চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের নেতৃত্বের সংস্করণের দাবী জানিয়েছে জেলা সাধারণ সাংবাদকর্মী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গতকাল রবিবার দুপুর ৩টায় জেলার সাধারণ সংবাদকর্মী ও বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা দু’দফা দাবী জানিয়ে প্রেসক্লাবের সামনে সমবেত হয়।
এসময় তারা প্রেসক্লাবে রাজনৈতিক প্রভাব সম্পৃক্তকরণ ও সাধারণ সংবাদকর্মীদের অধিকার হরণের প্রতিবাদ জানিয়ে দু’দফা দাবি পেশ করেন। এ দাবীতে তারা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন প্রাব বিস্তার করে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবকে কুক্ষিগত করার পায়তারায়, যোগ্যদের প্রেসক্লাবে অর্ন্তভূক্তকরণ করা হয়নি। তাদেরকে অর্ন্তভূক্ত করে, বর্তমান কার্য নির্বাহী কমিটি ভেঙ্গে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করতে হবে।
আন্দোলনকারী গণমাধ্যমকর্মীদের পক্ষে জানানো হয়, চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সর্বশেষ নির্বাচনের পর নির্বাচিত কমিটি ক্লাবের সদস্য ব্যতীত সকল গণমাধ্যমকর্মীদের ক্লাবে প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করেছে। চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব জেলার সাধারণ সাংবাদিকদের অধিকার হরণ করে স্বার্থান্বেষীভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলো। প্রকৃত সাংবাদিকদের বাইরে রেখে দলীয় প্রভাবের মাধ্যমে ক্লাবকে কুক্ষিগত করে রাখা হয়েছে। সরাসরি রাজনীতি করে ও দলীয় সমর্থনে নির্বাচিত পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কামরুজ্জামান চাঁদ প্রেসক্লাবের নির্বাহী কমিটির পদে রয়েছেন। চুয়াডাঙ্গা আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক আবুল হাশেম ও মুহাম্মদ আতিয়ার রহমান এবং একই প্রতিষ্ঠানের শারীরিক প্রশিক্ষক ইসলাম রকিব সরকারি চাকরী ও এমপিওভুক্ত চাকরী করেও এ ক্লাবের নির্বাহী পদে আছেন। শুধু তাই নয়, ক্লাবের গঠনতন্ত্র না মেনে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বছরের পর বছর যোগ্য সংবাদকর্মীদের সদস্য পদ দেয়া থেকেও বিরত রয়েছে প্রভাবশালী কয়েকজন। ক্লাবের গঠনতন্ত্রে স্থানীয় গণমাধ্যমের দু’জন করে প্রতিনিধিকে সহযোগী সদস্য করে অর্ন্তভূক্ত করার নিয়ম থাকলেও তা করা হয়নি। তবে অযোগ্যরা স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে অনায়াশেই ক্লাবের সদস্য পদসহ গুরত্বপূর্ণ পদেও স্থান পেয়েছেন।
চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব নিরপেক্ষ করার জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, গণমাধ্যমকর্মীদের এ আন্দোলনে সম্মতি জানিয়েছেন। নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার দাবী তাদেরও। এতে স্বতস্ফূর্তভাবে অংশ নেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চুয়াডাঙ্গার অন্যতম সমন্বয়ক সাফ্ফাতুল ইসলাম। চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের নেতৃত্বের সংস্করণের দাবী জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যকর্মী ভাইয়েরা সত্য প্রকাশে কাজ করেন। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে আমরা দেখেছি যারা সত্য প্রকাশে কাজ করতে চেয়েছেন তাদেকে বাধা দেয়া হয়েছে। প্রেসক্লাব থেকে আমাদের ন্যয্য দাবীতে করা আন্দোলনে কোন প্রকার সহযোগীতা করা হয়নি। ক্ষমতাসীন দল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। প্রেসক্লাবে রাজনৈতিক প্রভাবের স্থান থাকায় ক্লাবের নেতৃত্বস্থানীয় সংবাদকর্মীরা অন্য সাধারণ সংবাদ কর্মীদের কাজেও বাধা সৃষ্টি করেছে। আমরা চাই স্বচ্ছ প্রেসক্লাব, যেখানে সকলের সমঅধিকার থাকবে। সত্য প্রকাশে সংবাদকর্মীরা থাকবেন নির্ভীক। আমরা ক্লাবের নেতৃত্বের সংস্করণে যোগ্যদের স্থান দেয়া ও পূর্বের কমিটি ভেঙে আহ্বায়ক কমিট গঠন করাসহ দু’দফা দাবী জানাচ্ছি। অন্যথায় আমরা পরবর্তী বৃহৎ কর্মসূচি নিয়ে ক্লাবের সামনে সমবেত হবো।
এদিকে, গণমাধ্যমকর্মীদের প্রেসক্লাবের সামনে কর্মসূচীর খবর পেয়ে সেখানে আসেন চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি রাজীব হাসান কচি। তিনি সাংবাদিকদের দাবী মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন। কিছুক্ষণ পর সেখানে প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বিপুল আশরাফও আসেন। তারা সাংবাদিক ও শিক্ষার্থীদের তাদের দাবী পুরণে আশ্বস্থ করেছেন।
তবে আন্দোলনরত গণমাধ্যমকর্মীদের পক্ষে জানানো হয়েছে, দাবী মেনে না নেওয়া হলে, আজ সোমবার (১২ আগস্ট) বৃহৎ কর্মসূচী দেয়া হবে। ক্লাব ঘেরাও থেকে শুরু করে কয়েকজন দলীয় ব্যক্তিদের সদস্য পদ বাতিলের দাবিও উঠতে পারে। ইতোমধ্যে এ আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছেন, চুয়াডাঙ্গার জ্যৈষ্ঠ সাংবাদিকরাসহ উপজেলা পর্যায়ের গণমাধ্যমকর্মী ও বিভিন্ন প্রেসক্লাব।
আন্দোলনে দেখা যায়, চুয়াডাঙ্গার গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে সাংবাদিক হুসাইন মালিক, মাহফুজ মামুন, সুস্থির আজাদ, আহসান আলম, সাঈফ জাহান, মেহেরাব্বিন সানভী, আলমগীর হোসেন, আজাদুল ইসলাম আজাদ, এফ.এ.আলমগীর, রুদ্র রাসেল, বজলুল আলম জীবন, সাইফুল ইসলাম, সাকিবুর রহমান সাকিব, সাকিব আল হাসানসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ প্রমুখ।