১৯১৯ সালের ৪ মে উত্তাল হয়ে ওঠে প্রাঙ্গণটি। সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ওই আন্দোলনে ফুঁসে ওঠেন শিক্ষার্থীরা। এর ৭০ বছর পর ১৯৮৯ সালে একই স্থানে গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের দাবিতে সোচ্চার হন শিক্ষার্থী-জনতা। এখনো ওই স্থানে সমবেত হন তরুণেরা। তাঁরাও হাত মুঠি করে শূন্যে ছুড়ে কণ্ঠে আওয়াজ তোলেন। সোচ্চার হন। তবে স্থান এক হলেও প্রেক্ষাপট ভিন্ন। ইস্যু ভিন্ন। একেবারেই ভিন্ন। বিশেষ করে দ্বিতীয় আন্দোলনের ঠিক উল্টো চিত্র। বলা যায়, বর্তমানের এই তরুণ সমাবেশ দ্বিতীয় আন্দোলনটিকে মুছে ফেলার অন্যতম এক প্রক্রিয়া।
এই তো সেদিন চীনের বেইজিংয়ের তিয়েনআনমেন স্কয়ার থেকে অল্প দূরত্বে ট্র্যাকস্যুট পরে একটি প্রতিষ্ঠানের তরুণ কর্মীরা বাতাসে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কমিউনিস্ট পার্টির প্রতি তাঁদের আনুগত্য প্রকাশ করছিলেন। গ্রুপ ছবি তোলার জন্য তাঁরা সরে গেলে সে জায়গায় এসে দাঁড়ালেন টেকনিক্যাল কলেজের ৪০ শিক্ষার্থী। বিশ্বস্ত থাকার অঙ্গীকার করলেন তাঁরাও। ওই সময় তরুণদের আরও দল একই শপথ নেওয়ার অপেক্ষায় সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে।
শপথ নেওয়ার জন্য স্থান বেছে নেওয়া হয়েছে রেড বিল্ডিং বা লাল ভবন নামের লালচে-বাদামি রঙের প্রাসাদের উঠানটিকে। শতাব্দী আগে এটা ছিল চীনের সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়, পরে সেটি উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে স্থানান্তরিত হয়। ১০০ বছর আগে ১৯১৯ সালের ৪ মে শিক্ষার্থীরা রেড বিল্ডিং থেকে বিক্ষোভ শুরু করেছিল এবং শহরের অন্যান্য স্থান থেকে তিয়েনআনমেনে সমবেত হয়েছিল। ৩০ বছর আগে ১৯৮৯ সালে জায়গাটি আরও একবার প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে বিখ্যাত হয়ে পড়ে। গণতন্ত্রের দাবিতে সে বছরের ১৫ এপ্রিল থেকে ৪ জুন পর্যন্ত ১ মাস ২০ দিন শিক্ষার্থী, জনতাসহ বিভিন্ন পেশাজীবী অবস্থান নিয়েছিলেন। তবে এর জন্য অনেক বড় মূল্য দিতে হয়েছে তাদের।
চীনে ৪ মে এখন যুব দিবস হিসেবে পালিত হয়। যদিও এর তাৎপর্য এখন তুমুল প্রতিযোগিতার মধ্যে। এ আন্দোলনকে দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে উপস্থাপন করে কমিউনিস্ট পার্টি। এ আন্দোলনকে দলের জন্মের দুই বছর আগের পটভূমি হিসেবে তুলে ধরে। আর উদারপন্থীরা একে গণতন্ত্রের জন্য দেশপ্রেমিকদের কান্না হিসেবে দেখেন। তাঁদের বিশ্বাস, রাজনীতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পশ্চিমা শিক্ষা গ্রহণ না করলে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকার আশা নেই চীনের।