জীবননগর উপজেলার বাকা ইউনিয়ন ও আন্দুলবাড়িয়া ইউনিয়নের এলাকা দিয়ে প্রবাহিত ভৈরব নদী পুনঃখননের কাজ চলছে। ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নদী খননে খরচ হচ্ছে প্রায় ৮ কোটি টাকা ৪লক্ষ টাকা । বিপুল পরিমাণ টাকা বরাদ্দ থাকার পরও খননের নামে খননযন্ত্র দিয়ে নদী থেকে বালু তুলে বিক্রি করা দিচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, নদী খননের কাজ পাওয়া ঠিকাদার নাসির উদ্দিন মোল্লা কোনো কাজই করছেন না। তিনি ঝিনাইদহ জেলার মোসাব্বির এন্টারপ্রাইজ কে সাব ঠিকাদার হিসাবে কাজ দিয়েছেন। সাব ঠিকাদারের নিকট থেকে আন্দুলবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ নেতা মিজা লিটন, যুবলীগ নেতা বিল্লাল,বিপুলসহ এলাকার বেশ কিছু ব্যাক্তি খননের মাটি এলাকার বিভিন্ন মসজিদ,মাদরাসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের নাম করে এলাকার কিছু শ্রমিক নিয়োগ করে স্থানীয় যন্ত্রের মাধ্যমে বালু তুলে গাড়ি প্রতি ১হাজার টাকা দরে বিক্রি করছেন।
যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে,মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রতি কপোতাক্ষ নদের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ (২য় পযায়)শীষকপ্রকল্পের আওতায় দেশের মরা ছোট নদী, খাল ও জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্পের আওতায় জীবননগর উপজেলার বাকা ইউনিয়নের কিছু অংশ এবং আন্দুলবাড়িয়া ইউনিয়নের কিছু অংশ প্রবহমান ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ভৈরব নদী খননের জন্য দরপত্র প্রক্রিয়া গত বছর ১৮ডিসেম্বর শেষ হয়। বাকা ইউনিয়নের মুক্তারপুর থেকে ৬ কিলোমিটার ভৈরব নদী থননের কাজ পায় নাসির উদ্দিন মোল্লা নামের একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। যার ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ কোটি ৪ লাখ টাকা।
দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী ৮ ফিট গভীর করে নদী খনন করা হবে এবং খননকাজের সময় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কোন মাটি বা বালু বিক্রয় করতে পারবে না । গত এক মাস ধরে নদী খননের কাজ চলছে অল্প কিছু অংশ খননের কাজ হলেও । কুলতলা গ্রামে নদীর কিছু অংশের বিভিন্ন স্থানে স্থানীয়ভাবে বানানো অন্তত ৬টি খননযন্ত্রের সাহায্যে এবং ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করতে দেখা যায়। উত্তোলন করা বালু পাইপের সাহায্যে নদীর তীর থেকে কিছু দূরে স্থানে স্থানে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। সেখানে থেকে বালু বিক্রির পর তা ট্রাক ও ট্রাক্টরে করে দিনের বেলা কিংবা রাতের বেলা বিভিন্ন ব্যাক্তির নিকট টাকার বিনিময়ে বিক্রি করা হচ্ছে।এ যেন দেখার কেউ নেই । উপজেলা প্রশাসনকে একাধীকবার বলা এবং লিখিত অভিযোগ করেও এখন ও কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেননি বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় ব্যাক্তিরা।
কুলতলা গ্রামের কৃষক বকুল হোসেন,আকুল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, তাদের চাষের জমির উপর দিয়ে এক সপ্তাহ ধরে ২ টি বালু উত্তলনের পাইপ রয়েছে ।গ্রামের কিছু নেতারা মিলে তারা নদী থেকে বালু তুলে বিক্রি করছে। এতে নদীর মাঝ খানে ৫০ থেকে ৬০ ফিট বেশি গভীর হচ্ছে এবং নদীর ধারে ভাঙন ধরেছে।যার কারনে আমাদের ফসলী জমি নষ্ঠ হচ্ছে।মাঝে ইউএনও সাহেব পাইপ কেটে দিয়েছিল তার পর আবার তারা বালি তুলছে । প্রতিদিন কমপক্ষে ১৫টি ট্রাক্টর রাত দিন বালি তুলছে । বালি তুলার ফলে এলাকার বসতবাড়ি গুলো হুমকির মধ্যে রয়েছে।কুলতলা গ্রাম থেকে নদী খননের বালি ক্রয় করা ট্রাক্টর চালক পুরন্দ পুর গ্রামের সিদ্দিকের ছেলে আঃ খালেক বলেন,আমি দরুদ মেম্বারের নিকট থেকে গাড়ি প্রতি ১হাজার টাকা দরে বালু ক্রয় করেছি ।গত কয়েক দিন ধরে অনেকেই এখান থেকে বালু নিচ্ছে আমি সোনার পর এখানে এসে ৯গাড়ি বালু কিনে আমার এলাকার কিছু মানুষের কাছে বিক্রয় করছি।
অভিযোগ অস্বীকার করেন সাব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক জাহাঙ্গীর আলম মাখন তিনি বলেন, তাঁরা এক্সকাভেটর দিয়ে নদী খনন করছেন। বালু বা মাটি বিক্রয়কোরীদের সঙ্গে তাঁদের কোনো সম্পর্ক নেই।স্থানীয় নেতাকমিরা নদী থেকে বালু উত্তলন করছে ।
এ দিকে আওয়ামীলীগ নেতা মিজা লিটন ,যুবলীগ নেতা বিল্লালের সাথে যোগাযোগ করার জন্য মুটোফোনে চেষ্ঠা করা হলে ফোনটি রিসিপ না করায় তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি তবে যুবলীগ নেতা বিপুলের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, নদী খনন করা বালু বা মাটি বিক্রি করে কুলতলা গ্রামের মসজিদের উন্নয়ন কাজে দেওয়া হচ্ছে।এখান থেকে বালু বিক্রি করে আমরা কেউ কোন ভাগ নিচ্ছি না ।আমাদের নামে যে অভিযোগ উঠেছে তা সঠিক না।
জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ আরিফুল ইসলাম বলেন, ভৈরব নদী খননের বালু বা মাটি কোন ভাবেই বিক্রি করার সুযোগ নেই। ৬ কিলোমিটার অংশের খনন করে উত্তোলিত বালু বা মাটি নদীর পাড় বাদার কাজে লাগাতে হবে। আমরা বেশ কিছু অভিযোগের ভিক্তিত্বে কুলতলা গ্রামে ভ্রাম্যান অভিযান পরিচালনা করা হয় এবং নদী থেকে অবৈধ ভাবে বালু তোলার পাইপ নষ্ঠ করে দেওয়া হয়।এবং বালু যাতে আর না তোলে সে বিষয়ে নিদেশ দেওয়া হয় কোনো অবস্থাতেই কেউ অবৈধ ভাবে নদী থেকে বালু তুলে তা বিক্রি করতে পারবেন না।তবে এ ধরনের কাজ যদি কেউ করে থাকে তা হলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে নদী খননের নামে বাংলা ড্রেজার বসিয়ে বালু ও মাটি উত্তোলনের কারনে হুমকির মুখে পড়েছে এলাকার বেশ কিছু ফসলী জমি।স্থানীয়দের দাবি নদী খননের নামে বালু উত্তোলন বন্ধ না করলে চরম বিপাকে পড়বে সাধারন মানুষ।