অদম্য ইচ্ছা শক্তি আর কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে প্রতিবন্ধকতাকে জয় করেছেন শাকিরুল। দুটি হাত না থাকলেও তার ইচ্চা শক্তির মাধ্যমে ছাগল পালন করে সফলতার মুখ দেখেছে সে। মাত্র ৫ টি ছাগল থেকে তার জীবন সংগ্রাম শুরু করলেও বর্তমানে সে অর্ধশতাধিক ছাগলের মালিক।
সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত মাঠে ময়দানে ছাগলের সাথেই কাটাতে হয় সারাটি বেলা। ছোট বেলায় বিদ্যুতের তারে হাত জড়িয়ে পুড়ে যায় দুটি হাত। চিকিৎসার পর কোন রকম প্রানে বেঁচে গেলেও কেটে ফেলতে হয় তার দুই হাত।
জীবন জীবিকার তাগিদে অভাব অনটনের সংসারে বোঝা হয়ে ওঁঠে শাকিরুল। স্থানীয় ব্যাক্তিদের পরামর্শে ছাগল পালন শুরু করেন তিনি। দিন বদলের সাথে সাথে ছাগল পালনে স্বাবলম্বী হয়েছে প্রতিবন্ধী শাকিরুল। তবে দু’টি হাত না থাকায় তাকে পড়তে হয় নানান সম্স্যায়। সরকারী বা বেসরকারি কোন সহযোগীতায় জোটেনি তার ভাগ্যে। সরকারি সহযোগীতা পেলে সংসার চালানো ছাড়াও বাড়তি আয় করতে পারবে বলে আশাবাদি শাকিরুল। ছাগল পালনে উপার্জিত আয় থেকেই পরিবারের সকল খরচ বহন করে চলেছে শাকিরুল।
মেহেরপুর জেলার গোপাল পুর গ্রামের জামাত আলীর ছেলে শাকিরুল ইসলাম। ২০০২ সালে বৈদ্যতিক দুর্ঘটনায় তার দুটি হাত কেটে ফেলে চিকিৎসকরা।
দুটি হাত হারানোর পর শাকিুলের পরিবারে নেমে আসে চরম হতাশা। চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে অভাবের সংসারে বোঝা হয়ে ওঠে শাকিরুল। বাড়ির লোকজন তাকে ৫ টি ছাগল কিনে দেয়।
ছাগল ৫টি সারাদিন মাঠে ময়দানে নিয়ে বেড়ানোই ছিল শাকিরুলের একমাত্র কাজ। পরিবারের পাশাপাশি শাকিরুলকে সহযোগীতা করেন প্রতিবেশি মাপলেকা বানু। শাকিরুলের দেখা দেখি মলেকা বানু ২৫ টি ছাগল কিলে ছাগল পালন করছেন। শাকিরুলের সাথেই তার সব ছাগল গুলি লালনপালন করেন। মাঠে ময়দানে ছাগল চরাতে গিয়ে মালেকা বেগম শাকিরুলকে ছেলের মত দেখা শোনা করেন।
সময়ের পরিবর্তনে শাকিরুল তার করুন পরিনতির বিষয়টি জানিয়ে এক প্রতিবেশিকে বিয়ে করেন। সাংসারিক জীবনে তার ঘরে জন্ম নেয় ২ টি কন্যা সন্তান। বড় মেয়ে ছাদিয়
২য় শ্রেনীতে এবং ছোট মেয়ে ছমিয়া ১ম শ্রেনীতে গ্রামের একটি স্কুলে লেখা পড়া করছে। শাকিরুলের স্বপ্ন তার দ’মেয়েকে ভাল স্কুলে লেখা পড়া শিখিয়ে মানুষের মত মানুষ করে গোড়ে তোলা। কিন্তু ছাগল পালন করে সংসারের খরচ চালিয়ে মেয়েদের পিছনে বেশি টাকা খরচ করার স্বামর্থ নাই। যার ফলে গ্রামের একটি স্কুলেই ভর্তি করেছেন তার কন্যাদের। প্রতিবেশি মালেকা বানু জানায়, শাকিরুলের সাথে আমি ছাগল পালনে উদ্বুদ্ধ হয়েছি। আমি প্রথমে ৫ টি ছাগল কিনেছিলাম। সংসার খরচ বাদ দিয়ে আমার এখন ২৫ টি ছাগল রয়েছে। আমি শাকিরুলকে সার্বিকভাবে সহযোগীতা করে থাকি। দুর্ঘটনার সময় আর্থিক সহায়তা চেয়ে তৎকালীন জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছিলেন শাকিরুল। তার আবেদনের ভিত্তিতে কয়েক হাজার টাকা সহয়তা করেছিলেন। যা প্রয়োজনের তুলনায় যথসামান্ন। পরে তাকে সার্বিক সহযোগীতা করার কথা থাকলেও আর খোঁজ নেইনি কেউ। ছাগল পালনের ব্যাবপারে মেহেরপুর প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর থেকে আজও কোন প্রকার সাহায্য সহযোগীতা পাইনি বলে জানান প্রতিবন্ধী শাকিরুল। তিনি বলেন,ছাগল পালন করতে গিয়ে আমাকে নানা সমস্যায় পড়তে হয়। প্রাণী সম্পদ থেকে আমাকে কোন প্রকার সহযোগীতা করা দুরের কথা একটু খোঁজ খবরও নেইনা তারা। প্রাণী সম্প্রসারণ অধিপ্তরের সহযোগীতা পেলে ছাগল পালনে আমার মত অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। তিনি প্রাণী সম্পদ সংশ্লিষ্টদের সহযোগীতা কামনা করেছেন।
এব্যাপারে মেহেরপুর জেলা প্রানী সম্পদ কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন,আমাদের পক্ষ থেকে যতদুর সহযোগীতা করা প্রয়োজন তা করে থাকি। তা ছাড়া আমি নিজেই মাঝে মধ্যে তার বাড়িতে গিয়ে খোজ খবর নিয়েছি। শাকিরুলে চাওয়া হয়তো আমাদের সিমাবদ্ধতার কারনে পুরন করা সম্ভব হয়না।
মেপ্র/আরজেএম