করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে দেশব্যাপী শুরু হয়েছে গণ টিকাদান কর্মসূচি। ভিআইপি, সম্মুখসারির কর্মীদের পাশাপাশি টিকা নিচ্ছেন সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। বাড়ছে নিবন্ধনকারীর সংখ্যা। ৪০ বছরের বেশি বয়সী ও টিকাগ্রহীতা ব্যক্তির পরিবারের টিকাদান নিশ্চিত করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশব্যাপী টিকাদান শুরুর পর টিকা নিয়ে কাটতে শুরু করেছে শঙ্কা। এত দিন যাদের মধ্যে নানা দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল তারাও এখন নিবন্ধন করছেন। টিকা নেওয়ার জন্য অপেক্ষায় আছেন। মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টিকা কর্মসূচি সম্প্রসারণের লক্ষ্যে নিবন্ধনের বয়সসীমা ৫৫ থেকে কমিয়ে ৪০ বছর করার নির্দেশনা দিয়েছেন। নিবন্ধনকৃতরা যাতে টিকাদান কেন্দ্রে নিজেদের পরিবার-পরিজন নিয়ে আসতে পারেন সে রকম ব্যবস্থা চালু করার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
করোনাভাইরাসের গণ টিকাদানের দ্বিতীয় দিনে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোয় টিকাগ্রহীতাদের উপস্থিতি বেড়েছে। অনেক প্রবীণ স্বজনদের সঙ্গে এসে টিকা নিয়ে বলেছেন, প্রাণঘাতী এ ভাইরাস থেকে এখন নিরাপদ বোধ করছেন তারা। গতকাল সকাল ৮টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত টিকা দেওয়া হয়। করোনাভাইরাস মোকাবিলার সম্মুখসারির কর্মীদের সঙ্গে বয়সে প্রবীণ, মুক্তিযোদ্ধাসহ কয়েকটি শ্রেণির নাগরিকরা প্রথম দিকে টিকা পাচ্ছেন। রাজধানীর হাসপাতাল ও টিকাদান কেন্দ্র ঘুরে উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়েই মানুষকে টিকা নিতে দেখা গেছে। গতকাল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) টিকা নিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা, আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক।
সিইসি দেশের সব ভোটারকে নিজ নিজ এলাকা থেকে টিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী রফিকুল আলম ও কণ্ঠশিল্পী আবিদা সুলতানা বিএসএমএমইউ কেন্দ্রে টিকা নিয়েছেন। টিকা নেওয়ার পর রফিকুল আলম বলেন, ‘সরকার অত্যন্ত চমৎকার ব্যবস্থাপনায় টিকাদান কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আমি ছোটবেলা থেকে অনেক টিকা নিয়েছি। তখন তো টিকা নেওয়া অনেক কষ্টকর ছিল; ঘা হয়ে যেত, ইনফেকশন হতো। আজকে ভ্যাকসিন নেওয়ার পর কোনো প্রতিক্রিয়া অনুভূত হলো না। মাত্র ৩-৮ সেকেন্ড লাগে। ভয় পাওয়ার কোনো কারণই দেখছি না।’ গতকাল সংসদ ভবন টিকা কেন্দ্রে টিকা নিয়েছেন অভিনেত্রী, সংসদ সদস্য সুবর্ণা মুস্তাফা।
স্বাস্থ্য অধিদফতরসূত্রে জানা যায়, গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন ৫ লাখ ১২ হাজার ৫ জন। গণ টিকাদান কর্মসূচির প্রথম দিন টিকা নিয়েছেন ৩১ হাজার ১৬০ জন। গতকাল দেশব্যাপী টিকা নিয়েছেন ৪৬ হাজার ৫০৯ জন। ঢাকার ৪৪ কেন্দ্রে টিকা নিয়েছেন ৭ হাজার ১৭৮ জন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে টিকা নিয়েছেন ৮৯৮, সচিবালয় ক্লিনিকে নিয়েছেন ২৫৭, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে নিয়েছেন ২৩৯, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়েছেন ৩৬৯ আর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে টিকা নিয়েছেন ৫০০ জন।
সম্মুখসারির কর্মী হিসেবে নিবন্ধন করে গতকাল শেখ রাসেল গ্যাসট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে টিকা নিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা এ এস এম মামুন। তিনি বলেন, ‘৭ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১টার দিকে টিকার জন্য অনলাইনে নিবন্ধন করেছিলাম। বিকালে মোবাইলে খুদে বার্তায় টিকা কেন্দ্রের নাম ও তারিখ জানানো হয়। আজ সকালে এসে টিকা নিলাম। এখন পর্যন্ত সুস্থ আছি। পরিচ্ছন্ন পরিবেশে যত্নসহকারে টিকা দিয়েছেন দায়িত্বরতরা। টিকা নিয়ে অকারণ ভয়ের কিছু নেই। আমি সম্পূর্ণ সুস্থ আছি এবং কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়নি।’
গণ টিকাদান কর্মসূচির প্রথম দিনেই টিকা নিয়েছেন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেন। তিনি বলেন, ‘টিকা নেওয়ার ২৪ ঘণ্টা পার হয়েছে। আমি টিকা নিয়ে ফিরে অফিস করেছি, বাসায় গিয়ে খেয়েছি। সকালে হাঁটাহাঁটি করেছি, অফিস করেছি অন্য রকম কিছু মনে হয়নি। বরং টিকা দিয়ে সাহস বেড়েছে। এ টিকায় মানুষের ক্ষতির কিছু নেই।
তাই টিকা নিয়ে নিজে সুরক্ষিত হোন, পরিবারকে সুস্থ রাখুন, দেশকে করোনামুক্ত করুন।’ ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনাভাইরাসের টিকা বাংলাদেশে দেওয়া হচ্ছে। সবাইকে এ টিকার দুটি ডোজ নিতে হবে। প্রথম ডোজ নেওয়ার চার সপ্তাহ পর ডোজ নিতে হবে। এ টিকার ৩ কোটি ডোজ পেতে সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে বাংলাদেশের, যার মধ্যে ৫০ লাখ ডোজ হাতে পাওয়ার পর জেলায় জেলায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছে আগেই। এ ছাড়া ভারত সরকারের উপহার হিসেবে পাওয়া গেছে আরও ২০ লাখ ডোজ টিকা।