কুষ্টিয়া জেলার পদ্মা ও গড়াইতে পানি কমতে শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার স্থিতিশীল অবস্থায় থাকার পর শুক্রবার বিকেল থেকে পানি কমতে শুরু করে। শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত পদ্মার হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে ৪ সেন্টিরমিটার পানি কমে। বর্তমানে পদ্মায় বিপদ সীমার ৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। তবে শনিবার সকাল থেকে আবারও পানি স্থিতিশীল রয়েছে। পদ্মার সঙ্গে সঙ্গে কমতে শুরু করেছে পদ্মার অন্যতম শাখা মাথাভাঙ্গা নদীর পানিও। শনিবার সন্ধ্যার মধ্যে পানি বিপদ সীমার নিচে নেমে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অন্য দিকে শহরের কোলঘেঁষা প্রবাহিত গড়াই নদীর পানিও কমতে শুরু করেছে। গড়াই রেলসেতু পয়েন্টে শনিবার সকাল ৯ টায় ১২ দশমিক ৪১ সেঃ মিঃ ছিল। এখানে বিপদ সীমা ১২ দশমিক ৭৫ সেঃ মিঃ। শুক্রবার এ পয়েন্টে পানি ১২ দশমিক ৪৩ সেঃ মিঃ ছিল। এ দিকে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে বন্যাকবলিত মানুষের দুর্ভোগ অব্যাহত রয়েছে। পানি বাহিত রোগসহ এলাকায় ব্যাপক ভাবে বিষাক্ত সাপের উপদ্রব বেড়ে গেছে। প্রতিদিনই পানিতে ভেসে আসছে বিভিন্ন প্রজাতির বিষধর সাপ। এতে দুর্ভোগের সঙ্গে সাপ আতঙ্ক দেখা দিয়েছে পানিবন্দি মানুষের মাঝে। বন্যা কবলিতরা জানান, দৌলতপুর উপজেলার পদ্মার তীরবর্তী চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ৩৮ গ্রামের ১০ হাজার পরিবারের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ গত ১০ দিন ধরে পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। প্রায় ৩ হাজার পরিবারের বাড়ি ঘরে পানি ঢুকেছে। বাড়ি ঘরে পানি উঠে আসায় বিষাক্ত সাপও ভেসে আসছে। বিভিন্ন প্রজাতির সাপ ঘরের চালায়, গাছপালায় ও পানিতে ভেসে বেড়াচ্ছে। চিলমারী ইউনিয়নের খারিজাথাক গ্রামের বাসিন্দা ইয়াসিন আলী জানান, প্রতিদিনই বিভিন্ন প্রজাতির বড় বড় সাপ দেখা যাচ্ছে। দিনের আলোতে সাপ গুলোকে দেখা গেলেও রাতের অন্ধকারে কখন ঘরের মধ্যে চলে আসছে তা বোঝা যাচ্ছে না। তাই রাতের বেলায় সাপের ভয়ে নির্ঘুম রাত কাটাতে হচ্ছে। বৃহস্পতি ও শুক্রবার গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি দৌলতপুরের বন্যা কবলিত এলাকায় দুর্ভোগ বাড়িয়েছে। মানুষের মধ্যে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ বালাই দেখা দিয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকায় সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে বৃদ্ধ ও শিশুরা। গত এক সপ্তাহে উপজেলায় বন্যার পানিতে ডুবে ২ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এ দিকে বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। সরকারি ভাবে ছাড়াও বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠন বন্যার্তদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসছে। পুলিশের পক্ষ থেকে কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাতের নেতৃত্বে শনিবার চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকায় বন্যার্তদের মাঝে দুই হাজার প্যাকেট ত্রাণ বিতরণ করা হয়। এ সময় পুলিশ সুপারের স্ত্রী শারমিন আক্তার, এডিশনাল এস পি এস এম আল বেরুনী ও দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এস এম আরিফুর রহমান সহ জেলা পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। শুক্রবার সংসদ সদস্য আ ক ম সারওয়ার জাহান বাদশাহ দৌলতপুরের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান এনামের সঙ্গে সাক্ষাত করলে প্রতিমন্ত্রী বর্ন্যাতদের জন্য তাৎক্ষণিক ১০০ টন চাল ও নগদ ৫ লাখ টাকা বিশেষ বরাদ্দ দেন। দৌলতপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সাইদুর রহমান বলেন, দুর্গত এলাকায় প্রতিদিন ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই চিড়া, বিস্কুট, তেল, নুডুলস সম্বলিত ৬ হাজার প্যাকেট ও ২২ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। আরও ২০ মেট্রিক টন চাল ও এক হাজার মেট্রিক টন শুকনা খাবার বরাদ্দ পাওয়া গেছে। শনি ও রোববার সে গুলো বিতরণ করা হবে। এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক মোঃ আসলাম হোসেন জানান, পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙ্গন দেখা দেয়ার আশংকা থাকায় পর্যাপ্ত শুকনা খাবার, ত্রাণ রয়েছে। সার্বক্ষণিক দু জন ম্যাজিষ্ট্রেট নিয়োজিত রয়েছে। সাথে ট্রলারে বিজিবি টহল টিম রয়েছে। ইতিমধ্যে ৫৯ মেঃ টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। ত্রাণ বিতরণে কোন অনিয়ম হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান। এ দিকে পদ্মা নদীতে গত ২৪ ঘণ্টা তেমন পানি বৃদ্ধি পায়নি। বুধবার বিকালে শূন্য দশমিক ১ সেন্টিমিটার পানি কমে বিপদ সীমার শূন্য দশমিক ৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, পদ্মায় বর্তমানে ১৪ দশমিক ৩২ সেন্টিমিটার দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। গত দুই দিন ধরে পানি স্থিতিশীল রয়েছে। তাদের ধারণা, পানি আর বৃদ্ধি নাও হতে পারে। তবে প্লাবিত এলাকা থেকে পানি নেমে যেতে আরও কিছুদিন সময় লাগতে পারে। গত এক সপ্তাহে এ উপজেলায় বন্যার পানিতে ডুবে ২ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার জেলা সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে মেডিকেল টিম বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে দুর্গতদের খোঁজ খবর নিয়েছেন। এ ছাড়াও কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কালোয়া, কোমরকান্দি ও কল্যাণপুর ভাঙনের কবলে পড়েছে। শিলাইদহ কুঠিবাড়ি রক্ষা বাঁধের ৩০ মিটার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভেঙ্গে যাওয়া অংশ সিসি ব্লক এবং জিও ব্যাগ ফেলে মেরামতের কাজ শেষ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। পাশাপাশি কুমারখালী উপজেলার মহেন্দপুর এলাকাতেও বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। ফসলের পাশা পাশি এ সব এলাকার বাড়ি-ঘরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কুষ্টিয়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ ইতো মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে বন্যা কবলিতদের ত্রাণ সহায়তা দিয়েছেন।