বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে গ্যাড়াকলে পড়েছেন টিপু মিয়া (১৮) নামের এক কলেজ ছাত্র। শারীরিক নির্যাতন ছাড়াও অবৈধভাবে গ্রাম্য সালিশ ডেকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে জরিমানার পুরো টাকা স্থানীয় ইউপি মেম্বর বাবলু কাশেম পকেটস্থ করেছেন।
ঘটনাটি মেহেরপুরের গাংনীর কুলবাড়িয়া গ্রামে গেল বৃহস্পতিবার দুপুরের। টিপু মিয়া ওই গ্রামের আমজাদ হোসেনের ছেলে ও গাংনী সরকারী কলেজের একাদশ শ্রেণির ২য় বর্ষের ছাত্র। সালিশকাররিা বলছেন ওই টাকা সমাজের উন্নয়নে কাজে লাগানো হবে।
জানা গেছে, টিপু মিয়া বৃহস্পতিবার প্রতিবেশি বন্ধু উজ্জ¦ল হোসেনের বাড়িতে গেলে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে টিপুকে মারধর শুরু করেন। জিবন বাঁচাতে পালিয়ে যায় টিপু। ওই দিন সন্ধায় টিপুর নামে গ্রাম্য সালিশ বসে । টিপুর বিরুদ্ধে উজ্জ্বলের স্ত্রীকে উত্যক্ত করার অভিযোগ আনা হয়। সালিশে নের্তৃত্ব দেন সাহারবাটি ইউপির ৬ নং ওয়ার্ডের সদস্য বাবলু কাশেম। অন্যান্য সদস্যরা হলেন, ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি হারুর অর রশিদ, সাধারণ সম্পাদক মকলেচুর রহমান ও সাবেক ইউপি সদস্য জিয়াউল ইসলাম। এসময় সমাজ পতিরা টিপুকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
টিপুর পিতা আমজাদ হসেন বলেন, আমার ছেলে ও উজ্জল হোসেন একই সাথে বড় হয়েছে। দুজনই সব সময় চলাফেরা করে। বৃহস্পতিবার দুপুরে উজ্জল মোবাইল করে বাড়িতে ডেকে নিয়ে যায় আমার ছেলে টিপুকে। তার মোবাইল ফোন ভেঙ্গে মারধর করে উজ্জল ও তার পরিবারের লোকজন। পরে বিকালে গ্রাম্য শালিশে ডেকে এক লক্ষ টাকা জরিমানা করে। আমি খুবই গরিব মানুষ অন্যের বাড়ি থেকে ধার করে ৪০ হাজার টাকা মাতব্বরদের হাতে দিয়ে হাতে পায়ে ধরে আমারে ছেলেকে বাড়ি নিয়ে আসি।
উজ্জলের পরিবারের সাথে কথা বলতে চাইলে উজ্জলের মা বলেন, সামান্য একটু সমস্যা হয়েছিল। পরে গ্রামের মাতব্বররা মিমাংসা করেছেন। জরিমানার টাকা কি করবে তা আমরা জানিনা। তবে সমাজের উন্নয়ন হবে বলে জানতে পারি।
স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি হারুন অর রশিদ বলেন, টিপু উজ্জলের স্ত্রীকে বিয়ে করার জন্য উজ্জলের বাড়িতে গিয়ে বসে ছিল। পরে তাকে বিচারের আওতায় এনে সামাজিকভাবে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। উক্ত টাকা স্থানীয় ইউপি সদস্য বাবলু কাশেমের কাছে রাখা আছে।
ইউপি সদস্য বাবলু কাশেম বলেন, সমাজের মাতব্বররা যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। সে অনুযায়ী টিপুকে দোষী ভেবে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। উক্ত টাকায় সমাজের উন্নয়নে ব্যয় করা হবে।
এ ব্যাপারে সাহারবাটি ইউনিয়নের বীট পুলিশিং কমিটির পরিচালক এসআই রাজ্জাক জানান, গ্রামে কোন রকম সালিশ করার বিধান নেই। বিশেষ করে নারী নির্যাতনের ঘটনায়। আবার কোন জরিমানারও বিধান নেই। ইউপি মেম্বর যেটা করেছেন সেটা নিয়ম বহির্ভুত।
গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বজলুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। ভুক্তভোগী পরিবার অভিযোগ করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।