প্রকৃতিতে শুরু হয়েছে ঋতু পরিবর্তন। শরতের পর হেমন্ত নেমে আসছে, কার্তিক মাস চলছে। সামনে শীত আসলেও এখন প্রকৃতি ঘোষণা করছে শীতের আগমন। প্রকৃতিতে ইতিমধ্যেই বইতে শুরু করেছে মৃদু শীতের ছোঁয়া। কুয়াশাচ্ছন্ন সকালের মতো লাগছে।
চুয়াডাঙ্গায় সারাদিন গরম থাকলেও গভীর রাত থেকে শুরু হয়েছে হালকা কুয়াশা। শীতকে ঘিরে বিভিন্ন পিঠাপুলির দোকান জমজমাট। বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী হেমন্তের পর অগ্রহায়ণ পার হলেই শীত আসবে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে প্রকৃতির বিরূপ প্রভাব ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শীতের শুরুতেই শীতের আগাম সতর্কতা পাওয়া যাচ্ছে।
আজ সকাল সাড়ে ৬টার দিকে চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কুয়াশার কারণে প্রকৃতিতে এক অন্যরকম পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘ প্রচণ্ড গরমের পর কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশ পেয়ে উচ্ছ্বসিত চুয়াডাঙ্গা জেলার বাসিন্দারা।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, যত দিন যাচ্ছে তাপমাত্রা ততই কমছে। প্রতি সন্ধ্যায় ঠাণ্ডা বাতাস বইতে শুরু করেছে। কুয়াশার মাত্রাও বাড়ছে। সম্প্রতি রেকর্ড করা সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল 23.5 ডিগ্রি
সেলসিয়াস।
গ্রামীণ বাঙালির জীবনে হেমন্ত মানেই নবান্ন উৎসবের মেজাজ। হেমন্ত এলে এ জনপদের মানুষের মধ্যে আনন্দ বিরাজ করে। হেমন্তের আগমনে, সকালবেলা গ্রামের পথে হাঁটতে হাঁটতে আমার পা ভেজা শিশির কণা। হেমন্তের আগমনে ক্ষেতে সোনালী ধান ওঠে। পাকা ধানের গন্ধে ভরে ওঠে চারপাশ। আর কয়েকদিন পর কৃষকের ঘরে ধানের সোনালি চারা ফুটে উঠবে এবং বাংলার গৃহিণীরা এই নতুন ধান থেকে বাঙালি পিঠা-পুলি তৈরি করবে।
কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাসজুড়ে বাংলাদেশে হেমন্ত ছড়িয়ে পড়ে। শরতের ফুল মাটিতে পড়ার পরপরই বাংলার বৈচিত্র্যে হেমন্তের আবির্ভাব ঘটে। বসন্তের মতো এর নিজস্ব কোনো রঙের গন্ধ বা মর্যাদা নেই। হেমন্ত মৌন শান্ত এবং অন্তর্মুখী। হেমন্তে প্রস্ফুটিত শিউলি, কামিনী, গন্ধরাজ, মল্লিকা, দেবকাঞ্চন, হিমঝুরি, রাজ অশোক প্রভৃতি ফুলের সুবাস বাঙালির জীবনে নতুন মেজাজ জাগায়। সকালের শিশির-ভেজা ঘাসে ফসলের সোনালী সাগর আর মুক্ত শস্যের ছড়াছড়ি প্রকৃতিকে পরিপূর্ণ করে তোলে। হেমন্তের সকালে শিউলির সুবাস বাঙালির প্রাণে নিয়ে আসে উৎসবের আমেজ।
চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার বিভিন্ন এলাকার স্থানীয়রা জানান, গত কয়েকদিন ধরেই গভীর রাতে কুয়াশা এবং ভোর থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত ঠান্ডা বাতাস বেড়েছে।
অনুভূতি যাইহোক, কুয়াশা দীর্ঘস্থায়ী হয় না. সূর্য উঠার সাথে সাথে কুয়াশা মুছে যায়। দামুড়হুদা উপজেলার জয়রামপুর এলাকার আব্দুল কাদের, নিয়মিত ফজরের নামাজ পড়তে বের হন। সকালে বেড়াতে এসে তিনি জানান, গত কয়েকদিন ধরে সকালে প্রচুর কুয়াশা পড়েছে। এমনকি দিনের বেলা সূর্যের তাপমাত্রাও কমেছে। বোঝা যাচ্ছে শীত আসছে।
এদিকে প্রকৃতিতে শীতল হাওয়া বইলেও তীব্র তাপদাহ দেখা গেছে এলাকার সবজি বাজারে। কিন্তু বাজারে মৌসুমি সবজির আগমনে এই গরম বেড়েছে। দামুড়হুদা বাজার, জয়রামপুর বাজার, ডুগডুগী বাজার ও কার্পাসডাঙ্গা কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায় ধনে, শিম। বাজারে আসছে বাঁধাকপি, মুলা, ফুলকপি, পালং শাক, গাজর, টমেটোসহ নানা ধরনের মৌসুমি সবজি। কিন্তু সরবরাহ কম থাকায় চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে এসব সবজি।
ফলে দিন ছাড়া রাতের একটি নির্দিষ্ট সময় থেকে প্রচুর হিমশীতল বাতাস বইতে শুরু করেছে। সন্ধ্যার পর থেকে রাত বাড়ার সাথে সাথে ঠান্ডা অনুভূত হয়। কুয়াশাও বাড়ছে। মধ্যরাত থেকে গভীর রাত পর্যন্ত শীত অনুভূত হচ্ছে। সম্প্রতি জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে 23.5 ডিগ্রি সেলসিয়াস।