প্রায় ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে মেহেরপুর শহরের কলেজ মোড়ে পুরাতন ডাকঘর ভবন ভেঙে আধুনিক পোষ্ট অফিস ভবণ নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। নির্মানের শুরুতেরই বেস (গ্রাউন্ডফ্লোর) ঢালাইয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রয়োজনীয় তদারকির অভাবে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে বেস ঢালাই এর কাজ করা হয়েছে। ঠিকাদারের যোগসাজসে রাতের আধাঁরে পাইলিং এর পুরাতন পিলার গুড়ো করে পাথরের সাথে মিশিয়ে বেস ঢালাই করা হয়েছে। এছাড়া পাথরের মাপ ঠিক নেই। তুলনামূলকভাবে বেস ঢালাই হিসেবে পাথর বড়। স্থানীয়রা বলছেন ঠিকাদারের যোগসাজসে নির্মাণ কাজে দুর্নীতি করতেই গভীর রাতে পাইলিং এর পিলার গুড়ো করে তা পাথরের সাথে মিশিয়ে বেস ঢালাই এর কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশের ডাকঘরগুলোর আধুনিকায়ন, উন্নয়ন ও ইমেজ বৃদ্ধিতে একাধিক উদ্যোগ বা প্রকল্প গ্রহণ করছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। এর একটি হলো, ডাকঘরের মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা বিতরণ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে ডাকঘরই ‘পোস্ট ই-সেন্টারে’ পরিণত হবে। একইসঙ্গে ডাকবিভাগ এর হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাবে। পাশাপাশি এগিয়ে যাবে সামনের দিকে। সম্প্রতি ‘পোস্ট-ই-সেন্টার ফর রুরাল কমিউনিটি প্রকল্প’ হাতে নিয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। এই প্রকল্পের আওতায় সামাজিক নিরাপত্তার ভাতা বিতরণ করা হবে। এর ধারাবাহিকতায় মেহেরপুরসহ সারাদেশে ডাক বিভাগের প্রধান কার্যালয়ের ভবনের আদলে সারা দেশে ডাক ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। তারই ধারাবাহিকতায় মেহেরপুর পোষ্ট অফিসের পুরাতন ভবন ভেঙ্গে আধুনিক পোস্ট অফিস নির্মাণ কাজ শরু হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিনে দেখা যায়, মেহেরপুর পৌর শহরের কলেজ মোড় এলাকায় আধুনিক পোষ্ট অফিস ভবনের বেস ঢালাই কাজের প্রস্তুতি চলছে।
গত শনিবার (১২ জুন) রাত দেড়টার দিকে পাইলিং এর পিলার ছোট-বড় টুকরো করে ইট ভাঙা মেশিনের মাধ্যমে ভেঙ্গে গুড়ো করার কাজ করছে ৮-১০জন লেবাররা। পাশেই রাখা আছে পাথর ভর্তি ট্রাক। পিলারগুলো ভাঙার কাজ শেষ হলে সেগুলোর ওপর পাথর নামিয়ে ঢেকে সকালে সেই সকল সামগ্রী পাথরের সাথে মিশিয়ে বেস ঢালাই এর কাজ করা হয়।
জানা গেছে, মেহেরপুর আধুনিক পোস্ট অফিসের তিনতলা ভবন নির্মাণের জন্য ৭ কোটি ৭৬ লক্ষ টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়। প্রতিষ্ঠানের তিনতলা ভবন নির্মাণের কাজ পান কুষ্টিয়ার শহিদুল ইসলাম নামের একজন ঠিকাদার। এবিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তথ্য দিতে গড়িমসি শুরু করে কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট লোকজন। গত সোমবার (১৪ জুন) কথা হয় হেড মিস্ত্রি আব্দুল মালেকের সাথে (তিনি নিজেকে সাব ঠিকাদার বলে দাবী করেন) রাতের আধাঁরে পাইলিং এর ঢালাই ভেঙ্গে পাথরের সাথে মিশিয়ে বেস ঢালাই করার কথা স্বীকার করে আব্দুল মালেক বলেন, পাইলিং এর যা ভাঙা হয়েছে তা তিন ভাগের দুই ভাগ এখনও আছে। সামান্য কিছু যেতে পারে। সামান্য নয় অর্ধেকের বেশি ব্যবহার হয়েছে বললে তিনি বলেন যাই হোক যেটা গেছে সেটা গেছে আর যেটা আছে সেটা আছে।
এগুলো মেশানোর নিয়ম আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রায় সকলেই এগুলো ভেঙ্গে ঢালাই এর সাথে দেয়। তবে আমাদের ঠিকাদারের নিষেধ যে যদি কিছু দিয়েও থাকো পরবর্তী সময়ে যেগুলো আছে ওগুলো ব্যবহার করার এখন দরকার নেই। আমাদের যদি দেওয়ার অনুমতি দেয় আমরা সেখানে দেবো। সেকারণে আমরা রেখে দিয়েছি।
ঠিকাদার শহিদুল ইসলামকে ফোন করলে তিনি সরাসরি মেহেরপুর প্রতিদিন অফিসে আসেন। সেখানে তিনি বলেন, কাজের কিছু উনিশ-বিশ হতে পারে। তবে মিস্ত্রিদের নিষেধ করেছিলাম পুরাতন কিছু না দিতে তারা হয়তো দিয়ে ফেলেছে। তবে আব্দুল মালেকের সাথে কথা চলাকালীন সময়ে পাইলিং এর পিলারের গুড়ো বাদ দিয়ে পাথরগুলো বস্তা ভর্তি করতে লক্ষ্য করা গেছে।
মেহেরপুর প্রধান ডাকঘরের পোস্ট মাস্টার আবু সাঈদ মোঃ জহিরুল হক বলেন, প্রকল্প ইঞ্জিনিয়ার বাসেত আলী এই ভবন নির্মাণ দেখাশুনা করছেন। তিনি আমাকেও বিষয়টি দেখতে বলেছেন। ঢালাইয়ের সময় আমাকে না ডেকেই ঢালায় করা হয়েছে। পুরাতন পিলার ভেঙ্গে সেগুলো এখানে দিতে নিষেধ করেছিলাম তারপরও শুনছি তারা সেগুলো ব্যবহার করেছে।
তবে প্রকল্প ইঞ্জিনিয়ার বাসেত আলীর মোবাইল নম্বর চাইলে ঠিকাদার, পোষ্টমাষ্টার কেউ দাতি রাজি হয়নি।