ঝিনাইদহে গণবিক্ষোভের নামে ছাত্র-জনতার তান্ডব, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া পুলিশের রাবার বুলেট সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ। বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালসহ বিভিন্ন স্থপনা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ করেছে আনোদলনকারীরা। একজন সাংবাদিকসহ আহত ২৫।
আজ রবিবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল প্রায় ২টা পর্যন্ত চলে এই তান্ডব ও গণ মিছিল। আন্দোলনকারীরা পুলিশের প্রতি ইটপাটকেল নিক্ষেপ, থানায় প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে।
এছাড়া আন্দোলনকারীরা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল, বঙ্গবন্দু ও শেখ হাসিনার ছবি সম্বলিত আওয়ামী লীগ নেতাদের পোস্টার, ব্যানার, ছাত্রলীগের অফিস ও ঝিনাইদহ ডাকঘরের গ্লাসসহ বিভিন্ন স্থপনা ভাংচুরের মধ্য দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসুচির প্রথম দিন অতিবাহিত হয়। এ সময় পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেট ও টিয়ারশেলে শিক্ষার্থী-সাংবাদিকসহ ২৫ জন আহত হন। ভাংচুর করা হয় দুইটি পুলিশ বক্সও। আহতদের মধ্যে ২০ জনকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ও কয়েক জনকে ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। আহতরা হলেন, জান্নাতুল ফেরদৌস, সাবিক, সবুজ, আপন, মহিবুল্লাহ, আল-কাবির, মৃদুল, পারভেজ, সিফাত, পিকুল, ফয়সাল সোয়াদ, সজল রাব্বি, সাব্বির, রাজু, হাসিব, মেহেদী, আসিফ, নয়ন, আবিদ, সাগর ও শাওন। ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ নুসরাত জাহান জানান, আহত শিক্ষার্থীদের বয়স ১৬ থেকে ২১ বছরের মধ্যে। এদের মধ্যে ১৩ জনের গায়ে রাবার বুলেট বিদ্ধ হয়েছে। বাকীরা কাঁদানে গ্যাসে আহত হয়েছেন।
এদিকে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাংচুরের ছবি তুলতে গিয়ে সময়ের আলোর সাংবাদিক কাজী আলী আহম্মেদ লিকু, সাংবাদিক মিরাজ, সুজন, ও হাসান বিক্ষোভকারীদের হাতে আহত হন।
এ সময় চুয়াডাঙ্গা বাসষ্ট্যান্ডে অবস্থিত ‘ঝিনেদা টিভি’ নামে একটি অনলাইন ভিত্তিক মিডিয়া অফিসের গাড়ি ভাংচুর করা হয়। দুপুর ১২টা থেকে বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ঝিনাইদহ শহরের বিভিন্ন এলাকা বিক্ষোভকারীদের দখলে ছিল। জেলা সদরের সব পুলিশ এ সময় সদর থানার মধ্যে অবস্থান গ্রহন করে।
আজ রোববার সকাল থেকেই ঝিনাইদহ শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপুর্ন পয়েন্ট দখল করে নেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা। বেল ১১টা থেকে জেলা বিভিন্ন স্থান থেকে ছাত্ররা ঝিনাইদহ শহরে সমবেত হতে থাকেন। এরপর ঝিনাইদহ পাবলিক হেলথ জামে মসজিদ, আরাপপুর ও কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে এক যোগে ছাত্র জনতার বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিল ও শ্লোগানে শ্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে ঝিনাইদহ শহর। প্রথম থেকেই ঝিনাইদহ জেলা পুলিশ সতর্ক অবস্থানে ছিল। দুপুরের দিকে মিছিলটি পায়রা চত্বর থেকে থানার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বিক্ষোভকারীরা জানতে পারে তাদের দুই শিক্ষার্থীকে পুলিশ আটক করেছে। তাদের ছাড়াতে ছাত্র জনতা জোটবদ্ধ হয়ে থানায় প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে।
এ সময় বিক্ষোভকারীরাও থানার মধ্যে অবস্থান নেয়া পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। ঘন্টাব্যাপী চলার পর আবারো জোটবদ্ধ হয়ে তারা পায়রাচত্বর ও পোষ্ট অফিস মোড়ে অবস্থান নিয়ে আওয়ামীলীগ নেতাদের ব্যানার, ফেষ্টুন, দুইটি পুলিশ বক্স, প্রেরণা একাত্তরে নির্মিত বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাংচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। এক পর্যায়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কারী শারমিন সুলতানা, রায়হান ও হুসাইন কর্মসুচি শেষ করার ঘোষনা দেয়।
এ সময় বিক্ষোভকারীরা বাড়ি ফেরার পথে পানি উন্নয়ন বোর্ড, দুর্নীতি দমন কমিশন, শহরের মডার্ন মোড়ে নির্মিত আ’লীগের সভামঞ্চ ও বিদ্যুত উন্নয়ন অফিসের সামনে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ভাংচুর করতে দেখা যায়। এসময় আওয়ামীলীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের কোন নেতাকর্মীকে মাঠে দেখা যায়নি। তবে তারা বিকাল ৪টার পর মাঠে নামেন এবং একটি শান্তি মিছিল করেণ।