ঝিনাইদহ ভূমি জরিপ ট্রাইব্যুনালে আপস ও বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির (এডিআর) মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তির হার ২০১৯ সালে বেড়েছে বহুগুণে।
২০১৯ সালে মামলা নিষ্পত্তির হার ৩২৪ শতাংশ। যা আগের বছরের তুলনায় ১১৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ বেশি। ২০১৯ সালের ১১ মাসে মামলা দায়ের হয়েছে তিনশত পঁচানব্বই (৩৯৫) এবং নিষ্পত্তি হয়েছে ১ হাজার ১৬৭টি। মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে যা অভাবনীয় সাফল্য।
গত বছরের শেষে ওই ভূমি জরিপ ট্রাইব্যুনালের মামলা নিষ্পত্তির পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিচারক মো. তাজুল ইসলাম দায়িত্ব নেয়ার পর মাত্র ২০১৯ সালের ১১ মাসে প্রায় ১২ শতাধিক মামলা নিষ্পত্তি করেন।
যার মধ্যে ৬৮০টি মামলা ছিল পুরনো। যেগুলো ২০১৪ সাল থেকে ২০১৬ সালে দায়ের হওয়া। এগুলোকে তিনি অগ্রাধিকার দিয়ে নিষ্পত্তি করেন।
এ সময় তাকে মিস মামলাসহ প্রায় দেড় হাজার সাক্ষীর সাক্ষ্য নিতে হয়। বিকল্পবিরোধ ও আপসের মাধ্যমে ১১ মাসে শতাধিক ভূমি জরিপ মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে। যার মধ্যে ভূমি জরিপ মামলার সঙ্গে অনেকের আরো দেওয়ানি মোকদ্দমা রয়েছে।
অনেক ল্যান্ড সার্ভে মামলা তিনি দায়েরের মাত্র ছয়মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করেছেন। তাজুল ইসলাম ইতোপূর্বে খুলনা, ঢাকা, মেহেরপুর ও ঠাকুরগাঁওয়ে বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
সারাদেশের ৪২টি জেলার ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মোট তিন লাখ তিন হাজার ৩৫টি মামলা। এসব ট্রাইব্যুনালের মধ্যে ঝিনাইদহে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের মাস ওয়ারি নিষ্পত্তির হিসাব গড়ে প্রায় শতাধিক।
যেমন- জানুয়ারি মাসে ১১৫টি, ফেব্রুয়ারি মাসে ৭৩টি, মার্চ মাসে ৮৬টি, এপ্রিলে ৮৭টি, মে মাসে ১১৫টি, জুন মাসে ৯৬টি, জুলাই মাসে ১২৫টি, আগস্ট মাসে ৮৪টি, সেপ্টেম্বর মাসে ১১৫টি, অক্টোবর মাসে ১৪৩টি এবং নভেম্বর মাসে ১১৬টি এবং ডিসেম্বর মাসে ১ দিনে চারটি ও অন্যান্য মামলাসহ ১২ শতাধিক টিএলএসটি মামলা নিষ্পত্তি করেছেন বিচারক তাজুল ইসলাম।
তাছাড়া সারা দেশের ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল গুলোর চেয়ে ঝিনাইদহ ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে আপোষের মাধ্যমে নিষ্পত্তির হার তুলনামূলক বেশি। বর্তমানে ১৯৩৮ টিএলএসটি মামলা আছে।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নগরবাথান গ্রামের একটি ভূমি জরিপ মামলা নং ৯৫৮/২০১৬ মামলার বাদী মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের কেসটি বিচারক নিজে উদ্যোগ নিয়ে বিবাদীদের সঙ্গে আপোষ করে দেন। আমি এই আদালতে ২০১৬ সালে মামলার জন্য আসি এবং বেশ কয়েকটি তারিখ চলে যায়।
এই বিচারক এসে চার-পাঁচটি তারিখের মধ্যেই আদালত আমাদের মামলাটি আপস করে দেন। আমি আপসের মাধ্যমে আমার দাবিকৃত জমি বুঝে পেয়েছি।’এজন্য তিনি বিচারক, আইনজীবীসহ সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
ঝিনাইদহ ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের এজিপি বেগম দীল আফরোজ বলেন, ভূমি সংক্রান্ত বিবাদ যত নিষ্পত্তি হবে তত সমাজে শান্তি ও উন্নয়ন প্রতিষ্ঠিত হবে। সারাদেশের ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের চেয়ে ঝিনাইদহে মামলা নিষ্পত্তির হার তুলনামূলকভাবে বেশি।
ঝিনাইদহ জেলার সরকারি কৌসুলি জিপি বিকাশ কুমার ঘোষ বলেন বলেন, ‘সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হলে উন্নয়ন টেকসই হয়। সারাদেশের চেয়ে ঝিনাইদহে মামলা নিষ্পত্তির হার অত্যন্ত সন্তোষজনক।’