ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সদস্য দৈনিক জবাবদিহি প্রত্রিকার জেলা প্রতিনিধি মোঃ সেলিম মিয়ার মৃত্যুর কারণ নিয়ে সন্দেহের দানা বেধেছে। এই মৃত্যুর সাথে জড়িত সন্দেহে দুই মহিলাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। প্রথমে সড়ক দূর্ঘটনায় সেলিমের মৃত্যু হয়েছে জানা গেলেও শরীরের কোথাও আঘাতের চিহ্ন না থাকায় তাকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা অথবা অন্য কোনভাবে মৃত্যু হয়েছে বলে পুলিশ এবং পরিবারের কাছে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে শহরের হামদহ এলাকায় রাস্তা পার হওয়ার সময় দ্রুতগামী একটি মটরসাইকেল তাকে ধাক্কা দিলে তিনি মাথায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হন। পরে তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে দিবাগত রাত ২ টার দিকে মৃত্যু ঘটে।
এম সেলিম মিয়া (৫৩) দৈনিক জবাবদিহি পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি ও ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হলিধানী গ্রামের মৃত আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে।
নিহত’র জামাই ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, বগুড়া থেকে ফিরে এসে রাত সাড়ে ৯ টার দিকে ব্যক্তিগত কাজে আলফালাহ হাসপাতাল এলাকায় যান তার শশুর। কাজ শেষে করে রাস্তা পার হওয়ার সময় একটি দ্রুতগামী মোটর সাইকেল তাকে ধাক্কা দেয়। এতে তিনি রাস্তায় পড়ে মাথায় আঘাত পান। গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল ও পরে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক রাত ২ টার দিকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত’র স্ত্রী মমতা বেগম জানান, তার স্বামীর হার্টের রোগ ছিল। চিকিৎসকরা তাকে জানিয়েছেন মাথার আঘাতে রক্তক্ষরণ ও কার্ডিয়াক সমস্যায় তার মৃত্যু হয়েছে। সড়ক দূঘটনায় আঘাতের যে ধরনের চিহ্ন থাকে তার শরীরে এমন কোন ক্ষত চিহ্ন পাওয়া যায়নি। যে দুই মহিলা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে তাদের স্বীকারোক্তি মতে সন্দেহ তৈরী হয়েছে। ওই দুই মহিলাকে ঝিনাইদহ সদর থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করেছেন। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন মেরিনা (৩০) মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলার সানিয়ার পাড়া গ্রামের মন্টু মিয়ার মেয়ে স্বামী পরিত্যাক্তা, আর একজন হলেন রিপা রায়, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার রাজনগর গ্রামের রবি কর্মকারের মেয়ে (স্বামী পরিত্যাক্তা)।
প্রাথমিক জিঞ্জাসাবাদে মেরিনা জানান, সেলিম এবং তারা হামদহ এলকায় একই বাসার দুইটি ফ্লাটে থাকেন গতকাল মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে সেলিম ভাই একটি মেয়ের নম্বর দিয়ে শহরের পায়রা চত্ত্বরে বসতে বলেন, পরে সেলিম ভাই মেয়েটিকে বাসায় নিয়ে আসেন। এর ১ঘন্টা পরে সেলিম ভায়ের ওই আত্মিয়া তাকে ফোনদিয়ে জানান সেলিম সড়ক দুর্ঘটনায় মর্মান্তিক আঘাত প্রাপ্ত হয়েছে। পরে আলফালাহ হাসপাতালের সামনে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করি এবং হাসপাতাল থেকে তাকে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। মেরিনা আরও জানান, সেলিম ভাই মাঝে মধ্যে তাদের সাহায্য করতেন, ওই মহিলা কে তা তিনি জানেন না। তার কথা বার্তার মধ্যে অসংলগ্নতা থাকায় পুলিশ তাদের সন্দেহ করে গ্রেপ্তার করে।
ঝিনাইদহ সদর সার্কেলের এএসপি মীর আবিদুর রহমান সেলিম মিয়ার বাড়িতে জান এবং লাশের সুরত হাল দেখে জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় সেলিম মিয়ার মৃত্যু হয়েছে এমন সংবাদ শুনলেও এখন দেখে মনে হচ্ছে এরমধ্যে অনেক রহস্য লুকিয়ে আছে। তাকে হত্যা করা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পোষ্টমর্টামের রিপোর্ট এবং পরিবারের অভিযোগ পেলে আমরা হত্যা রহস্য উদঘাটনের কাজ শুরু করবো। হত্যার সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে। হত্যার সাথে জড়িত সন্দেহে দুই মহিলাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সাংবাদিক সেলিম মিয়ার মৃত্যুর খবরে ঝিনাইদহ সাংবাদিকদের মাঝে গভীর শোকের ছায়া নেমে আসে। বুধবার সকালে সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন তার গ্রামের বাড়িতে যান শোক সন্তপ্ত পরিবারকে শান্তনা দিতে। ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সভাপতি এম রায়হান ও সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান টিপু সাংবাদিক আবু সেলিম মিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তারা এক বিবৃতিতে তার শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন এবং হত্যার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।