তিনিরা।
যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর গাজা এবং ফিলিস্তিনের রাস্তায় নেমে হাজার হাজার মানুষকে উল্লাস করতে দেখা যায়। এ সময় তারা ফিলিস্তিনের পতাকা প্রদর্শন করেন এবং বিজয়সূচক ‘ভি’ চিহ্ন দেখান। এ ছাড়া এ সময় গাজার মসজিদ থেকে মাইকে আল্লাহর প্রশংসাসূচক বক্তব্যও শোনা যায়।
জনগণের সামনে বক্তব্য দিতে গিয়ে গাজায় থাকা হামাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রাজনৈতিক নেতা খলিল আল-হাইয়া বলেন, ইসরাইলিদের বিরুদ্ধে এটি জয়ের উচ্ছ্বাস।’ এ সময় ইসরাইলি বোমা হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িগুলো পুনর্নির্মাণের ঘোষণাও দেন তিনি।
শুক্রবার যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছন, এটি উন্নতির চরম সুযোগ সামনে এনেছে। এর আগে ইসরাইলের রাজনৈতিক নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রিসভা জানায়, তারা যুদ্ধবিরতির সুপারিশ সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করেছে। ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেনি গান্তজ বলেছেন, গাজায় হামলার মাধ্যমে অভূতপূর্ব সামরিক অর্জন হয়েছে।
অন্যদিকে হামাসের এক কর্মকর্তা বলেছেন, ইসরাইল যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেওয়া ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য বিজয় এবং ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর জন্য পরাজয়।
তবে এই যুদ্ধবিরতি টিকবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেছেন হামাসের আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক কাউন্সিলের কর্মকর্তা বাসিম নাইম। তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনিদের জন্য ন্যায়বিচার ছাড়া, ইসরাইলের আগ্রাসন ছাড়া আর জেরুজালেমে আমাদের জনগণের বিরুদ্ধে ইসরাইলি সহিংসতা বাদে এই যুদ্ধবিরতি ভঙ্গুর হয়ে পড়তে পারে।’
গত ১০ মে থেকে গাজায় ইসরাইলের বিমান হামলা শুরু হয়। এতে ২৩২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৬৫ জন শিশু। আহত হয়েছেন এক হাজার ৯০০ জন।
বিশাল এলাকা পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়েছে এক লাখ ২০ হাজার মানুষ।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, হামাসসহ গাজার বিভিন্ন গ্রুপ দেশটি লক্ষ্য করে চার হাজার ৩০০ রকেট ছুড়েছে। তবে এর বেশিরভাগই প্রতিহত করেছে ইসরাইলে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা আয়রন ডোম। এসব রকেট হামলায় ইসরাইলের ১২ নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে।