দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কাপড়ের বাজার কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার পোড়াদহ কাপড়ের হাট। আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে প্রতিদিনই বাড়ছে বেচাকেনা। শুধু পাইকারি নয়, এই হাটে খুচরাও বিক্রি বেড়েছে। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত দোকানগুলোতে বেচাবিক্রি চলে।
প্রতি বছরের মতো এ বছরও নিত্যনতুন ডিজাইনের কাপড়ের পসরা সাজিয়ে বসিয়েছে দোকানিরা। ফলে ক্রেতাদের উপস্থিতিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে বাজার।
জানা যায়, প্রায় অর্ধ শতাধিক বছর আগে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার পোড়াদহে গড়ে ওঠে পাইকারি কাপড়ের হাট। সপ্তাহের বুধবার, বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবার পরপর এই তিনদিন এখানে হাট বসে।
দামে সাশ্রয়ী হওয়ায় কুষ্টিয়াসহ পার্শ্ববর্তী জেলার মানুষ এই হাটে কাপড় কিনতে আসেন। এছাড়া পাইকারি বাজার হওয়ায় আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরাও আসেন এখানে। এই হাটে গজ কাপড়, থান কাপড়, পাঞ্জাবির কাপড়, থ্রিপিচ, শাড়ি, সুতির কাপড়, জাকাতের কাপড়, মশারি, কোর্ট, প্যান্ট ও শার্টের পিচ, লুঙ্গি, রেডিমেট পোশাক পাওয়া যায়। সপ্তাহের বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার পোড়াদহ কাপড়ের হাট বসে। এই হাটে প্রায় ২ হাজার দোকান আছে।
যেখানে কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে প্রায় ১৫-২০ হাজার লোকের।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম এই পাইকারি পোশাকের বাজার পোড়াদহের কাপড়ের হাট। ঈদকে সামনে রেখে দেশের হাজার হাজার পাইকাররা শাড়ি, পাঞ্জাবি, লুঙ্গি, গামছা, বেডশিট, থ্রিপিস, টুপিস, প্যান্ট-শার্ট পিসসহ বিভিন্ন ধরনের বাহারি পোশাক কিনতে ছুটে আসেন এই হাটে।
নিত্যনতুন ডিজাইনের কাপড়ের পাশাপাশি দাম কম হওয়ায় দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসেন তারা। সুলভ মূল্যে এ সকল পণ্য কিনতে পেরে খুশি পাইকার ও সাধারণ ক্রেতারা।
বর্তমানে এই হাটে পাইকারি হিসেবে থ্রিপিস বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে সর্বোচ্চ ২০০০ হাজার টাকা, লুঙ্গি ১৮০ থেকে ৭০০ টাকা, শাড়ি ৩৫০ থেকে ২০০০ টাকা এবং পাঞ্জাবি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত।
এছাড়াও অন্যান্য পণ্য হাতের নাগালে পাওয়া যায়। ঈদকে কেন্দ্র করে প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও চাঁদরাত পর্যন্ত দেড় থেকে দুইশো কোটি টাকা বিক্রির আশা করছেন এখানকার ব্যবসায়ীরা।
পোড়াদহ বাজারের সবচেয়ে বড় শাড়ি, থ্রিপিস, শার্ট পিস, পাঞ্জাবির মোকাম অঙ্গশোভায় গিয়ে দেখা গেছে, দোকানে প্রচণ্ড ভিড়। কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার মশান থেকে ঈদের কেনাকাটা করতে আসা বিপুল হোসেন বলেন, ‘পোড়াদহ কাপড়ের হাটে কেনাকাটা করার মজাই আলাদা। আমি প্রতিবছর পরিবারের জন্য এখান থেকেই কেনাকাটা করি।’
জাকাতের কাপড় কিনতে আসা ইয়াসিন আলী বলেন, ‘দামে সাশ্রয়ী হওয়ায় আমি এখান থেকে কাপড় কিনি।’
মেহেরপুর থেকে আসা পাইকারি কাপড় ব্যবসায়ী সাব্বির ইসলাম বলেন, ‘আমরা এখান থেকে পাইকারি কাপড় কিনি। কম দামে বেশ ভালো কাপড় পাওয়া যায়।’ তিনি বলেন, এই হাট থেকে আমি বিভিন্ন আইটেমের থ্রি-পিসসহ অন্যান্য কাপড়চোপড় কিনেছি। এলাকায় আমার দোকান আছে, সেখানে এগুলো বিক্রি করবো। ভালোই লাভ হয়।
সেতু গার্মেন্টসের মালিক আমজাদ হোসেন বলেন, ‘হাটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালো হাওয়ায় প্রতিদিনই বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা এখানে কাপড় কিনতে আসেন।’
হাটে আসা ক্রেতা হাফিজুর রহমান বলেন, আমরা এই হাটে ঈদের মার্কেট করতে এসেছি। এক দোকান থেকে অন্য দোকানে গিয়ে কাপড় দেখছি। যেটা ভালো লাগে সেটা কিনবো। তবে তুলনামূলক মোটামুটি সকল কাপড় সাশ্রয় মূল্যে পাওয়া যাচ্ছে।
কেনাকাটা করতে আসা আফরোজা খাতুন বলেন, শুনেছি পোড়াদহ হাটে কম দামের কাপড় সস্তায় পাওয়া যায়। আমরা এখানে আসি কম দামে কাপড় কেনার জন্য। এখানে অনেক ভালো ভালো কোয়ালিটির কাপড়ও বিক্রি হয়।
কাপড়ের হাটের ব্যবসায়ী ছালেহা বস্ত্র বিতানের স্বত্বাধিকারী মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, রমজানের অর্ধেকের বেশি চলে গেলেও বেচাকেনা বেশ ভালোই হচ্ছে। পোড়াদহ কাপড়ের হাটটি পাইকারি মার্কেট। যার কারণে এক দামে কেনা-বেচা হয়। তাতে ক্রেতাদের ঠকার কোন সম্ভাবনা থাকে না। এ জন্য উৎসব মুখরভাবে ম্যাক্সিমাম যারা ক্রেতা, তারা সরাসরি হাটে চলে আসে।
পোড়াদহ কাপড়ের হাট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনি খা বলেন, এই হাটে প্রচুর লোকের সমাগম হয়। দেশের দূরদূরান্ত জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা কেনাকাটা করতে আসে। ঈদকে কেন্দ্র করে প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও চাঁদরাত পর্যন্ত দেড় থেকে দুইশো কোটি তাকার কাপড় বিক্রি হবে।
কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিরপুর সার্কেল) আব্দুল খালেক বলেন, ‘পোড়াদহ হাটে পুলিশের টহল ও গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। এছাড়াও সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে।’