ঝিনাইদহ পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের উপশহর পাড়া এলাকায় এলাকায় যত্রতত্র নির্মাণ করা হয়েছে গরুর খামার। বাতাসের সাথে ছড়ানো গোবরের দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে এলাকাবাসী। বায়ু দূষণসহ মানুষকে নানা রকম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
জানা যায়, খামার প্রতিষ্ঠা হওয়ার ফলে দুর্গন্ধের কারণে ঐ এলাকায় কেউ বাসা ভাড়া নিতে চায় না। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে অধিকাংশ ভাড়াযোগ্য বাড়ি খালি থাকছে। অনেকে আবার নিজ বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করছে। এছাড়াও গোবর-চুনা ও খামারের কারণে আশেপাশের বাড়িতে অবস্থানরত মানুষেরা দুর্বিসহ জীবন-যাপন করছে। গোবরের চুনার দূর্গন্ধে খাবার টেবিলে বসে খাওয়ার মতো পরিবেশ টুকু ও নেই। খামারের দুর্গন্ধে এলাকায় বসবাস করা দায় হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা পরিবেশ দূষণ ও জনদূর্ভোগের হাত থেকে রেহাই পেতে বারবার অভিযোগ দেবার পর মালিকদের দারস্থ হয়েও কোনো ফল পাননি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই এলাকার বাস মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মরহুম উজ্জ্বল বিশ্বাসের শ্বশুর জাহাঙ্গীর নিয়মনীতি না মেনে পরিবেশ দূষণ করে গরুর খামার স্থাপন করেছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, জাহাঙ্গীর তার নিজ জমিতে নারায়ণ বিশ্বাসের বাড়ি সংলগ্ন দক্ষিণ পাশে গরুর একটি খামার স্থাপন করেছে। খামারটির আশপাশে মলমূত্র ও গোবর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। ওই গোবর, ময়লা- আবর্জনা খামারের পাশেই কোন রকম গর্ত করে ফেলা হচ্ছে। এছাড়া আবাসিক এলাকায় অবস্থিত খামারের মলমূত্র, পানিনিষ্কাশন ও বর্জ্য অপসারণের তেমন কোন ব্যবস্থা নেই। খামারের চারপাশে রয়েছে বসতবাড়ি। এসব বাড়ি থেকে তীব্র দুর্গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তাছাড়া সামান্য বৃষ্টিপাতে মলমূত্র ও গোবর পানির সাথে মিশে পচা দূর্গন্ধ ছড়ানো সহ মশা-মাছির উপদ্রব বেড়ে চলেছে।
পৌরসভার বিদ্যমান নীতি ও আইন এবং পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫’র সুনির্দিষ্ট আইন থাকা সত্বেও এমন ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় গরুর খামার স্থাপনে বিদ্যমান আইনকে উপেক্ষা করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে, স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমার বাড়ির পাশেই গরুর খামার। গরুর গোবর ও মলমূত্র থেকে সব সময় দুর্গন্ধ ছড়ায়। বসবাস করা খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।
খামারের পাশের বাড়ির এক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, দুর্গন্ধে আমাদের পরিবারের সদস্যরা বাড়িতে বসবাস করতে পারছেনা। নোংরা পরিবেশের কারণে মশার উপদ্রপ বেড়েছে। যা ডেঙ্গু বিস্তারের অন্যতম কারণ। আমরা এর স্থায়ী প্রতিকার চাই।
ওই এলাকার বাসিন্দা উপজেলা স্যানিটারী ইন্সপেক্টর নারায়ণ বিশ্বাস বলেন, দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে আমাদের এই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। গরুর খামার ও গোবরের দুর্গন্ধে নিজের বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করছি। এ বিষয়ে পৌরসভায় একাধিকবার অভিযোগ দিয়েও কোন সুরাহা মেলেনি। গরুর খামার মালিক জাহাঙ্গীরের সাথে যোগাযোগ করে ব্যর্থ হবার পর তার এক নিকটাত্মীয়ের মাধ্যমে বিষয়টি অবগত করা হয়।
এ বিষয়ে পৌরসভার মেয়রের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তার ব্যক্তিগত সহকারী জানান, স্যার ঢাকায় আছে। ঢাকা থেকে আসার পর কথা বলতে পারবেন। পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোঃ মুন্তাছির রহমান জানান, জনগণের ভোগান্তি ও দূর্ভোগ সৃষ্টি করে আবাসিক এলাকায় গবাদিপশু পালনের কোন সুযোগ নেই। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে ফোন দিলে তিনি মুঠোফোনটি রিসিভ করেননি। এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডাঃ মনোজিত কুমার মন্ডল বলেন, এ বিষয়ে কোন লিখিত অভিযোগ পায়নি। এটা স্থানীয় সরকারের কাজ। যদিও আবাসিক এলাকায় গরু পালন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ তবুও কেউ যদি গরু পালন করতে চাই সেক্ষেত্রে জনগণের যেনো কোনো ক্ষতি না হয় সে বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে।
পৌরসভার আবাসিক এলাকায় বে-আইনীভাবে গড়ে ওঠা পরিবেশ বিধ্বংসী গরুর খামারের ব্যাপারে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী।