জীবননগরে কোন ভাবেই থামছে না ফসলি জমির মাটি ও ভৈরব নদী খননের মাটি বিক্রির মহোৎসব। বন ও পরিবেশ আইন অমান্য করে রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় একটি চক্র দেদারছে মাটি কেটে বিক্রি করলেও তেমন কোন পদক্ষেপ নেই সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় প্রশাসনের।
স্থানীয় প্রশাসন মাঝে মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে জরিমানা আদায় করলেও তা আমলে নিচ্ছেন না মাটি ব্যবসায়ীরা। আর বিভিন্ন স্থানে মাটি সরবরাহে রয়েছে ট্রাক। মাটিবাহী এসব ভারী যানবাহনের বেপরোয়া চলাচলে পৌরসভা ও ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় গ্রামীণ রাস্তাঘাট ভেঙ্গে গেছে।
নদীর মাটি খেকো ও মাটি বেপারীদের বেপরোয়া কর্মকান্ডে সাধারণ মানুষের মধ্যে চাপা ক্ষোভ ও অসন্তোষ থাকলেও প্রভাবশালীদের ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায় না।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আইন অমান্য করে এস্কেভেটর দিয়ে দিবা-রাত্রি চলছে ফসলি জমির মাটি ও ভৈরব নদী খননের মাটি বিক্রির মহোৎসব। ভৈরব নদী খননের ছোট বড় ৮-১০ এস্কেভেটর দিয়ে নিজেদের মন মত স্থানে যেয়ে কাটা হচ্ছে মাটি।
৪০ থেকে ৫০টি ট্রাক্টরযোগে এসব মাটি তোলা হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের নিকট থেকে এই চক্রটি বিভিন্ন স্কুল কলেজ, মসজিদ, মাদরাসা, ঈদগায় মাটি দেয়ার দোহাই দিয়ে উপজেলার সবর্ত্র দাপিয়ে বেড়াচ্ছে কয়েকটি মাটি কাটার সিন্ডিকেট।
উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় খালখন্দ, বাড়িঘর নির্মাণে ভরাটের কাজে আর মাটির বেশির ভাগ ব্যবহৃত হচ্ছে উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের মা-বাবা ইট ভাটা, সীমান্ত ইউনিয়নের মোল্লা ইট ভাটা, ভিভি, বাকা ইউনিয়নের এন,বি,এম ইট ভাটা।
উপজেলার মনোহরপুর ,আন্দুলবাড়িয়া,বাকার মরা নদী পুণ খননের মাটি কেটে ট্রাক দিয়ে এসব ভাটায় ইট প্রস্তুতের জন্য মাটি জমা করা হচ্ছে।
প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে আরও কয়েকটি সিন্ডিকেট। এদিকে স্থানীয় ব্যাক্তিরা অভিযোগ করে বলেন মাটি কাটা সিন্ডিকেটগুলোর নিয়ন্ত্রণ করেন মনোহরপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মনোহরপুর ইউপি সদস্য মোঃ গোলাম রসুল ও মনোহরপুর গ্রামের বাবলু।
মা-বাবা ইট ভাটার মালিক মোঃ শাজাহান আলী আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তথা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ভৈরব নদী খননের মাটি নিজের ইট ভাটায় জমা রাখেন। আর এর বিনিময়ে তাদের পকেটে ঢুকছে লাখ-লাখ টাকা।
স্থানীয়দের অভিমত, বর্তমান সরকার মরা নদী খনন করার যে উদ্যেগ গ্রহন করেছে তা একটি মহতী কাজ কিন্তু নদী খনন হতে না হতেই একটি চক্র গাড়ি প্রতি ১ হাজার ১শ টাকা দরে দুই পাড়ের মাটি বিভিন্ন ইট ভাটায় বিক্রয় করছে।
তাদের অভিমত বেপরোয়া মাটি খেকোদের না রুখলে মনোহরপুর ও কালা গ্রামের ভৈরব নদীর আশপাশের ফসলি জমি গুলো অচিরেই বিলীন হয়ে যাবে।
অপরদিকে, ভৈরব নদী খননের মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে বাড়ি নির্মাণ, ডোবা ভরাট, , বিভিন্ন বেসরকারি ও মালিকানাধীন স্থাপনা নির্মাণ এবং ইট ভাটাসহ বিভিন্ন কাজে। অনেকে আবার অনুমতি ছাড়াই ভৈরব নদীর মাটি বিক্রি করে দিচ্ছেন।
শুধু দিনের আলোয় নয়, রাতের আধাঁরেও চলে ভৈরব নদী কাটা। প্রশাসনের নজরদারি এড়াতে মাটি ব্যবসায়ীরা রাতের সময়কে উত্তম হিসাবে বেছে নেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিন্ডিকেটের এক সদস্য জানান, এক ট্রাক কাটা মাটি বিক্রি করা হয় ১১শ থেকে ১২শ টাকায়। মাটি ইটের ভাটায় সরবরাহ করা ১২শ টাকার মধ্যে গাড়ি ভাড়া,আর লেবার খরচ দিতে হয় ১হাজার টাকা আর ২০০ টাকা দিতে হয় সিন্ডিকেটর প্রধান নিয়ন্ত্রণকারী জনপ্রতিনিধি গোলাম রসুলকে ।
এলাকাবাসী জানায়, স্থানীয় প্রশাসন জেল জরিমানা করার এক ঘন্টা বিরতি দিয়ে আবার পুরোদমে মাটি কাটার কাজ শুরু করেন মাটি ব্যবসায়ীরা। আবার অনেক মাটি ব্যবসায়ী কৌশল পরিবর্তন করে দিনের বদলে রাতের বেলায় ভৈরব নদী খননের মাটি বিক্রি করে সাবাড় করছেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, গ্রামীণ পাকা সড়ক দিয়ে প্রতিদিন শত শত মাটির ট্রাক চলাচলের কারণে সড়ক নির্মাণের দুই/এক বছরের মধ্যে তা ভেঙে যেতে শুরু করেছে এবং রাস্তা দিয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। সড়কে দ্রুত গতির বালু ও মাটিবাহী গাড়িগুলোর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ব্যবসায়ীরা ও চলাচলে অসুবিধায় পড়ে স্কুলগামী কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।
মনোহরপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি সদস্য মোঃ গোলাম রসুল বলেন,আমি কোন মাটি কাটা সিন্টিকেটের সাথে জড়িত না। আমি শুধু মাত্র মনোহরপুর হাইস্কুল,কবর স্থান ,ঈদগা মাঠে মাটি দিয়েছি। এখানে কোন আর্থিক লেনদেন হয়নি বা করিনি। আর আমি কারও কাছ থেকে টাকা গ্রহন করিনি। যারা এ কথা বলেছে তারা আমার উপর শত্রুতা করে বলেছে।
মনোহরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো.সোহরাব হোসেন খান বলেন, ভৈরব নদী খনন হচ্ছে এটা আসলেই একটা মহতী কাজ নদী খননের মাটি বিক্রির বিষয়ে আমি শুনেছি কিন্তু কারা এই সিন্টিকেটের সাথে জড়িত এটা আমি জানি না ।
জীবননগরন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আরিফুল ইসলাম বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে মাটি কাটা বন্ধ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এ ব্যাপারে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের সহযোগিতা প্রয়োজন।