চিকিৎসক, শয্যা, ঔষধসহ অন্যান্য জনবল সংকটে মেহেরপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল। জেলার প্রায় ৮ লাখ জনবলের চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠানটি নিজেই যেনো অসুস্থ। প্রতিদিনই ভীড় করছে রোগীর সংখ্যা।
তিল ধারণের ঠাই নেই এই হাসপাতালটিতে। অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার থাকলেও চিকিৎসকের অভাবে বন্ধ প্রায় সকল ধরনের অপারেশন। গর্ভবতী মায়েদের সিজার করাতে হলেও যেতে হচ্ছে বিভিন্ন ক্লিনিকে। এতে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন রোগীরা। দ্রত সিজারিয়ার অপারেশন চালু করার দাবী ভুক্তভেগীদের।
এদিকে হাসপাতালে স্বেচ্ছা সেবক হিসেবে কর্মরতদের বিরুদ্ধে রয়েছে রোগীদের জিম্মি করে টাকা আদায়ের অভিযোগ। আয়াদের টাকা না দিলে দেয়া হয়না ছাড়পত্র। রান্না ঘরেও রয়েছে ময়লার গন্ধ আর মাছির উপদ্রব। রোগীদের বেডের পাশেই ময়লার স্তুুপ। ময়লার স্তুপ থেকে মশা মাছি বসছে রোগীদের শরীরে আসন সংকটে বারান্দা বা মেঝেতেই চিকিৎসা নিতে হচ্ছে রোগীদের। জন্ডিস আক্রান্ত নবজাতক শিশূদের মশারি, কিংবা কাচের ঘরে আলাদা চিকিৎসা দেয়ার নিয়ম থাকলেও সাধারণ রোগীদের পাশেই দেয়া হচ্ছে চিকিৎসা।
একদিনের সরেজমিনে দেখা গেছে এসব চিত্র। এতে শিশূদের স্বাস্থ্যঝুকি বাড়ছে বলে মনে করছেন অনেকেই। তবে সকল সমস্যা সমাধান করে হাসপাতালটিতে সর্ব সাধারনের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করবেন এমন প্রত্যাশা মেহেরপুরবাসীর। কর্তৃপক্ষ বলছেন, জনবল সংকটে চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশীম খাচ্ছেন তারা।
২০১৩ সালে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালটি ১০০ শয্য থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নিত করা হলেও বাড়ানো হয়নি জনবল। প্রায় এক দশকেও বাড়েনি এই হাসপাতালটির কোনো সুযোগ সুবিধা। ২০১৯ সালে ৭২ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যায়ে পাশেই ৬ তলা একটি ভবন তৈরীর কাজ শুরু হয়। পরে ভবনটি আরও ২ তালা বৃদ্ধি করা হয়। ভবনটি পুরো ৮ তলা প্রস্তুত হলেও এখন রয়েছে হস্তান্তর জটিলতা। অথচ, ২০২৩ সালের ১২ নভেম্বর হাসপাতালের ৮ তলা বিশিষ্ট নতুন ভবনটির উদ্বোধন করা হয়েছে। পুরাতন ভবনেই জায়গা সংকটে রোগীদের মেঝে কিম্বা বারন্দায় নিতে হচ্ছে চিকিৎসা সেবা।
এতে সুস্থ হওয়ার পরিবর্তে অবস্থার অবনতি হচ্ছে অনেকের। হাসপাতালটিতে আছে জনবল সংকট। হাসপালটিতে সার্জারি, এনেসথেটিস্ট, চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যান্য মোট পদ রয়েছে ২৯৩ টি। এর মধ্যে শুন্য রয়েছে ৭৮ টি পদ। হাসপাতালটির সিনিয়র কনসালটেন্ট মেডিসিন, শিশু, সার্জারি, কার্ডিওলজি, জুনিয়র কনসালটেন্ট গাইনি, প্যাথলজি, চর্ম ও যৌণ চিকিৎসক, ডেন্টাল সার্জন, ৩ জন এনেসথেটিষ্ট, নার্সিং সুপারিনটেন্ডেন্ট, ২ জন হেলথ এডুকেটর, ২ জন অফিস সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক, ২ জন ওয়ার্ড মাস্টার, ১ জন মেডিকেল স্টোর কিপার, পদগুলি শুণ্য রয়েছে দীর্ঘদিন যাবৎ। এছাড়া হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ৭ মেডিকেল অফিসারের মধ্যে ৬ জন, ১১ জন মেডিকেল অফিসারের মধ্যে ১ জন, ২ জন আরএমও’র মধ্যে একজন, ২ জন জুনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা অফিসারের মধ্যে ১ জন, ১১ জন স্টাফ নার্সের মধ্যে ৪ জন, ১ জন মেডিকেল রেকর্ড কিপার, ৫ জন সহকারি নার্সের মধ্যে ৪জন, ৩ জন গাড়ি চালকের মধ্যে ২ জন, ২৬ জন অফিস সহায়কের মধ্যে ২২ জন, ৪ জন ওয়ার্ড বয় এর মধ্যে ৩ জন, ৬ জন কুক এর মধ্যে ৫ জন, ৪ জন পরিচ্ছন্নতা কর্মীর মধ্যে ১ জন ও ২ টি মালির পদ দীর্ঘদিন যাবৎ শুণ্য।
এদিকে হাসপাতালটিতে পর্যাপ্ত শয্যা সংখ্যা না থাকায় রোগীদের ঠাই মিলেছে বারান্দা। কেউ কেউ মেঝেতে বা শিঁড়ির নিছেই নিচ্ছেন চিকিৎসা। নিম্নমানের খাবারসহ ঔষধ না পাওয়ারও অভিযোগ রোগীদের। প্রায় ৪ মাস যাবৎ হাসপাতালটিতে বন্ধ রয়েছে নরমাল বা সিজারিয়ান ডেলিভারি। হাসপাতালটির অভ্যন্তওে রয়েছে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার অভাব। দুর্ঘন্ধময় থাকে পরিবেশ আর মশা মাছির সাথেই পড়ে থাকতে হয় রোগীদের। সেই সাথে রয়েছে হাসপাতালের আয়া নামক যন্ত্রণা। রোগীদের হাতের ক্যানোলা খুলতে ও ছাড়পত্র নেওয়ার সময় জোর করে ২ থেকে ৩ শ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রোগীদের। তাদের দাবীকৃত টাকা না দিতে পারলেও দীর্ঘক্ষণ বসিয়ে রাখা বা অসাদাচারণ করা নিত্যনৈমত্যিক ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে।
মেহেরপুর ২৫০ শয্য বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল সার্জন মোঃ ফজলুর রহমান বলেন, চিকিৎসক সঙ্কট, জনবল সঙ্কটসহ নানা সমস্যায় চলছে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল। যে কয়েকজন চিকিৎসক রয়েছে তা দিয়ে কোন রকমে চিকিৎসা দেযা হচ্ছে। সিজারিয়ান অপারেশন বন্ধ থাকায় গর্ভবতী মায়েদের সিজার করা বন্ধ রয়েছে।
ফলে ওই সকল গর্ভববী মায়েরা বিভিন্ন ক্লিনিকে গিয়ে অতিরিক্ত টাকা খরচ কওে অপারেশন করাচ্ছেন। তবে চিকিসক ও জনবল চেয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন করা হয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্ত।