গেল বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম ধরা পড়ে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। এরপর বিশ্বের অন্তত ২০০টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এ ভাইরাস। এ ভাইরাসে এখন পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১১ লাখ ৩০ হাজার এবং মৃতের সংখ্যা ৬০ হাজার ছাড়িয়েছে। এছাড়াও এ ভাইরাস থেকে সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে গেছেন ২ লাখ ২৩৫ হাজার।
এ প্রাণঘাতী করোনায় চীনে মারা গেছে ৩৩২৬ জন এবং আক্রান্ত হয়েছেন ৮১,৬৩৯ জন।
এদিকে, বিশ্বজুড়ে তাণ্ডব সৃষ্টি করে চলা নোভেল করোনাভাইরাস কি সত্যিই প্রকৃতি থেকে সৃষ্টি, নাকি এটাকে চীনের ল্যাবে তৈরি করা হয়েছে? এটা নিয়ে বিতর্ক শুরু থেকেই উঠছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও ইরান দাবি করেছে, করোনা কোন ভাইরাস নয়, এটা চীনের উহানের ল্যাবে তৈরি মারাত্মক জৈব রাসায়নিক বোমা। তবে চীন জোর গলায় এটাকে ‘ষড়যন্ত্র তত্ব’ আখ্যা দিয়ে প্রত্যাখ্যান করেছে।
তবে এবার নতুন প্রমাণ সামনে এসেছে, সেখানে দেখা যাচ্ছে চীনের উহানের ল্যাব থেকেই ছড়িয়েছে করোনাভাইরাস। এটাকে এখন আর অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই।
দ্য ব্লিজ এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক কালে প্রকাশ্যে আসা বেশ কয়েকটি নতুন প্রমাণ এই ইঙ্গিত দেয় যে ভাইরাসটি চীনের উহান শহরে একটি ভাইরোলজি ল্যাবেই তৈরি করা হয়েছিল।
এর আগে, এ বিষয়ে গতকাল শুক্রবার ন্যাশনাল রিভিউয়ের সিনিয়র সংবাদদাতা জিম জেরাঘাটির লেখা একটি দীর্ঘ নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। করোনা নিয়ে একটি ডকুমেন্টারি নির্মাণের জন্য তিনি চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং ইউটিউবার ম্যাথু টাইয়ের সঙ্গে দীর্ঘ দিন চীনে অবস্থান করেছেন। বিশদভাবে তদন্ত করেছেন। সাম্প্রতি তিনি ইউটিউবে বেশকিছু ভিডিও আপলোড করেছেন, সেখানে ভাইরাসটির উৎস সনাক্ত করতে পেরেছেন বলে দাবি করা হয়েছে।
জেরাঘটি নিশ্চিতভাবে লক্ষ্য করেছেন যে, ভাইরাসটির উৎপত্তি সম্পর্কে এই ভিডিওগুলো দেখলে সহজেই বোধগম্য হবে। যে কেউ বুঝতে পারবেন ভাইরাসটির উৎপত্তি কোথায়। এখানে ভাইরাসটির উৎপত্তি সম্পর্কে প্রচুর তথ্য রয়েছে। মানুষ যাতে সহজেই বিষয়টা উপলব্ধি করতে পারে এ জন্য তিনি ভিডিওটি ইন্টারনেটে আপলোড করেছেন। বিশ্বাস না হলে ভিডিওটি দেখে নিতে পারেন।
এমন একটি প্রমাণ হল, উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি কর্তৃক গত বছরের শেষের দিকে কাকতালীয়ভাবে দুটি সন্দেহজনক চাকরির অফার পোস্ট করা হয়।
রহস্যজনক চাকরির অফার
গত বছরের ১৮ নভেম্বর, ল্যাবটি একটি বিজ্ঞাপন দিয়েছিল যাতে বিজ্ঞানীদের ‘করোনভাইরাস এবং বাদুড়ের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা করতে’ অনুরোধ করা হয়েছিল। জব অফারটিতে লেখা ছিল- “বাদুড়কে গবেষণামূলক বিষয় হিসাবে গ্রহণ করে আমি মলিকুলার মেকানিজমের মাধ্যমে এমন সব প্রক্রিয়ার উত্তর দেব যা দীর্ঘকাল ধরে কোনও রোগ ছাড়াই ইবোলা এবং সার্স সম্পর্কিত করোনভাইরাসের সঙ্গে সহাবস্থান করতে পারে এবং এর সাথে এটি বেশি উড়তে পারবে এবং দীর্ঘদিন বেঁচে থাকবে। ভাইরাস, ইমিউনোলজি, সেল জীববিজ্ঞান এবং একাধিক ওমিক্স মানব এবং অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে পার্থক্য তুলনা করতে ব্যবহৃত হয়।”
তার একমাস পরে ২৪ ডিসেম্বর, ল্যাবটি আরও একটি কাজের উদ্বোধন করে। এবার উল্লেখ করা হয়েছে, ‘গুরুত্বপূর্ণ ভাইরাস বহনকারী বাদুড়ের প্যাথোজেনিক বায়োলজির উপর দীর্ঘমেয়াদী গবেষণাটি মানব ও প্রাণিসম্পদের বড় বড় নতুন সংক্রামক রোগের বাহক হিসাবে বাদুড়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। যেমন- সার্স,এসএডিএস, প্রচুর পরিমাণে নতুন ব্যাট এবং দুর্যোগপূর্ণ নতুন ভাইরাস সনাক্ত করা হয়েছে।
সাবলীল চাইনিজ বলতে পারা টাই দাবি করেছেন, ‘আমরা একটি নতুন এবং ভয়ানক ভাইরাস আবিষ্কার করেছি এবং এর সাথে মোকাবিলার জন্য লোক নিয়োগ করতে চাই।’
দ্বিতীয় চাকরির বিজ্ঞাপনের সময়, চীনে তথাকথিত ‘রহস্যময় নিউমোনিয়া’ সংক্রমণ চলছিল। তবে এরও এক সপ্তাহ পরে চীন সরকার তার জনসংখ্যাকে নোভেল করোনাভাইরাস সংক্রামিত হওয়ার বিষয়টি সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে অবহিত করেছিল।
বৈজ্ঞানিক গবেষণা পত্র
ফক্স নিউজের সঞ্চালক টাকের কার্লসন মঙ্গলবার রাতে তার প্রাইমটাইম শোতে ভিডিওটির আকর্ষণীয় একটি অংশ তুলে ধরেছিলেন। সেখানে ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ চীন প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রকাশিত একটি গবেষণামূলক প্রবন্ধ তুলে ধরা হয়।
‘গবেষণা পত্র : ২০১৯-এন কোভি করোনভাইরাসের সম্ভাব্য উৎস’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে ভাইরাসটি সম্ভবত এমন একটি প্রাণী থেকে এসেছিল যেটা ঘোড়ামুখো বাদুড়ের মতো দেখতে। কার্লসন বলেছিলেন, এখানে চমকপ্রদ বিষয় রয়েছে উহানের ৯০০ কিলোমিটারের মধ্যে বাদুড়ের কোনও কলোনী নেই।
এছাড়া, কার্লসন উল্লেখ করেছিলেন যে উহানের যে সামুদ্রিক বাজারে এই বিশেষ বাদুড় বিক্রি হয়েছিল বলে দাবি করা হয়েছে সেটারও কোন সত্যতা মেলেনি। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ফেব্রুয়ারিতে জানিয়েছিল যে, রোগ নিয়ন্ত্রণ এবং প্রতিরোধের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রগুলি বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও বাজারে বাদুড় উপস্থিত ছিল কিনা তা নিশ্চিত করতে পারেনি।
এর আগে করোনাকে জৈব অস্ত্র দাবি করে বক্তব্য রেখেছিলেন ইসরায়েলি ও মার্কিন বিজ্ঞানীরা। ‘জেনেটিক্যালি মডিফায়েড’ এই করোনাভাইরাসের জন্মদাতা চীনের উহানের বায়োসেফটি ল্যাবোরেটরি লেভেল ফোর বলে দাবি করেছিলেন মার্কিন আইনজীবী ও রাসায়নিক মারণাস্ত্র বিরোধী সংগঠনের অন্যতম সদস্য ড. ফ্রান্সিস বয়েল। বলেছিলেন শক্তিশালী রাসায়নিক মারণাস্ত্র করোনাভাইরাস, ছড়িয়েছে উহানের ল্যাব থেকেই।
ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয়েস কলেজের আইনের অধ্যাপক ড. ফ্রান্সিস বয়েল। রাসায়নিক অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণ সংগঠনেরও অন্যতম মাথা তিনি। তাঁর উদ্যোগেই ১৯৮৯ সালে ‘বায়োলজিক্যাল ওয়েপনস অ্যান্টি-টেররিজম অ্যাক্ট’ বিল পাশ হয়। নোভেল করোনাভাইরাস যে নিছকই কোনও ভাইরাসের সংক্রমণ নয়, সে বিষয়ে আগেও মুখ খুলেছিলেন ড. ফ্রান্সিস।
ইসরায়েলি গোয়েন্দা ও মাইক্রোবায়োলজিস্টদের দাবির সমর্থন জানিয়েই ড. ফ্রান্সিস বয়েল বলেন, উহানের ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির বায়োসেফটি লেভেল ফোর ল্যাবোরেটরিতে অতি গোপনে রাসায়নিক মারণাস্ত্র বানানোর প্রক্রিয়া চলছে। সেখান থেকেই ছড়িয়েছে এই ভাইরাসের সংক্রমণ। সি-ফুড মার্কেটের ব্যাপারটা নেহাতই চোখে ধুলো দেওয়ার চেষ্টা। আর এই কথা বিলক্ষণ জানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সব জেনেও গোটা বিষয়টাকে ধামাচাপা দেওয়ার কৌশলী চেষ্টা চলছে।
ড. ফ্রান্সিস বয়েল আরও বলেছিলেন, উহানের এই বায়োসেফটি লেভেল ফোর ল্যাবোরেটরিকে সুপার ল্যাবোরেটরির তকমা দিয়েছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বলা হয়েছিল, এই ল্যাবে ভাইরাস নিয়ে কাজ হলেও তা অনেক বেশি সুরক্ষিত ও নিরাপদ। ল্যাবোরেটরির জন্যই রয়েছে আলাদা উইং যার বাইরের পরিবেশের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ নেই।
ড. ফ্রান্সিস বলেন, সার্স ও ইবোলা প্রাণঘাতী হয়ে ওঠার পরে অভিযোগের আঙুল ওঠে এই গবেষণাগারের দিকেই। রোগ প্রতিরোধ নয়, বরং প্রাণঘাতী জৈব অস্ত্র বানাতেই মত্ত গবেষকরা। যারই পরিণতি হাজার হাজার মৃত্যু। নোভেল করোনাভাইরাসের জিনগত বদল ঘটানো হয়েছে এবং উহানের এই ল্যাবোরেটরি থেকেই যে ভাইরাস ছড়িয়েছে সেটাও জানেন ডব্লিউএইচও’র অনেক গবেষকই।
সুত্র-বাংলাদেশ প্রতিদিন