ইউরোপের দেশ চেক রিপাবলিকে ক্রিকেট খেলায় মাঠ কাপাচ্ছে মেহেরপুরের সুহাস। সম্প্রতি বোহেমিয়ান নামের এক ক্লাব থেকে খেলে ইসিএন সুপার সিরিজ জয়লাভ করেছেন। সিরিজের সেরা খেলোয়াড়ের তকমাও কব্জা করেছেন সুহাস। ডাক পেয়েছেন দেশটির জাতীয় দলে। আগামী ২৭ আগষ্ট জাতীয় দলের হয়ে তার অভিষেক হওয়ার কথা রয়েছে।
পুরো নাম আবুল হুসাইন মো. শাহ্ ফরহাদ সুহাস। মেহেরপুর সদর উপজেলার রাধাকান্তপুর গ্রামের আবুল কাশেম মাস্টারের ছোট ছেলে। ২০০৯ সালে উচ্চ শিক্ষার জন্য লন্ডন পাড়ি দেন। সেখান থেকেই তিনি আন্ডার গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেন। পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে ইউনিভার্সিটি ক্রিকেট লিগের সঙ্গেও নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। এরপর থেকেই লন্ডনের ক্লাব ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ২০১৬ সালে বৃত্তি নিয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য চেক রিপাবলিকে যান। বর্তমানে সেখানকার ইউনিভার্সিটি অব দ্য ওয়েস্ট অফ স্কোটল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে (ডিসটেন্স লার্নিং প্রোগ্রাম) লন্ডন শাখায় এমবিএ-তে অধ্যায়নরত। পাশাপাশি রেস্তোরাঁ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত আছেন।
২০১৯ সালে চেক রিপাবলিকে ক্লাব ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত হোন সুহাস। সেখানকার বোহেমিয়ান ক্রিকেট ক্লাবের নিয়মিত সদস্য তিনি। প্রথম মৌসুমেই সুহাস চেক রিপাবলিকের জাতীয় ক্লাব ক্রিকেটের টি-টোয়েন্টি লিগে দশ ম্যাচ খেলেন। দশ ম্যাচে পাঁচের নীচে ইকোনমি রেট দিয়ে সংগ্রহ করেন ১৭টি উইকেট। সেরা বোলিং ছিল ভালভারি ক্রিকেট ক্লাবের বিপক্ষে ১১ রানে ৫ উইকেট। ব্যাটিংয়েও আলো ছড়িয়েছেন সুহাস। ক্লাবের হয়ে ৪/৫ পজিশনে ৭ ম্যাচে ব্যাটিং করার সুযোগ পেয়ে ৪১.৭১ গড়ে তার মোট রান ২৯২। এর মধ্যে একটি অর্ধশতকও রয়েছে।
চেক রিপাবলিকে ক্রিকেট খেলা শুরুর গল্পটা বলতে গিয়ে সুহাস বলেন, একেবারে আকস্মিকভাবে ২০১৯ সালের টি-টোয়েন্টি লিগ দিয়ে আমার চেক রিপাবলিকে ক্রিকেট খেলা শুরু। আমি যেখানে চাকরি করতাম সেখানের এক পাকিস্তানি সহকর্মী আমার ক্রিকেট খেলতে পারার কথা জানতে পেরে লিগে খেলার জন্য নিয়ে যান। সম্ভবত ২০১৯-এর এপ্রিলের মাঝামাঝি চেক রিপাবলিকের দ্বিতীয় বিভাগের টুর্নামেন্টের একটা ম্যাচ দিয়ে আমার খেলা শুরু হয়। দ্বিতীয় বিভাগের লিগে চ্যাম্পিয়ন হয়ে উত্তীর্ণ হয়ে প্রথম বিভাগে খেলার যোগ্যতা অর্জন করি। এখানেও আমরা প্রথমবারের মত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করি। তারপর থেকেই অনেকটা নিয়মিত ক্রিকেট খেলছি।
তিনি বলেন, চেক রিপাবলিক ২০০৮ সাল থেকে ক্রিকেট খেলছে। এবারই একটু ভালো মতো প্রস্তুতি নিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাই পর্ব খেলতে নামছে। তার আগে আগামী এপ্রিলের ২৬ তারিখ থেকে শুরু হবে ন্যাশনাল লিগের খেলা। তারপরে জুনে বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে অংশ নেবে চেক রিপাবলিক জাতীয় ক্রিকেট দল। আশা করছি, এই বাছাই পর্বের ম্যাচেই অভিষেক হবে। তার কাছ থেকে জানা যায়, চেক রিপাবলিকের ক্রিকেট দলের আসন্ন ম্যাচগুলোর মধ্যে রয়েছে আগামী ৮ জুন ২০২০ মেন্স টি-টোয়েন্টি ওয়ার্ল্ড কাপ ইউরোপিয়ান কোয়ালিফায়ার। আয়োজনে বেলজিয়াম এবং মে ২০২০ মেলবোর্ন ক্রিকেট ক্লাবের সঙ্গে প্রীতি ম্যাচ, যা অনুষ্ঠিত হবে ডেনমার্কে।
ক্রিকেটার হিসেবে নিজের লক্ষ্যের বিষয়ে সুহাস বলেন, ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল ভালো ক্রিকেটার হওয়ার। ২০০৯ সালে পড়াশোনার জন্য লন্ডনে চলে আসি। এরপর পড়াশোনার সাথে চাকরি করা, সব মিলিয়ে ক্রিকেটে খুব একটা সময় দেওয়া হচ্ছিল না। তারপরেও ছোটবেলার স্বপ্নকে সঙ্গী করে ইংল্যান্ডের আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ক্রিকেট খেলেছি। সেখানে সফলতা পেলেও পড়াশোনা আর চাকরির ব্যস্ততায় ক্রিকেটটা চালিয়ে নিতে পারিনি। তবে, ভালো কোথাও খেলার আশা ছেড়ে দিইনি। পরবর্তীতে ২০১৬ সালের শেষের দিকে ইংল্যান্ড থেকে চেক রিপাবলিকে চলে আসি। এখানে গ্রীণকার্ড পাওয়ার পরে খেলার সুযোগ হয়। তারপরেই জাতীয় টিমের হয়ে খেলার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে সুযোগ পেয়েছি। এখন লক্ষ্য চেকের ক্রিকেটকে আরো অনেক দূর নিয়ে যাওয়া এবং ব্যাট ও বল হাতে নিয়মিত ভালো পারফরম্যান্স করা।
চেক রিপাবলিকের জন্য ভালো খেলার ইচ্ছা থাকলেও সুহাসের স্বপ্ন বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে খেলার। এ বিষয়ে তিনি বলেন, যে কোনো দেশের জাতীয় দলের হয়ে খেলাটায় একটা স্বপ্নের মত ব্যাপার। বাংলাদেশের হয়ে খেলাটা তো আমার আজন্মের স্বপ্ন। কখনও যদি বাংলাদেশের হয়ে সুযোগ পাই, অবশ্যই খেলবো। মাতৃভূমির হয়ে খেলতে পারাটা হবে আমার জন্য পরম সৌভাগ্যের এবং গৌরবের।
সুহাসের বড় ভাই সমকালের সাহিত্য সাংবাদিক হাসনাত শাহিন বলেন, সুহাস ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটের প্রতি আসক্ত ছিল। সে ইউরোপের একটি দেশের জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পেয়েছে এটা মেহেরপুরের জন্য গর্বের বিষয়। সকলের কাছে তার জন্য দোয়া চেয়ে শাহিন আরও বলেন, বড় ভাই হিসেবে আমার একটায় চাওয়া সে যেনো আরও এগিয়ে যায়।
মেহেরপুরের ক্রিয়া সংগঠক ও প্যানেল মেয়র শাহিনুর রহমান রিটন বলেন, মেহেরপুর জেলার ক্রিয়াঙ্গনের অচলাবস্থার মধ্যেও সুহাসের আন্তর্জাতিক অর্জণ মেহেরপুরবাসীকে গর্বিত করেছে। তার জন্য শুভকামনা।
মেপ্র/এমএফআর