ছিনতাইয়ের কবলে পড়ে ভ্যান হারিয়েছেন আতিয়ার রহমান। আয়-রোজগার বন্ধ। এ কারনে কোন রান্না হয়নি সংসারে।
দুই দিন ধরে পাশের বাড়ি থেকে চেয়ে এনে মুখের অন্ন জোটাচ্ছে প্রতিবন্দী ছেলে-মেয়ের। এ অবস্থা চলছে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার সারুটিয়া গ্রামের প্রতিবন্ধী ওই পিতার পরিবারে।
প্রতিবেশী শাহিনুর রহমান বলেন,ভ্যান চালানো আতিয়ারের পেশা। দীর্ঘ দিন সে ভ্যান ভাড়ায় নিয়ে চালাত। কয়েক মাস হল পাশের বাজারের পরিচিত এক ম্যাকারের কাছ থেকে ভানটি কিনেছে বাকিতে।
প্রতিদিন ভ্যান চালিয়ে যা আয় হত,তা দিয়ে কোন রকম সংসার চালিয়ে,বাকি টাকা দিত ওই মেকারের ভ্যানের জন্য।
মঙ্গলবার রাতে ওই ভ্যানটি যাত্রী সেজে ৩ জন ভাড়া করে নিয়ে যায় তাকে। এরপর কিছুদুর যাবার পর ছিনতাইকারীরা তাঁর চোখ মুখ বেধে ভ্যানটি নিয়ে যায়।
তিনি বলেন, আতিয়ার পারিবারিক জীবনে দুই সন্তানের জনক। তবে দুই জনই প্রতিবন্ধী। এরমধ্যে মেয়ে কাকলী খাতুন(১৩) শারীরিক প্রতিবন্ধী আর ছেলে শিহাব (৮) বুদ্ধি প্রতিবন্ধী।
সংসার চালানোর শেষ সম্বল হারিয়ে, সে এখন খাবার জোগাড়ের জন্য প্রতিবেশীদের দ্বারে ধর্ণা ধরছেন।
ভুক্তভোগী আতিয়ার রহমান জানান,প্রতিদিনের মত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আয় রোজগারের জন্য বাড়ি থেকে ভ্যান নিয়ে বের। এরপর ঘাঘা গ্রামে আসার পর ৩ জন অপরিচিত ভ্যান ভাড়া করেন। যেতে বলেন জালালপুরে। কথা মত ঘাঘা মাঠের রাস্তা দিয়ে জালালপুরের দিকে যাচ্ছিলাম ।
কিছুদুর যাবার পর ওই মাঠের মধ্যে গিয়ে আমার হাত-পা চোখ বেঁধে ফেলে তারা। নিয়ে যায় আমার ইঞ্জিন চালিত ভ্যান আর টাকা। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় ছাড়া পেয়ে বাড়িতে ফিরে যায় খালি হাতে।
তিনি বলেন,বিয়ের পর সংসার ভালই চলত। এরপর সংসারে আসে একটা কণ্যা সন্তান। যার নাম কাকলী খাতুন(১৩)। যে ছিল শারিরীক প্রতিবন্ধী। এরপর জন্ম নেন একটি ছেলে সন্তান। সেও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। তাঁর নাম শিহাব আলী। এদের দুই জনকে নিয়ে সংসার চালাতে যখন হিমশিম খাচ্ছিলাম। ওই সময় গুরুত্বতর অসুস্থ্য হয়ে পড়েন আমার স্ত্রী।
দীর্ঘ ৫ বছর চিকিৎসা করানোর পর সে মারা যায়। এ দীর্ঘ সময় তাঁর চিকিৎসা ব্যয় মিটাতে গিয়ে আমার সব কিছু বিক্রি করে দিয়েছি। আমার শেষ সম্বলটুকু ছিল ইঞ্জিন চালিত ওই ভ্যানটি। যা মঙ্গলবার রাতে ছিনতাইয়ের কবলে পড়ে হারিয়েছি।
যা দিয়ে আয় রোজগার করে আমার দুই প্রতিবন্ধী সন্তানের মুখের খাবার তুলে দিতাম। ভ্যান ছিনতাইয়ের পর থেকে পাড়া প্রতিবেশীদের কাছ থেকে চেয়ে নিয়ে এসে তাদের খাবার দিচ্ছি। এ ব্যাপারে কোটচাঁদপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে কোটচাঁদপুর থানার ডিউটিরত উপপরিদর্শক মাসুদুর রহমান জানান, ওই ঘটনায় আতিয়ার রহমান বাদী হয়ে থানায় একটা অভিযোগ করেছেন। এটা দেখছেন তালসার পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক আজগর আলী।