বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বর্বরোচিত হামলার ঘটনার বর্ণনা করলেন চুয়াডাঙ্গার শিক্ষার্থীরা। প্রায় এক মাস পর এই প্রথম জেলার বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার শিকার শিক্ষার্থীরা মুখ খুললেন।
গতকাল বুধবার সকাল ১১টায় চুয়াডাঙ্গা শহরের তিন তারকা মানের হোটেল সাহিদ প্যালেসে ‘অভিজ্ঞতা : ঘটনার বর্ণন’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে লোমহর্ষক হামলা ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের গল্প শোনান এই শিক্ষার্থীরা। এ সময় চুয়াডাঙ্গা জেলার বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনে হামলার শিকার হয়ে আহত, কারাবরণকারী শিক্ষার্থীরা আবেগঘন বক্তব্য রাখেন। অশ্রুশিক্ত নয়নে কথা বলেন ঢাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হওয়া চুয়াডাঙ্গার সন্তান শাহরিয়ার শুভ’র পিতা।
জেলার বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ‘অভিজ্ঞতা : ঘটনার বর্ণন’ শিরোনামে বুধবার প্রথম শিক্ষার্থীরা এই ভিন্ন আয়োজন করে। চুয়াডাঙ্গা শহর, সরোজগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, ভালাইপুর, আলমডাঙ্গা, দর্শনা ও জীবননগরসহ জেলার যেখানে যেখানে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামেন সেখনেই তারা হামলার শিকার হন। হামলার শিকার শিক্ষার্থীরা নানাভাবে মানসিক নিপিড়নের শিকার হন সেটিও উঠে আসে এই আয়োজনে। শিক্ষার্থীদের আমন্ত্রণে গণমাধ্যমকর্মী, সুশিল সমাজের প্রতিনিধি ও আইনজীবীরা এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। শিক্ষার্থীরা তাদের এবং তাদের পরিবারের ওপর বিভিন্ন চাপের বিষয়টিও তুলে আনেন এ অনুষ্ঠানে।
অনুষ্ঠানে আইনজীবীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, চুয়াডাঙ্গা জেলা জজ আদালতের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাড. মারুফ সরোয়ার বাবু ও অ্যাড. মানি খন্দকার। গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, চুয়াডাঙ্গা সাংবাদিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক প্রবীণ সাংবাদিক আজাদ মালিতা, চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি রাজীব হাসান কচি, চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাড. মানিক আকবর, সিনিয়র সাংবাদিক এম এ মামুন।
শিক্ষার্থীদের পাশে শুরু থেকেই ছিলেন চুয়াডাঙ্গার কৃর্তি সন্তান, এনআরবি ওয়ার্ল্ডের প্রেসিডেন্ট ও সাহিদ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলহাজ্ব সাহিদুজ্জামান টরিক। তিনি এই অনুষ্ঠানে মুঠোফোনে যুক্ত হয়ে পুনরায় শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার অভিব্যক্তি জানান।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চুয়াডাঙ্গার শিক্ষার্থীদের পক্ষে সাফফাতুল ইসলামের সঞ্চালনায় এ সময় উপস্থিত ছিলেন, দৈনিক সময়ের সমীকরণ এর প্রধান সম্পাদক নাজমুল হক স্বপন, চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বিপুল আশরাফ, জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান সেলিম, সিনিয়র সাংবাদিক এম এম আলাউদ্দীন, দৈনিক আকাশ খবর পত্রিকার সম্পাদক জান্নাতুল আওলিয়া নিশি, সিনিয়র সাংবাদিক রফিক রহমান, সাংবাদিক জামান আক্তার, মশিউর রহমান, মাহফুজ মামুন, মফিজ জোয়ার্দ্দার, জিসান আহমেদ, মেহেরাব্বিন সানভী, শামসুজ্জোহা রানা, রুদ্র রাসেল, পলাশ উদ্দীন, সাইফুল ইসলাম, সাকিব, ফাহিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অব চুয়াডাঙ্গার সভাপতি সাইফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা ইকবাল হৃদয় প্রমুখ।
আবেগঘন বক্তব্য রাখেন, আন্দোলন করে মিথ্যা মামলায় চুয়াডাঙ্গাতে কারাবরণকারী শিক্ষার্থী শাহরিয়ার প্রান্ত। আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের মেধাবী ছাত্রী সিরাজুম মুনীরা, হাসনা জাহান খুশবু, মহিলা কলেজের অনিমা ইসলাম, ভাঙবাড়িয়া গ্রামের আসাদুজ্জামান, আলমডাঙ্গা সরকারি কলেজের ছাত্র আরাফাত হোসেন, সরোজগঞ্জ তেতুল শেখ কলেজের ছাত্র তানজিল হোসেন, আলমডাঙ্গা এমএস জোহা ডিগ্রি কলেজের হারুন অর রশিদ, বদরগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের ছাত্র তামিম হোসেন, দামুড়হুদার তাসলিম আল মাহমুদ, সরোজগঞ্জের সাব্বির আহমেদ, হাটবোয়ালিয়ার মাহফুজ আনাম, মুন্সিগঞ্জের উৎসবসহ আন্দোলনে চুয়াডাঙ্গাতে এবং ঢাকায় সরাসরি অংশ নিয়ে নানাভাবে আহত হওয়া শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন, গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হওয়া শাহরিয়ার শুভ’র পিতা আবু সাঈদ। অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে চোখ হারাতে বসা শিক্ষার্থী আল মেরাজকে জাতীয় পতাকা গায়ে জড়িয়ে দিয়ে সম্মান জানান শিক্ষার্থীরা।
‘অভিজ্ঞতা: ঘটনার বর্ণন’ অনুষ্ঠানে আহত শিক্ষার্থীরা করুণ ইতিহাস তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন। কিভাবে তাদেরকে মারধর করা হয়েছে, তাদের পরিবারের সদস্যদেরকে কিভাবে হুমকি দেয়া হয়েছে সেসব নির্মম ঘটনার বর্ণনা দেন শিক্ষার্থীরা। আইনজীবীরা শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার আশ্বস্ত করেন। বিচারের জন্য মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে বিনা পয়সায় সকল প্রকার সহযোগীতা করার কথা দেন। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে দ্রুতই মামলা করা হবে বলেও অনুষ্ঠানে জানানো হয়।