প্রচার প্রচারণা শেষ হয়ে গেলেও ভোটার এখন নির্বাচনে পাশ ফেলের চুল চেরা বিশ্লেষন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। শহরের রাজনীতিবিদ, সূধী সমাজ থেকে শুরু করে গ্রামের শ্রমিক কৃষিজীবী মেহনতি মানুষে মধ্যে বইছে এখন নির্বাচনী হাওয়া। আগামী ৭ জানুয়ারী কে পরবেন বিজয়ের মালা। বিএনপি-নির্বাচনে অংশ না নিলেও সামাজিক ভাবে তাদের অনেকেই জড়িয়ে পড়েছেন এই নির্বাচনে। সেকারণে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঝিনাইদহের ৪টি আসনেই স্বতন্ত্র প্রর্থীদের চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা।
ঝিনাইদহ ১এবং ২ আসন নৌকা রয়েছে তীব্র ঝুকিতে। এই দুই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা হলেন ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এবং বিশিষ্ট শিল্পপতি নজরুল ইসলাম দুলাল এবং নাসের শাহরিয়ার জাহেদী মহুল। তারা নৌকার দূর্গে শক্তকরে আঘাত হানছে। এছাড়া ঝিনাইদহ-৩ আসনেও নৌকা নির্ভার নয় এখানেও রয়েছে দুই বার নির্বাচিত এমপি ট্রাক প্রতিকের শফিকুল আজম চঞ্চল।
তবে ঝিনাইদহ-৪ আসনে নৌকা প্রতিকের প্রতিপক্ষ রয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থী ট্রাক প্রতিকের আব্দুর রশিদ খোকন। তিনি প্রয়াত এমপি আব্দুল মান্নানের ভাই হলেও নির্বাচনে অন্য তিন আসনের স্বতন্ত্রের থেকে কিছুটা পিছিয়ে রয়েছেন। তারপরেও নৌকা প্রতিকের প্রার্থী আনোয়ারুল আজিম আনারকে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে হবে।
ঝিনাইদহ-১(শৈলকুপা) আসন: জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নৌকার প্রার্থী আব্দুল হাই এমপিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে স্বতন্ত্র ট্রাক প্রতীকের প্রার্থী বিশ্বাস বিল্ডার্স এর চেয়ারম্যান তরুণ শিল্পপতি নজরুল ইসলাম দুলাল মাঠ কাপিয়ে বেড়াচ্ছে। ইতিমধ্যে আচরণ বিধি লংঘনের দায়ে একাধিক মামলা দিয়ে আব্দুল হাইকে নাজেহাল করে তুলেছে। ২০০১সাল থেকে পর পর ৪বার নির্বাচিত এই জনপ্রতিনিধি এবং সাবেক প্রাণী সম্পদ প্রতিমন্ত্রী এখন চরম শঙ্কার মধ্যে রয়েছে। এর আগে কখনো এমন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়নি তাকে। এই আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ট্রাক প্রতিক নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে অনেকেই মনে করছেন।
এই আসনে অন্য আরও ৪জন প্রার্থী থাকলেও তারা কেউ সম্মান জনক ভোট পাবেন বলে ভোটাররা মনে করছেন না। তবে জাতীয় পার্টির মনিকা আলম এর লাঙ্গল প্রতীক কিছুটা প্রচার প্রচারণায় রয়েছে। এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩লাখ ৬হাজার ৩শত ৩৬জন এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১লাখ ৫৩হাজার ৫শত ৭৭জন এবং মহিলা ভোটার ১লাখ ৫২ হাজার ৭শত ৫৯জন।
ঝিনাইদহ-২ (ঝিনাইদহ সদর এবং হরিণাকুণ্ডু)ঃ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী তাহ্জীব আলম সিদ্দিকীকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে শক্ত অবস্থানে মাঠে রয়েছে স্বতন্ত্র ঈগল প্রতিকের প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ও রেডিয়েন্ট ফার্মাসিটিক্যালসের চেয়ারম্যান নাসের শাহরিয়ার জাহেদী মহুল। তিনি আওয়ামী লীগের একটি বৃহৎ অংশ এবং সাধারণ মানুষ নিয়ে গড়ে তুলেছেন নিজস্ব ভোট ব্যাংক। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে বিপুল ভোটে নির্বাচিত সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকী আওয়ামী লীগের বিরোধের শিকার হচ্ছে। দলের একটি বড় অংশ তার থেকে মুখ সরিয়ে নিয়েছে তবে শেষ সময়ে অনেকেই তার সাথে ফিরে এসেছে বলে তার কর্মী সমর্থকরা দাবি করছেন। ঝিনাইদহ সদর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ সদরের বেশীর ভাগ চেয়ারম্যান এবং হরিণাকুণ্ডু উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ, যুবলীগের আহবায়ক, স্বেচ্ছাসেবক সাধারণ সম্পাদক, কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ অনেক নেতা কর্মী রয়েছে স্বতন্ত্র প্রাথূীর সাথে। তাছাড়া বিএনপি জামায়াতের একটি অংশও রয়েছে এই স্বতন্ত্র প্রার্থীর সাথে ফলে নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে তিনি অনেকটাই আশাবাদী। নির্বাচনের প্রচারণার শুরু থেকেই এই আসনে একাধিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। তাই নির্বাচনের দিন উৎসবের পাশাপাশি ক্ষমতাসীনদের সহিংসতার সঙ্কায় রয়েছে এই আসনের সাধারণ ভোটাররা । আসনটি ১১জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতায় অংশ নিলেও নৌকা এবং ঈগলের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বীতা হবে। তবে তরুন প্রার্থী হিসেবে ডাব প্রতীকের নসির উদ্দীন এবং লাঙ্গলের মাহফুজুর রহমনের ব্যাপক প্রচার প্রচারণা হয়েছে।
এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪লাখ ৭৬হাজার ৩শত জন, এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২লাখ ৩৭ হাজার ৫শ ৩৩জন এবং মহিলা ভোটার ২লাখ ৩৮হাজার ৭শত ৬২জন।
ঝিনাইদহ-৩ (মহেশপুর- কোটচাঁদপুর) আসনঃ আওয়ামী লীগের নতুন প্রার্থীর চমক থাকলেও দলীয় বিভেদের কারনে মনোনীত প্রার্থীকে পড়তে হচ্ছে চ্যালেঞ্জের মুখে। এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকার প্রার্থী ক্লিন ইমেজ খ্যাত প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক সামরিক সচিব মেজর জেনারেল (অবঃ) সালাউদ্দিন মিয়াজী এবং তার প্রতিন্দন্দ্বীতায় রয়েছে দলের আর এক নেতা জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য দুইবার নির্বাচিত সাংসদ শফিকুল আজম চঞ্চল। তিনি দীর্ঘদিন দলের তৃনমূলের রাজনীতি করে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের নেতা বানিয়েছেন বিভিন্ন স্কুল কলেজের সভাপতি বানিয়ে অর্থনৈতিক এবং সামাজিক ভাবে মূল্যায়ন করেছে এখন তারা সবাই নৌকার বিরুদ্ধে যেয়ে চঞ্চলের পক্ষে কাজ করছেন। তবে গত কয়েকদিন আগে এই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতিকের প্রার্থী আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক এমপি নবী নেওয়াজ শেখ হাসিনার নৌকা মার্কা এবং তার সমর্থীত সালাহ উদ্দীন মিয়াজীকে সমর্থন জানিয়ে তার প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেছেন। এখন এই আসনে তিন জন প্রার্থী রয়েছে তবে নৌকা প্রতিকের সালাহ উদ্দীন মিয়াজির সাথে ট্রাক প্রতিকের প্রদিদ্বন্দ্বীতা হবে চরমে ভোট গণনার আগ পর্যন্ত বলা মুশকিল শেষ জয়ের হাসি কে আসবেন। এই আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী লাঙ্গল প্রতীকের সাংবাদিক আব্দুর রহমানের বেশ কিছু ভোট রয়েছে।
এই আসনে মোট ভোটারের সংখ্যা ৪লাখ ৩হাজার ২শত ২৪জন এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২লাখ ৩হাজার ৯শত ৪৪জন এবং মহিলা ভোটার ১লাখ ৯৯ হাজার ২শত ৭৭জন।
ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ এবং ঝিনাইদহ সদরের ৪টি ইউনিয়ন) আসনঃ প্রতিন্দন্দ্বীতায় রয়েছে ৫জন প্রার্থী। এদের মধ্যে মুল প্রতিন্দন্দ্বীতা হবে আওয়ামী লীগ মনোনীত বর্তমান এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার এর নৌকা প্রতিকের সাথে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রশিদ খোকনের ট্রাক প্রতিকের। এই আসনে অন্য প্রার্থীদের প্রচার প্রচারণা চোখে পড়ার মতো নয়। তবে আগামী ৭ তারিখে দেখা যাবে কে জয়ের হাসি হাসেন।
এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩লাখ ১৫ হাজার ৬শত ২০জন এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১লাখ ৫৯হাজার ৬শ ১৬জন এবং মহিলা ভোটার ১লাখ ৫৬ হাজার।
উল্লেখ ঝিনাইদহের ৪টি আসনে নির্বাচনে প্রতিন্দ্বন্দীতায় রয়েছে ২৬ জন প্রার্থী। জেলায় মোট ভোটারের সংখ্যা ১৫লাখ ১হাজার ৪শত ৮০জন এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৭লাখ ৫৪হাজার ৬শত ৭০ জন এবং মহিলা ভোটার ৭লাখ ৪৬হাজার ৭শত ৯৮জন। ৫৮৫টি ভোট কেন্দ্রের ৩৪২১টি বুথের মাধ্যমে ভোটারদের ভোট গ্রহন করা হবে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মোতাবেক আগামী ৭জানুয়ারী রবিবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীন ভাবে এই ভোট গ্রহন চলবে এবং তা গণনা শেষে ভোট কেন্দ্রেই ফলাফল ঘোষণা দিয়ে আসতে হবে।