ঝিনাইদহে প্রতিনিয়ত ঘটছে চুরি-ডাকাতির ঘটনা। প্রায়ই শোনা যাচ্ছে বাসাবাড়ি, অফিস কিংবা দোকানে চুরি করে মালামাল নিয়ে যাচ্ছে চোরচক্র। এছাড়াও সন্ধ্যার পর শহর ও গ্রামের বিভিন্ন সড়কে ছিনতাইয়ের মত ঘটনা ঘটেই চলেছে। সর্বশেষ গত রবিবার রাতে শহরের ক্যাসেল ব্রীজ এলাকার ৫টি দোকানের সাটার কেটে নগদ টাকা ও মালামাল চুরি করে নিয়ে যায় চোরচক্র।
একই রাতে সদর উপজেলার হাটগোপালপুর বাজারের ২৬টি দোকানে চুরি হয়। এর আগে গেল শুক্রবার কালীগঞ্জ উপজেলার তেতুলবাড়িয়া গ্রামের আবু সায়েম ও সাতগাছি গ্রামের খায়রুজ্জামানের ৬টি গরু চুরি করে নিয়ে যায় চোরচক্র।
এসব ঘটনায় থানা পুলিশ তেমন কিছুই জানেন না। এদিকে, পুলিশের হিসেবে গত দেড়মাসে ঝিনাইদহের ৬ থানায় মাত্র ২০ টি চুরির মামলা হয়েছে। তবে সূত্রের দাবি, সব চুরি-ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা থানা-পুলিশ পর্যন্ত পৌঁছায় না। ঝামেলা বাড়ার আশংকা থেকে অনেকে পুলিশকে জানাতে চায় না। তবে ফেসবুক কিংবা পরিচিতজনের কাছে চুরি-ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের কথা জানান। পুলিশকে না জানানোয় থানায় এর সুনির্দিষ্ট রেকর্ড থাকে না। এ কারণে পুলিশের খাতায় যে হিসেব রয়েছে এর চেয়ে কয়েক গুণ বেশি চুরি-ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে।
এমন পরিস্থিতিতে উদ্বেগ উৎকণ্ঠার মধে রয়েছে জেলার ৬ উপজেলার ব্যবসায়ি ও বাসাবাড়ির মালিকেরা। জানা গেছে, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের দিকে শৈলকুপার ফুলহরি গ্রামের বিপ্লব সাহা ও গৌতম সাহার বাড়ি থেকে অস্ত্রের মুখে নগদ টাকা ও বিপুল পরিমাণ সোনা নিয়ে যায় ডাকাতদল। এর আগে কোটচাঁদপুরের ঘাঘা গ্রামে বোম বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সুবল প্রামাণিকের বাড়িতে ডাকাতি করা হয়।
এর কয়েকদিন আগে শৈলকুপার শেখপাড়া বাজার থেকে বিকাশ জোর্য়াদ্দারের মুদি দোকানের সাটার কেটে নগদ টাকা ও মালামাল চুরি করে নিয়ে যায় চোরচক্র। একই দিন নাগিরাট গ্রাম থেকে রবিউল ইসলাম নামের এক ভ্যানচালকের বাড়ি থেকে ভ্যান চুরি করে নিয়ে যায়। গত ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে মহেশপুরের একটি সড়কে গাছ ফেলে বাস ডাকাতির ঘটনাও ঘটেছে। ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটে চলেছে প্রতিনিয়ত। গত ২ অক্টোবর শৈলকুপার কৌপাড়া এলাকা থেকে এক ব্যবসায়িকে কুপিয়ে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা ও ৩টি মোবাইল ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। এর আগে রয়েড়া বাজারের গার্মেন্টস ব্যবসায়ি আক্কাস আলীর মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নিয়ে যায়। সদরের গোয়ালপাড়া এলাকা থেকে আজির আলীর ইজিবাইক ছিনিয়ে নেয় দুর্র্বৃত্তরা। এ ভাবে সারা জেলায় চোর-ডাকাত ও ছিনতাইকারীর উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে মানুষ। সংসারে অভাব অনটন ও আর্থিক মন্দার মধ্যে জেলাব্যাপী এই চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে মানুষ। পুলিশ মাঝে মাঝে চুরি ডাকাতের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করলেও পরিস্থিতি স্বভাবিক হওয়ার লক্ষণ নেই।
জেলা সচেতন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত হোসেন বলনে, গত কয়েক মাসে জেলাজুড়ে চুরি-ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্ধেগ ছড়াচ্ছে। দেশের চলমান পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নানা কাজে ব্যস্ত থাকলেও এদিকেও তাদের নজর দেওয়া জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ ব্যাপারে ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান জাকারিয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, চোর-ডাকাতের উপদ্রব রুখতে পুলিশি অভিযান জোরদার করা হয়েছে। চুরির ঘটনায় ইতিমধ্যে কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে।