গাংনী উপজেলার ভোমরদহ গ্রামের গৃহবধু শিউলী খাতুন ও নিলুফার ইয়াসমীন। আর্থিক অনটনের কারণে গাংনী উপজেলা শহরের উত্তরপাড়া এলাকার মৃতু ইউনুছ আলীর ছেলে সুদ ব্যবসায়ী আনারুল ইসলামের কাছ থেকে ব্যাংক চেক দিয়ে ২ লাখ টাকা নেন। প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা দিয়ে গত দেড় বছরে তিন লাখ পরিশোধ করেন। তারপরেও এখন সুদ ব্যবসায়ী আনারুল ইসলাম শিউলীর কাছে ২ লাখ টাকা দাবী করছে। এঘটনায় ভুক্তভোগী ওই নারী গাংনী থানায় একটি লিখিত অভিযোগে দিয়েছেন।
গত ৩ এপ্রিল বিষয়টি নিয়ে গাংনী থানা পুলিশ ও স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গরা বসে চেক ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রতি দেন আনারুল ইসলাম।
একই অভিযোগে করেছেন, ভোমরদহ গ্রামের তাইজাল ইসলামের স্ত্রী নিলুফা ইয়াসমীন। তিনি বলেন আমি আনারুল ইসলামের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা সুদে নিয়ে তাকে ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা পরিশোধ করার পরেও সে এখন ২ রাখ টাকা দাবী করে বিভিন্নভাবে হুমকী ধামকী ও অশ্রাব্য ভাষায় গালিগাল করে আসছেন।
এঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার বিকালে গাংনী উপজেলা শহরের সাবেক ছাত্র নেতা শাহিদুজ্জামান শিপুর অফিসে ওই দুই নারী তাদের উপর সুদ কারবারী আনারুল ইসলাম, জমির উদ্দীনের ছেলে সুদ ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম ও মহিজ উদ্দীনের ছেলে সুদ ব্যবসায়ী শফি’র বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আনেন। এর আগে এই সুদ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে গাংনী থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
এদিকে সাবেক ছাত্র নেতা শিপু এই সব নারীদের পক্ষে কথা বলায় সুদ ব্যবসায়ী আনারুল ইসলাম গতকাল বিকালে তার বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন।
এঘটনায় শাহিদুজ্জামান শিপু তাৎক্ষনিকভাবে স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে বিষয়টি তুলে ধরে সাংবাদিক সম্মেলন করেন। তিনি অভিযোগ করেন, সুদ ব্যবসায়ী আনারুল ইসলাম, এলাকার গরীব অসহায় মানুষের মধ্যে সুদের টাকা বিতরণ করে চড়া সুদের টাকা আদায় করে থাকেন। তার অত্যাচার নির্যাতন ও দৌরাত্মে স্বামীর ঘর ছাড়া হয়েছেন অনেক নারী। তাদের মধ্যে ঘর ছাড়া এক অসহায় নারী শিউলী খাতুন ও নিলুফা ইয়াসমীন। তারা দুজনেই আনারুল ইসলামের কাছে থেকে চড়া সুদে টাকা নিয়ে এখন স্বামীর ঘর ছাড়া হয়ে পড়েছেন।
তারা দুজনেই আনারুল ইসলামের কাছ থেকে সুদের উপর টাকা নিয়ে সুদসহ আসল টাকা পরিশাধে করার আরও টাকার দাবি করে মিথ্যা মামলার হুমকি, শারীরিক ও মানষিক নির্যাতন চালান।
সাংবাদিক সম্মেলনে শিউলী খাতুন লিখিত বক্তব্যেই বলেন, আমার নিকট থেকে আমার স্বাক্ষরিত সোনালী ব্যাংক শাখার একটি ব্লাঙ্ক (ফাঁকা) চেক জমা নিয়ে আমাকে ২ লাখ টাকা প্রদান করেন আনারুল। আমি মাসিক ২০ হাজার টাকা সুদসহ দেড় বছরে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা পরিশাধে করার পরও আমাকে আমার চেক ফেরত দেয়নি সে।আরও ২ লাখ টাকা দিতে এখন নানাভাবে হুমকী ধামকী দিচ্ছেন।
সুদ ব্যবসায়ী আনারুলের দাবিকৃত অতিরিক্ত টাকা না দেয়ায় আমাকে মারপিট ও মামলার ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। এমনকি আমাকে ও আমার বিবাহিতা মেয়েকে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি দিচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আমি একজন অসহায় গরীব মানুষ। বর্তমান আমি ওই টাকা পরিশাধে করতে বিভিন্ন এনজিও থেকে লোন নিয়ে ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। এসব কারণে আমার স্বামী আমাকে বাড়ি থেকে বিতাড়িত করেছে।
তিনি বলেন, সুদ ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে চড়া সুদের টাকা নেয়ার কারণে এলাকার গরীব মানুষ ব্যাপক ভাবে নিঃস্ব ও অসহায় হয়ে যাচ্ছে। আমি সুদ ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে সাংবাদিকদের মাধ্যমে আবেদন জানাচ্ছি।
এবিষয়ে শাহিদুজ্জামান শিপু আরও বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অন্যায় কখনও বরদাস্ত করবেন না। সরকারের সুনাম নষ্ট করতে এক শ্রেণীর মানুষ নানা ষড়যন্ত্র করে সরকারের উন্নয়নে বাঁধাগ্রস্থ করছে।
সুদ ব্যবসার নামে মানুষকে শোষণ করছে। গ্রামের অসহায় মানুষকে জিম্মি করে তাদের উপর অন্যায় অত্যাচার করছে। আমি এসব নিয়ে প্রতিবাদ করায় গাংনীর এক শ্রেণীর মুখাশেধারী নেতা সুদ ব্যবসায়ীদের সমর্থন করছেন। জনগণের জন্য পুলিশ ভাল কাজ করে প্রশংসনীয়। কিন্তু প্রতিহিংসা করছে একটি চক্র।
উল্লেখ্য গাংনীর এই সুদ ব্যবসায়ী আনারুল ইসলাম ও অপর সুদ ব্যবসায়ী আবু হানিফের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ৬৬৯ টি ফাঁকা নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প ও ৬২০ টি বিভিন্ন ব্যাংকের ফাঁকা চেকসহ এই দুজনকে আটক করেন। বেশ কিছুদিন হাজত খেটে জামিনে বেরিয়ে এসে এবার নতুন উদ্যোমে সুদ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এর সাথে গাংনী উপজেলা শহরের কয়েকজন জন প্রতিনিধি যোগ দিয়ে অসহায় গরীব লোকজনকে অত্যাচার শুরু করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।