চুয়াডাঙ্গায় জমে উঠেছে কোরবানীর পশুর হাট গুলো। আসন্ন ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে হাটগুলোতে বাড়ছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড়। কোরবানির পশুর দামও ভালো বলে জানাচ্ছেন ব্যবসায়ী ও খামারিরা। তাই পশু কিনতে আসা ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্য চলছে দর কষাকষি।
আজ সোমবার দামুড়হুদার ডুগডুগীর পশুহাট, ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
ডুগডুগী পশুহাটে গরু বিক্রি করতে আসা উপজেলার কুমারীদহ গ্রামের ব্যবসায়ী সুজন আলী বলেন, গত কয়েকদিনের তুলনায় এখন গরু-ছাগলের দাম তুলনামূলক বেশি। আজকে হাটে তিনটি গরু এনেছিলাম বিক্রির জন্য। পাঁচ হাজার টাকা করে লাভে দুটি বিক্রি করেছি। আরেকটা গরুর আশানুরূপ দাম না হওয়ায় বিক্রি করিনি। আগামী হাটে বিক্রি করবো।
জীবননগর উপজেলার মৃগমারী গ্রামের গরু ব্যবসায়ী বেল্টু বলেন, অন্যদিনের তুলনায় আজকের হাটে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ব্যাপারীরা এসেছেন। একারণে গরুর দামও বেশি। আজকে হাটে চারটি গরু এনেছিলাম। সবগুলো গরু বিক্রি হয়ে গেছে। লাভও বেশি হয়েছে। গরুর দাম এরকম থাকলে গরু পালনকারীরা লাভবান হবেন।
ডুগডুগী হাটে গরু কিনতে আসা খাইরুল ইসলাম নামে এক ক্রেতা বলেন, প্রতিবছর খামার থেকে গরু কিনে থাকি। খামার থেকে গরু কিনলে সুবিধা রয়েছে। ঈদ পর্যন্ত গরু খামারে রাখা যায়। বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার বাড়তি ঝামেলা পোহাতে হয় না। তবে এবছর গরুর দামটা একটু বেশি।
হাটে গরু কিনতে আসা সাঈদ শাহ্ নামে আরেক ক্রেতা বলেন, কোরবানি করার জন্য মাঝারি গরু খুঁজছি। এবছর গরু প্রতি ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা দাম বেশি মনে হচ্ছে। যেহেতু কোরবানি করতে হবে তাই বেশি দাম দিয়েই গরু কিনতে হচ্ছে।
এদিকে, চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে ১০ হাজার ৯১৭ টি খামার রয়েছে। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ২ হাজার ৬৭৬ টি, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৩ হাজার ৫৯৯ টি, দামুড়হুদা উপজেলায় ১ হাজার ৯২৮ টি এবং জীবননগর উপজেলায় ২ হাজার ৭১৪ টি। এসব খামারে কোরবানি উপলক্ষে ২ লাখ ১১ হাজার ৮৭৯ টি পশু প্রস্তুত রয়েছে। এর মধ্যে গরু ৫৪ হাজার ৮৯১ টি, মহিষ ১৬০ টি, ছাগল ১ লাখ ৫২ হাজার ৮৯৬ টি, ভেড়া ৩ হাজার ৯২৫ টি এবং অন্যান্য ৭টি।
জীবননগর উপজেলার অনন্তপুর গ্রামের খামারি আবুল কালাম বলেন, তিন বছর আগে খামার গড়েছিলাম। খামারে মোট ২০টি গরু রয়েছে। যার মধ্য ১৮টি গরু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। যদি গরুর দাম বর্তমান বাজারমূল্যে থাকে তাহলে খামারিরা লাভবান হবেন।
একই উপজেলার সেনেরহুদা গ্রামের খামারি রহিম শেখ বলেন, পাঁচ বছর আগে শখের বশে একটি খামার তৈরি করি। আমার খামারে বর্তমানে ১০টি গরু রয়েছে। যার মধ্য তিনটি গরু বিক্রি করেছি। বাকি গরু ঈদের মধ্যে বিক্রির আশা করছি। যদি এমন দাম থাকে তাহলে লাভবান হতে পারবো।
জীবননগর উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামের খামারি আবুল বাশার বলেন, আমার খামারে ৫০টি কোরবানি উপযুক্ত গরু ছিল। ২০টি গরু এরই মধ্যে ১ কোটি ১০ লাখ টাকায় বিক্রি করেছি। এখনো আমার খামারে ৩০টি গরু আছে। এই গরুগুলো আরও সাইজে বড়। বিক্রি না হওয়া পর্যন্ত বলতে পারছি না লাভ হবে না লোকসান হবে। তিনি আরও বলেন, খাবারের দাম গত বছরের তুলনায় এ বছর অনেক বেশি। এলাকায় বিক্রির উপযুক্ত কোরবানির গরু গত বছরের তুলনায় কম। বেচাকেনা গত বছরের তুলনায় কম হবে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. শামীমুজ্জামান শামীম জানান, জেলায় এবার কোরবানির জন্য ৫৪ হাজার ৯৭৯ টি গরু ও মহিষ মোজাতাজা করা হয়েছে। এছাড়া এবার ১ লাখ ৫৬ হাজার ৮২১ টি ছাগল ও ভেড়া কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। খামারগুলোতে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত পশু উৎপাদনে খামারিদের প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে নিয়মিত পরামর্শসহ বিভিন্ন সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, জেলার বিভিন্ন পশুহাট ও খামারগুলোতে কোরবানির পশু বিক্রি শুরু হয়েছে। খামারিদের পালনকরা পশু ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় চাহিদা পূরণ করবে। খামারিরা এবার কোরবানির পশুর ন্যায্যমূল্য পাবেন।
চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমান জানান, পশুহাটগুলোর নিরাপত্তার জন্য পুলিশের মোবাইল টিম কাজ করছে। গরুর হাটে জাল নোট অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের ঠেকানোর জন্য পুলিশের নজরধারী রয়েছে। ইতিমধ্যে গত ৪ দিন জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ অজ্ঞান পার্টির ৬ সদস্যকে কেমিকেল সহ আটক করতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়া ব্যাপারীদের পশু আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রেও পুলিশের বাড়তি নজরধারী রয়েছে।