চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার দোস্ত গ্রামে টাকা চুরির অপবাদ দিয়ে পঞ্চম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রকে প্রকাশ্যে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনায় বাবা-মেয়েকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সোমবার দুপুরে উপজেলার দোস্ত গ্রামে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে দর্শনা থানা পুলিশ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে দর্শনা থানার উপপরিদর্শক এসআই আহম্মদ আলী বিশ্বাস বলেন, দুপুরে তাদেরকে আটক করা হয়েছে। বিকেলে নির্যাতনের শিকার শিশুটির মা ফাতেমা খাতুন বাদী হয়ে দুজনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করেছেন। এ মামলায় বাবা-মেয়েকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। দর্শনা থানার মামলা নং ১৩।
গ্রেপ্তাররা হলেন-চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নের দোস্ত গ্রামের মৃত নুরুল হকের ছেলে মায়ের দোয়া ফ্যাশন হাউজের মালিক আলী আহমদ ও তার মেয়ে রুমানা আক্তার রুমা।
এর আগে গত রোববার দুপুরে দোস্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণির এক স্কুলছাত্র (১১) টিফিনের সময় বিদ্যালয়ের পাশের মায়ের দোয়া ফ্যাশন হাউজে খাবার কিনতে যায়। এ সময় টাকা চুরির অপবাদ দিয়ে মারধর করে দোকানের বাঁশের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখে মালিকপক্ষ।
পরে ওই স্কুলছাত্রের শরীর তল্লাশী করে কোনো টাকা পাওয়া যায়নি। খবর পেয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক ঘটনাস্থলে গিয়ে ছাত্রকে মুক্ত করে নিয়ে আসেন।
দোকান মালিক বলেন, বেশিরভাগ সময়ই বাড়ির নারীরা দোকানটি পরিচালনা করেন। প্রতিনিয়ত দোকানের টাকা চুরির ঘটনা ঘটছে। এর আগেও বিদ্যালয়ের এক ছাত্রী এমন ঘটনা ঘটিয়েছে। বিষয়টি স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোনো সুরাহা হয়নি।
রোববার টাকা চুরির সময় পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রকে হাতেনাতে আটক করে দোকান মালিকের মেয়ে রুমা। এই অভিযোগে কিছুক্ষণ দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখলেও মারধর করা হয়নি তাকে। তার কাছ থেকে কোনো টাকা পাওয়া যায়নি। পরে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চায় মালিকপক্ষ।
স্থানীয়রা জানায়, প্রায়ই এই দোকান থেকে টাকা চুরির ঘটনা ঘটে। অভিযুক্তকে ধরতে তারা ওঁৎ পেতে থাকে। রোববার দুপুরে স্কুল টিফিনের সময় ওই স্কুলছাত্র খাবার কিনতে দোকানে আসলে তাকে আটক করে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে মারপিট করা হয়। তবে তার শরীর তল্লাশি করে কোনো টাকা পাওয়া যায়নি।
কেউ যদি চুরিও করে তাহলে আইনি পদক্ষেপ নেওয়াটা জরুরি। নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়া ঠিক হয়নি তাদের। তাও সে একজন শিশু। শিশুর প্রতি এমন আচরণের ধিক্কার জানাই।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মোমিন বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। গত রোববার দুপুরে জানতে পেরে ওই দোকানে যায় এবং আমার ছাত্রকে মুক্ত করে আনি। তবে তার কাছে কোনো টাকা পাওয়া যায়নি। দোকানি মারধর না করলেও প্রকাশ্যে বেঁধে রেখেছিল তা স্বীকার করেছে। এটাও শিশু নির্যাতন।
তিনি আরও বলেন, আমার ছাত্র যদি কোনো অপরাধ করে থাকে তাহলে আমাকে বলতেন, আমি ক্ষতিপুরণ দিতাম। মিথ্যা চুরির অপবাদ দিয়ে শিশুর প্রতি এমন আচরণ কাম্য নয়।
তবে ওই দোকানে থাকা রোমানা খাতুন নামে এক নারী বলেন, আমি হাতেনাতে টাকাসহ ধরেছি আরাফাতকে। তাই বেঁধে রেখেছিলাম।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু সালেহ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আমি রাতে ঘটনাটি শুনেছি। কেউ যদি চুরিও করে এভাবে বেঁধে রেখে নির্যাতন করা ঠিক হয়নি।
দর্শনা থানার উপ-পরিদর্শক এসআই আহমেদ আলী বিশ্বাস বলেন, সোমবার দুপুরে অভিযুক্ত বাবা-মেয়েকে আটক করা হয়েছে। বিকেলে ভুক্তভোগীর মা বাদী হয়ে দুজনের নাম উল্লেখ করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেছেন। মামলা রেকর্ড প্রক্রিয়াধীন।
এ বিষয়ে দর্শনা থানার অফিসার ইনচার্জ এ এইচ এম লুৎফুল কবির বলেন ঘটনা শোনার সাথে সাথে আমরা বাবা মেয়েকে আটক করেছি। এবং তাদেরকে শিশু নির্যাতন মামলায় গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে