সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ও তার স্ত্রী সৈয়দ মোনালিসা ইসলামের নাম ভাঙ্গিয়ে বিগত বছরগুলোতে এশিয়া মহাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম চিৎলা ভিত্তি পাটবীজ খামারটি নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ ও চুরি করে খামারটি দেওলিয়া করার অভিযোগ উঠেছে যুগ্ম পরিচালক (জেডি) মোর্শেদুল ইসলাম।
পতিত স্বৈরাচার সরকারের পতন হলেও বহাল তবিয়তে তার দূর্ণীতি, অর্থলোপাট ও অপকর্মচালিয়ে আসছেন ফ্যাসিস্ট সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রীর এই দোসর।
খামারটিতে টেন্ডার বিহীন গাছ কেটে সাবাড়, বিনা টেন্ডারে ড্রেন নির্মাণের নামে অর্থ লোপাট, রং করণ, বিচুলি, খড়, অবীজ আলু, ধান বিক্রি, চুরি করে বীজ বিক্রি করে অর্থ আত্মসাৎ, অতিরিক্ত শ্রমিক দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ, যন্ত্রপাতি মেরামতের নামে অর্থ লোপাট, জ্বালানি তেলের বরাদ্দ আত্মসাৎ, রাসায়নিক ও কীটনাশকের অর্থ আত্মসাৎ করে বিগত বছর গুলোতে কোটি কোটি টাকা পকেটস্থ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এছাড়া টেন্ডারের নামে নিজের আত্মীয় স্বজনকে কৌশলে টেন্ডার পাইয়ে দিয়েছে এই কর্মকর্তা। এছাড়া তার বিরুদ্ধে রয়েছে অফিসের এক নারী অফিস সহকারির সাথে গোপনে অপকর্মের অভিযোগ।
গত মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, খামারের ফলকর বাগান, পাটখড়ি ও নন সীড ধানের টেন্ডার নিয়ে এলাকার ব্যবসায়ী, ঠিকাদার ও স্থানীয়দের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, খামারের যুগ্ম পরিচালক মোর্শেদুল ইসলাম টেন্ডার নীতিমালা বহির্ভূতভাবে মনগড়া নিয়ম তৈরী করে পছন্দের লোককে টেন্ডার পাইয়ে দেয়ার পন্থা অবলম্বন করছেন। এনিয়ে এলাকার ব্যবসায়ী ও ঠিকাদারদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
ব্যবসায়ী ও ঠিকাদার নুর ইসলাম, নাজমুল হোসাইন ও ইমনসহ কয়েকজন জানান, চিৎলা পাটবীজ খামারে আজ টেন্ডার ছিলো। এতে এলাকার ব্যবসায়ী ও ঠিকাদাররা অংশগ্রহণ করেন। নিয়ম অনুযায়ী বেলা ১২ টার মধ্যে শিডিউল ড্রপ করতে হবে। আমরা সে অনুযায়ী শিডিউল ড্রপ করি। নিয়ম ছিল শিডিউল ড্রপ করার পর সবার উপস্থিতিতে বেলা সাড়ে ১২ টায় শিডিউল অপেন করা হবে। কিন্তু খামার কর্তৃপক্ষ হঠ্যাৎ করে একটা নোটিশ টাঙিয়ে দিয়ে আমাদেরকে বলে আজ আর শিডিউল অপেন করা হবে না।
আগামীকাল বুধবার অপেন করা হবে। নির্দিষ্ট সময় পার হওয়ার পর আমরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারি মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গায় কোন শিডিউল ড্রপ হয়নি। কিন্তু জেডি মোর্শেদুল আজ শিডিউল অপেন না করে, চুয়াডাঙ্গায় গিয়ে নিজস্ব ঠিকাদার দিয়ে নির্দিষ্ট সময় পার হওয়ার পরেও অনৈতিক ভাবে শিডিউল ড্রপ করার পর, এখানে ফোন দিয়ে জানায় চুয়াডাঙ্গায় একটি শিডিউল ড্রপ হয়েছে। ইতিপূর্বেও উনি টেন্ডার নিয়ে এমন অনিয়ম করেছে। নিজের ঠিক করা লোক দিয়ে শিডিউলে সর্বোচ্চ দাম দিয়ে টেন্ডার পাইয়ে দিয়েছে। পরে শিডিউল কাটাছেরা করে দাম কমিয়ে নতুন করে শিডিউল তৈরি করার মতো অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
খামারের শ্রমিকদের উপদেষ্টা শফিউর রহমান ট্রমা জানান, খামারের বর্তমান যুগ্ম পলিচালক সবসময় শেখ হাসিনার পরিচয় দিতেন। চুয়াডাঙ্গার সেলুন জোয়াদ্দারের পরিচয় দিতেন। আর সকল অনিয়ম ও দুর্নীতি করে পার পেয়ে যেতেন। এই খামারের বড় বড় গাছ উনি কেটেছেন আর বাড়ীর ফার্নিচার তৈরির জন্য চুয়াডাঙ্গায় নিয়ে গেছেন। সেখানে তিনি গরুর খামার গড়ে তুলেছেন। আর গরুর খাবার হিসেবে এই খামারে যত ধান চাষ হয়। তার সব বিচালি খামারের গাড়ী ব্যবহার করে কোন টেন্ডার ছাড়াই নিয়ে যান। এছাড়া চুয়াডাঙ্গা থেকে তার আত্মীয়ের সারের দোকান থেকে নিম্নমানের সার ও বিষ নিয়ে আসেন।
তিনি মনে করেন এই খামার তার পৈত্রিক সম্পাতি। খামারের কেউ কিছু বললেই তাকে কাজ থেকে ছাটাই করা হয়। সে যোগদানের পরে শ্রমিকদের কাজও কমে গেছে। শ্রমিকদের কাজে না লাগিয়ে আগাছা পরিষ্কারের জন্য নিন্মমানের কীটনাশক প্রয়োগ করে জমির ফসল পুড়িয়ে ফেলারও অভিযোগ রয়েছে জেডির বিরুদ্ধে। এই ঐতিহ্যবাহী খামারের ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখার জন্য বর্তমান যুগ্ম পলিচালককে এখান থেকে দ্রুতই অপসারণ করা প্রয়োজন।
তিনি আরো জানান, খামারে আগের মতো উন্নতি না হলেও বর্তমানে যেটুকু হচ্ছে। তার আংশিক চুরি হয়ে যায়। আর এসকল অনিয়ম ও দুর্নীতিতে সহযোগিতা করেন জেডি’র নিজস্ব নিয়োগকৃত নাজিম উদ্দিন নামের এক শ্রমিক।
স্থানীয়রা জানান, মোর্শেদুল ইসলাম খামারে যোগদানের পর থেকে অনিয়ম দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে বিভিন্ন ফসলের বীজ বিক্রি, টেন্ডার ছাড়া গাছ বিক্রি, গোপনে খামারের পুরানো গাড়ীর যন্ত্রাংশ বিক্রি, শ্রমিকদের ভুয়া বিল ভাউসার তৈরি ও টেন্ডার বানিজ্য করে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
এছাড়া কৌশলে তার নিজ এলাকা থেকে নাজিম উদ্দিন নামের একজনকে খামারে অঘোষিত জেডি নিয়োগ দিয়েছেন। তার মাধ্যমে খামারে বিভিন্ন অনিয়ম সংঘটিত হয়। শ্রমিকের ভুয়া তালিকাও সে তৈরী করে।
জানা গেছে, যুগ্ম পরিচালকের জন্য সরকার মাসিক বাসা ভাড়া দিলেও সে ভাড়া বাসায় না থেকে অবৈধভাবে খামারের অতিথি ভবন (রেস্ট হাউজ) ব্যবহার করে আসছেন। অতিথি ভবন নিজের বাসা হিসেবে ব্যবহার করলে তাকে প্রতি মাসে সরকারের নির্দিষ্ট ভাড়া পরিশোধ করার কথা থাকলেও তিনি কোন টাকা জমা দেননি। ফলে সরকারকে তিনি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আসছে। এছাড়া বিনা কারনে সরকারকে বাবুর্চি, পাহারাদার এবং বিদ্যুৎ ও এসি বিল বাবদ গুনতে হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। এছাড়াও সরকারি গাড়ী ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারেরও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
মোর্শেদুল ইসলাম সরকারের লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করে চুয়াডাঙ্গায় তার শশুরের এলাকায় গরুর ফার্ম করেছেন। তার এই অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবাদে খামার এলাকার চিৎলা, জুগিন্দা, নিত্যানন্দপুর ও বাঁশবাড়িয়া গ্রামের সচেতন মহল মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশও করেছেন। এছাড়া বিভিন্ন মাধ্যমে তিনার অনিয়ম ও দুর্নীতির সংবাদ প্রচার হলেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেননি।
এ ব্যাপারে জেডই মোর্শদুল ইসলামের সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি সব প্রশ্নের উত্তরে বলেন নো কমেন্টস।