চুয়াডাঙ্গায় ঈদকে সামনে রেখে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা বেপরোয়া, টার্গেট গরু ব্যবসায়ীরা

চুয়াডাঙ্গায় ঈদকে সামনে রেখে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা বেপরোয়া, টার্গেট গরু ব্যবসায়ীরা

পবিত্র ঈদ-উল-আজহাকে সামনে রেখে চুয়াডাঙ্গা জেলায় অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তাদের প্রধান টার্গেট গরু ব্যবসায়ী। সাপ্তাহিক পশুহাটের দিনগুলোতে তাদের খপ্পরে পড়ছেন গরু ব্যবসায়ী।

খোয়াচ্ছেন নগদ টাকা, অসুস্থ হয়ে যাওয়ার পর তাদের ভর্তি করা হচ্ছে নিকটস্থ হাসপাতালে। কিন্তু কোনোভাবেই অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। তারা থেকে যাচ্ছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের সম্পর্কে গরু ব্যবসায়ীদের সচেতন করতে তেমন কোনো প্রচারণা নেই প্রশাসন ও হাট কর্তৃপক্ষের।

গতকাল বৃহস্পতিবার (২৩শে) দুপুরে চুয়াডাঙ্গা জীবননগর উপজেলার শিয়ালমারী পশুহাটে গরু বিক্রি করে বাড়ি ফেরার সময় অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের খপ্পরে পড়ে আনুমানিক নগদ ৩ লক্ষ টাকা খুইয়েছেন ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার কাকলেদাঁড়ি গ্রামের সানোয়ার হোসেন (৪৫)। তিনি একই গ্রামের ফেলা মণ্ডলের ছেলে। ভুক্তভোগী সানোয়ার হোসেনের স্ত্রী মাহফুজা খাতুন বলেন, আমার স্বামী একজন গরু ব্যবসায়ী।

গতকাল বৃহস্পতিবার বাড়ি থেকে দুটি গরু ও নগদ এক লক্ষ টাকা নিয়ে তিনি শিয়ালমারী পশুহাটে যান। বেলা ৩টার দিকে জানতে পারি আমার স্বামী অজ্ঞান অবস্থায় জীবননগর পশু হাসপাতালের সামনে পড়ে আছে। তার কাছে কোনো টাকা-পয়সা নেই। পরবর্তীতে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।

এর আগে গত ১৬ই মে (বৃহস্পতিবার) শিয়ালমারী পশুহাটে অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের খপ্পরে পড়ে নগদ ৪ লক্ষ টাকা হারিয়েছেন ফরিদপুর সদর থানার বসন্তপুর গ্রামের আবেদ শেখের ছেলে ইউনুস শেখ (৪৫)। গরু ব্যবসায়ী, ইউনুস বলেন ফরিদপুর থেকে গরু কেনার উদ্দেশ্যে শিয়ালমারী পশুহাটে পৌঁছানোর পর তিনি হাটের একটি হোটেলে দুপুরের খাবার খান। এরপর অসুস্থবোধ করলে লোকজন তাকে হাটের মসজিদে গিয়ে বিশ্রাম নিতে বলেন। মসজিদে ঘুমিয়ে পড়ার পর ঘুম থেকে উঠে দেখেন তার লুঙ্গির নিচে কোমরে কাপড়ের ব্যাগে থাকা নগদ ৪ লক্ষ টাকা নিয়ে চম্পট দিয়েছে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা।

এছাড়া গত সোমবার (২০শে মে ২০২৪) চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার ডুগডুগি পশুহাটের দিন অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে দেড় লক্ষাধিক টাকা হারিয়েছেন মহেশপুর উপজেলার জয়নাল আবেদীন। জীবননগর এলাকা থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় বলে জানা গেছে।

প্রশাসন এবং হাট কর্তৃপক্ষ মনে করেন, অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের সম্পর্কে পশুহাটে আসা ক্রেতা-বিক্রেতাদের সচেতন হওয়ার বিকল্প নাই। শুধু ঈদের সময় না, সরাবছরই তাদের সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। ঈদের হাট পুরোপুরি জমে উঠলে অজ্ঞান পার্টি সম্পর্কে হাটে আগত ক্রেতা-বিক্রেতাদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে সচেতন করা হয়। বিতরণ করা হয় লিফলেট। কিন্তু অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা কৌশল অবলম্বন করে হাট জমে ওঠার আগে সক্রিয় হয়েছে। হাট কর্তৃপক্ষ জানান, ‘বেশিরভাগ সময় বিভিন্ন যানবাহনে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়েন গরু ব্যবসায়ীরা। হাটের দিনে এসব ঘটনা বেশি ঘটার কারণে দোষ হয় হাট কর্তৃপক্ষের। কারণ হাট এলাকা থেকে তাদেরকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তবে অনেক সময় হোটেলে খাবার খাওয়ার পরেও তারা অচেতন হয়ে যান। হাটের খাবার হোটেলের লোকজন অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের সাথে জড়িত আছে কি না এ বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি গরু ব্যবসায়ীদের নিজেদের সাথে থাকা লোকজন সম্পর্কেও তাদের সচেতন হওয়া উচিত।’

তবে এখন থেকে শুরু করে পবিত্র ঈদ-উল-আজহার শেষ হাট পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা জেলার হাটের দিনগুলোতে অজ্ঞান পার্টি সম্পর্কে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সচেতন করতে প্রশাসন ও হাট কর্তৃপক্ষের জোরালো ভূমিকা পালন করা উচিত। যদিও অন্যান্য বার ঈদের সময় অজ্ঞান পার্টির তৎপরতা রুখতে কঠোর ভূমিকায় পালন করে প্রশাসন ও হাট কর্তৃপক্ষ। তবে এবার এখনও পর্যন্ত তেমন কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি।