ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার কন্যাদহ মনির উদ্দিন বিশ্বাস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষকসহ একাধিক পদে অর্ধকোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। এমনকি মাধ্যমিক শিক্ষা নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়েছেন বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম ও বিদ্যালয়ের সভাপতি বছির উদ্দিন মাস্টার।
জানা গেছে, গত বছরের ১৫ই জুন বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক স্থানীয় একটি দৈনিক পত্রিকায় ৫টি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়। এরমধ্যে ১ জন সহকারী প্রধান শিক্ষক, ১ জন অফিস সহায়ক, ১ জন আয়া, ১ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও ১ জন নৈশপ্রহরী রয়েছে।
এ আবেদনে ১ জন সহকারী প্রধান শিক্ষকের বিপরীতে ৩০ প্রার্থী আবেদন করে পরীক্ষায় অংশ নেন ২১ প্রার্থী । মাধ্যমিক শিক্ষা নীতিমালা অনুযায়ী শিক্ষক নিয়োগসহ সব নিয়োগ-পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। কিন্তু এ নীতিমালা না মেনে ৩০শে নভেম্বর নিয়োগ পরীক্ষা নেয়া হয় পার্শবর্তী মকিমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। পরদিন ১ লা ডিসেম্বর বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলামের শ্যালক আমিরুল ইসলামকে সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে বিদ্যালয়টি। একই সময় বিদ্যালটির সভাপতি বছির উদ্দিন মাস্টার তহমিনা খাতুনকে আয়া পদে নিয়োগ দেন। জানা গেছে, তহমিনা খাতুন বিদ্যালয়টির সভাপতি বছির উদ্দিন মাস্টারের আত্মীয়।
প্রাপ্ত নথি থেকে জানা যায়, চল্লিশোর্ধ্ব তাছলিমা খাতুনকেও ৩৫ বছর বয়স দেখিয়ে পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগ দিয়েছেন বছির উদ্দিন। তার কাছ থেকে ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য পদে সবমিলিয়ে নিয়েছেন ৪৫ লাখ টাকা। এমন অনিয়মের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় ও চাকুরী প্রত্যাশীরা।
এ ঘটনায় পরিচ্ছন্নতাকর্মী তাছলিমা খাতুন বয়স সংশোধনের বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
এছাড়াও বিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসেবে টাকা রেখেছে সভাপতি বছির উদ্দিনের ছেলে সঞ্জু অগ্রণী ব্যাংক কন্যাদহ শাখায়। ১৫ই জুন থেকে ৩০শে নভেম্বর পর্যন্ত কয়েক লাখ টাকা রেখেছেন। যা বিগত কয়েক বছরের লেনদেনের চেয়ে অস্বাভাবিক।
স্থানীয় বাসিন্দা ও কয়েকজন প্রার্থী জানান, বিদ্যালয়টির সভাপতি বছির উদ্দিন মাস্টারের ছেলে সঞ্জুই সব প্রার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন। এমনকি নিয়োগ বাণিজ্যের মোটা অঙ্কের টাকাও তার হিসাবে রাখা হয়েছে। আর এ কাজে তাকে সহযোগিতা করেছেন বিদ্যালয়টির সভাপতি বছির উদ্দিন মাস্টার ও প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম।
অভিযোগের ব্যাপারে বিদ্যালয়টির সভাপতি বছির উদ্দিন মাস্টারের সাথে কথা বলতে তার বাড়িতে গেলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম জানান, ম্যানেজিং কমিটির কাজে আমার হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। নিয়ম অনুযায়ী নিয়োগ হয়েছে। আর আমি এসব ব্যাপারে কিছু বলতে পারবো না।
এবিষয়ে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুহম্মদ আব্দুল মালেক বলেন, প্রথমিক তদন্তকরে অনিয়মের বিষয়ে সত্যতা পাওয়া গেছে। কিন্তু এ বিষয়ে আদালতে মামলা থাকায় আমার কিছুই বলার নেই।